২৫ মে ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১৭

ঘূর্ণিঝড় আইলার ৮ বছর

এখনো ক্ষত শুকায়নি উপকূলীয় অঞ্চলে

আজ ২৫শে মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ৮ বছর পূর্তি। ২০০৯ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দক্ষিণ জনপদের উপকূলীয় অঞ্চল। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা।
আইলার ৮ বছর পার হচ্ছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কয়রার অনেক পরিবার এখনও সরকারি তহবিলের সহায়তা না পেয়ে বাঁধের ওপর বসবাস করছে। অভিশপ্ত এই দিনটির কথা মনে হলে আজও ভয়ে শিউরে ওঠেন উপকূলবাসী। দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছে এ অঞ্চলের অসহায় মানুষ। আইলার কারণে কয়রা উপজেলার অনেক এলাকায় দীর্ঘ দিন কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারেনি। তবে দুই বছর হলো কৃষকরা তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পেরেছেন। তবে এ জনপদের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অভাব অনটন বেড়েই চলেছে। শুধু ঘর-বাড়ি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা খাদ্য, সুপেয় পানি আর চিকিৎসা সেবাসহ নানা সমস্যায় এখনও জর্জরিত। পাউবোর আমাদীর উপ-বিভাগীয় শাখার কর্মকর্তা মো. খায়রুল আলম বলেন, সম্প্রতি পাউবোর ৪টি পয়েন্টের বড়িবাঁধ সংস্কারের টেন্ডার হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটি দেয়ার কাজ চলছে। তাছাড়া ভাঙনকবলিত বাঁধে ডাম্পিং ব্লক ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া, ভাঙনের কবলে থাকা বাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর মানুষ এখনও সেই ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে কষ্টের কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বদিউজ্জামান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলবাসীর আশ্রয়ের জন্য সরকারের তত্ত্বাবধানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলাবাসীর জন্য ২ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ জরুরি। তিনি আরো বলেন পর্যায়ক্রমে আইলা ক্ষতিগ্রস্ত কয়রার উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এলাকার মানুষের পুনর্বাসনে সরকারিভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। কয়রাকে আইলার পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি। কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে পরিকল্পনামাফিক বেড়িবাঁধ নিমার্ণের জন্য তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন। কপোতাক্ষ কলেজের অধ্যাপক আ ব ম আঃ মালেক বলেন, ৮ বছর কেটে গেলেও এখনও কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা সদর ও মহারাজপুর এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের অনেক মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন। আইলায় তাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা সব বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। নিজের কোনো জমি না থাকায় তারা সরকারের গৃহনির্মাণ তহবিলের সহায়তা পাননি। এমনকি আজ পর্যন্ত তাদের কোনো খাস জমিও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আইলার পর জরুরি ভিত্তিতে যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো জোয়ারের চাপ বা ভারি বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতেও আবার কাজ করা প্রয়োজন।
কয়রার পরিবেশবিদ সানা মিজানুর রহমান বলেন, পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আর দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে দক্ষিণ উপকূলীয় বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবন কোলঘেষা কয়রা। কয়রা উপেজলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের কয়রার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। যে জন্য দুর্যোগে হাইরিক্স জোন হিসেবে কয়রা এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, কয়রাবাসী প্রাকৃৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় হয়ে পড়ে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=66788&cat=6/