২৪ মে ২০১৭, বুধবার, ৮:১৭

সাতক্ষীরার ২০ লাখ মানুষের সীমাহীন বঞ্চনা

নাগরিক অধীকার থেকে বঞ্চিত সাতক্ষীরার ২০ লক্ষ মানুষ। প্রতন্ত এ জেলাতে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। স্বাধীনার পর থেকে জেলাটি নানা কারণে অধীকার বঞ্চিত। সুন্দরবন,চিংড়ি শিল্প, ভোমরা স্থলবন্দর, হিমসাগর আম সহ অনেক কারণে জেলাটি দেশের রাজস্ব খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। অথচ অব্যাহত লোডশেডিং, ও একটি বিশেষ অভিজানের কারণে চরম হুমকীর মুখে পড়েছে জেলাটি। স্বয়ং প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছে জেলা নাগরিক কমিটি। 

সূত্র মতে গত ১৫ মে ২০১৭ ইং তারিখ থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সাতক্ষীরা শহরব্যাপী মোটর ও ইঞ্জিনভ্যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন এই শহরে চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। স্কুল কলেজে যেতে পারছে না শিশুসহ বহু শিক্ষার্থী। শহরে চলাচলকারী মানুষের যানবাহনের ব্যয় দ্বিগুণ থেকে তিনগুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও অধিকাংশ সময় সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। হাজার হাজার মোটর ভ্যান চালকের অধিকাংশই বেকার হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ চুরি করে মোটরভ্যান চালালেও তাদেরকে সীমাহীন চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় জ্যৈষ্ঠ মাসের এই তীব্র তাপদহ এবং বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং এর মধ্যে সাতক্ষীরা শহরব্যাপী এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব থেকে ইজিবাইক, মাহিন্দ্র বা অন্যকোন ছোট যানবাহন এই শহরে চলতে দেওয়া হয়না। ফলে মটরভ্যানই এই শহরে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন। যদিও বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় এসব যানবাহন এখন মানুষের একস্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত চলাচলের বাহনে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ভাবে কোন প্রতিকার না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে নাগরিক কমিঠি।
স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যেশ্য করে বলা হয়েছে আপনি নিজেও কিছুদিন পূর্বে গোপালগঞ্জে যেয়ে এই ব্যাটারি চালিত ভ্যান চড়েছেন, যা দেশের সকল সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন কোন রকম বিকল্প ব্যবস্থা না করে গরীব মানুষের রুটি রুজির পথ বন্ধ করে লাখ লাখ মানুষের সীমাহীন কষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুণœ হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশের মত সাতক্ষীরা জেলাতেও কিছুটা উন্নয়ন হলেও সে উন্নয়ন চোখে দেখতে একস্থান থেকে অপর স্থানে যাতায়াতের অধিকাংশ রাস্তাই আস্ত নেই। যানবাহনে চলাচলে এক সীমাহীন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এই জেলার মানুষের। এত দুরাবস্থা বাংলাদেশের আর কোন জেলায় নেই। এমতাবস্থায় সাতক্ষীরা শহরে ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বাইপাস শুরু করা হয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিক সামনে এবং অপর প্রান্তে শেষ হয়েছে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীর গেটের মুখে। সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর জাতীয় মহা সড়কের শেষ প্রান্ত আলিপুর চেকপোস্ট থেকে এই বাইপাস নির্মাণের কথা সকলে জানলেও এখন দেখা যাচ্ছে মেডিকেল কলেজের গেট পেরিয়ে এই বাইপাস নির্মিত হচ্ছে। যেটার নির্মাণ কাজ শেষ হলে উপকারের পরিবর্তে নতুন সমস্যা তৈরী করবে। শহরের যানজট নিরসনে কোন কাজে আসবে না এই বাইপাস সড়ক। সেকারণে আমরা বর্তমান নির্মাণাধীন বাইাপাসের নকসা পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশে প্রতিবছরই বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। দীর্ঘদিন সাতক্ষীরাবাসী লোডশেডিং এর তেমন কোন কষ্ট ভোগ করেনি। কিন্তু বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে আবারো সাতক্ষীরা জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহরে দিনরাতে ১২/১৪ ঘন্টা এবং গ্রামে আরো অনেক বেশী সময় বিদ্যুৎ পাচ্ছে না মানুষ। যদিও পাশ্ববর্তী খুলনা-যশোর-বাগেরহাট জেলায় সমস্যা থাকলেও সাতক্ষীরার মত এত প্রকট নয়।
জেলা নাগরিক কমিটির স্মারকলিপিতে আগামী বাজেটকে সামনে রেখে সাতক্ষীরাবাসীর ১০দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে শিক্ষার পরিবেশ বিঘœকারী বাইপাস সড়কের সংযোগ ও পশ্চিম পাশে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বাইপাস সড়ক আলিপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত নিয়ে যেয়ে ভোমরাস্থল বন্দর জাতীয় মহা সড়কের সাথে যুক্ত করতে হবে। নির্মাণাধীন ট্রাক টার্মিনাল মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে অন্যত্রে সরাতে হবে। নাভারন হতে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। সাতক্ষীরা পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। ভোমরা স্থল বন্দরকে পূর্ণাঙ্গকরণ এবং সকল পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি দিতে হবে। সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশে কার্যকর পদক্ষপ নিতে হবে। জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেতনা, প্রাণ সায়ের, মরিচ্চাপ, সাপমারা, লাবন্যবতীসহ সকল নদী খাল খনন ও জোয়ার ভাটা চালু করতে হবে। দ্রুত জেলার রাস্তাঘাট সংস্কার ও পূণ:নির্মাণ করতে হবে। ভূমিহীন ও মৎস্য জীবীদের মধ্যে খাসজমি ও জলমহল বন্দোবস্ত দিতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে জেলার ৭০/৮০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ইঞ্জিনভ্যান, ভটভটি, মটর ভ্যান, নছিমন, করিমন, ইজিবাইক উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সাতক্ষীরা শহরে জনভোগান্তির চলমান মটরভ্যান বিরোধী অভিযান বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে হবে
এদিকে সোমবার ১০দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে জেলা নাগরিক কমিটি। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে সাতক্ষীরা থানার সামনে সেটা আটকে দেওয়া হয়। পরে মানববন্ধনের একটি অংশ শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। অপরদিকে নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম এসব অভিযোগ করেন । সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা ইউনিটের জেলা কমান্ডার মশিউর রহমান মুশু, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছাইফুল করিম সাবু, বিশিষ্ট শিক্ষক অনুরাগী অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধরণ সম্পাদক খালিদুর রহমান খালিদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শুধাংশু শেখর সরকার, জেলা জাসদের আশেক-ই-এলাহী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ইউনিটের সদস্য সচিব লায়লা পারভিন সেঁজুতি, এনজিও ব্যক্তিত্ব মাদব চন্দ্র দত্ত, গণফোরাম সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন, রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান মিলন, মমিন হাওলাদার, জোহর আলী, রেজাউল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলীনূর খান বাবুল জেলার ১০ দফা দাবী তুলে ধরা ও এর দ্রুত বাস্তবায়নের প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

http://www.dailysangram.com/post/285100-