৪ জুন ২০১৭, রবিবার, ১০:০৯

অপ্রচলিত পণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার

প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যে আরোপ

১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশ কিছু পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এক হাজার ৪৩টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হলেও অল্প কিছু বাদে বেশিরভাগই সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের মধ্যে নেই। ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় রয়েছে শূকর, গাধা, খচ্চরের মাংস। এ ধরনের আরো অনেক পণ্য রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের প্রয়োজন হয় না। অথচ এসব পণ্য ও সেবা যুক্ত করে লম্বা করা হয়েছে ‘ভ্যাট অব্যাহতির তালিকা।


ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত এ বাজেট নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রস্তাবিত এ বাজেট ও বিভিন্ন খাতে শুল্ক-কর ও ভ্যাট বাড়ানোয় সমালোচনার ঝড় বইছে। তারা বলছেন, মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতি কিংবা হ্রাসকৃত ভ্যাটের আওতায় না রেখে অপ্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রচলিত শত শত পণ্যকে অব্যাহতির তালিকায় রাখা এক ধরনের ‘চালাকি’। বাস্তবে ভ্যাট অব্যাহতি পাওয়া এসব পণ্য ও সেবায় সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যের সংখ্যা অল্প। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোদমে ভ্যাট বাস্তবায়ন শুরু হলে ভ্যাটের ভয়াবহ রূপ বোঝা যাবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে অপ্রয়োজনীয় পণ্যে অব্যাহতি দেওয়ায় কার্যত কোনো সুবিধা হবে না।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি জসীম উদ্দিন মনে করেন, ভ্যাট অব্যাহতির তালিকার মাধ্যমে মূলত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, তালিকায় থাকা বেশকিছু পণ্য আগেই ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় ছিল। নতুন করে আলাদা এইচ এস কোড (পণ্য পরিচিতি নম্বর) সৃষ্টি করে তালিকা লম্বা করা হয়েছে। তালিকায় থাকা বেশিরভাগ পণ্যই আমাদের দেশে আমদানি কিংবা ব্যবহার হয় না। তিনি বলেন, শূকরের মাংস, গাধা, খচ্চরকে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে কি সাধারণ মানুষের উপকার হবে?

অথচ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে বিশাল সংখ্যক পণ্য ও সেবা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের তালিকায় আসছে। গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ১৯ ধরনের প্লাস্টিকের পণ্য ভ্যাট অব্যাহতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব পণ্য সব শ্রেণির মানুষের বাসা-বাড়িতে প্রয়োজন হয়। রাস্তার পাশের একটি সাধারণ মানের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য গুণতে হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এতদিন নন এসি রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হতো। বিদ্যুত্ বিলসহ ১৫ ধরনের পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট (সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্যে) দেওয়ার সুযোগ বাতিল হয়ে ১৫ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে। রডসহ ৭০ ধরনের পণ্য ও সেবায় ট্যারিফ মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা আর থাকছে না। সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যবহার্য হ্যান্ডলুম পণ্য- বিশেষত লুুঙ্গি, গামছা জাতীয় পণ্য, স্বল্প মূল্যের জুতা, হাওয়াই চপ্পল ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় নেই। এছাড়া ঘরে বানানো রুটি-বিস্কুট ও কেক জাতীয় পণ্যেও ভ্যাট হতে পারে ১৫ শতাংশ। এসব পণ্যে বাড়তি ভ্যাট দিতে হলে তার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর। অন্যদিকে ব্যাংকে আমানতের ওপর আবগারি শুল্কের নামে বাড়তি কর আরোপ হওয়ায় লাখ টাকার উপর ব্যাংকে জমা হলেই বাড়তি টাকা গুনতে হবে। বিমান ভাড়ায় আবগারি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। ফলে বিদেশ গমনেচ্ছু লাখ লাখ শ্রমিকের উপর এর চাপ পড়বে। অন্যদিকে এক হাজার ৬৬৬টি পণ্য ও সেবার আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্সের জাল বিছানো হয়েছে।

বাজেটে অর্থ আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় রয়েছে, আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে শূকর, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর, ঘোটকের ভোজ্য নাড়িভুঁড়ি। রয়েছে বিভিন্ন আমদানি করা জীবন্ত পাখি, শূকরের মেদবিহীন মাংস, আড়াই কেজি পর্যন্ত কাঁটা ছাড়ানো মাছ ও মাছের অন্যান্য মাংস, ভোগের যোগ্য মাছের গুঁড়া, আমদানিকৃত পাখির ডিম। বিভিন্ন শাক-সবজি, মসলা ও কৃষির উপকরণ ও ওষুধের মাধ্যমে তালিকার একটি বড় অংশ পূরণ করা হয়েছে। লেকোস্ট শিম, সামুদ্রিক আগাছা এবং অন্যান্য সমুদ্র শৈবাল, সূর্যমুখী ফুলের বীজসহ অনেক পণ্য রয়েছে অব্যাহতির তালিকায়। কিছু ক্ষেত্রে এক একটি সবজিকে এক একটি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

তবে তালিকায় রয়েছে বেশকিছু ওষুধ, মসলা, কৃষি কাজে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি। তালিকায় আমদানি করা বাঁধা কপি, ফুল কপি, গাজর, শালগম, শসা, ক্ষীরা, টমেটোসহ অন্যান্য শাক-সবজিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এসব পণ্যে কখনোই ভ্যাট ছিল না। অর্থমন্ত্রীর তালিকায় থাকা এক হাজার ৪৩টি পণ্য ও সেবার অর্ধেক পণ্যে আগে থেকেই ভ্যাট ছিল। তালিকায় রয়েছে অনেক স্বল্প পরিচিত পণ্য, যা সাধারণ মানুষের ভোগ্য পণ্য নয়।

 

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2017/06/04/200083.html