২৪ মে ২০১৭, বুধবার, ৮:০৯

গরম-লোডশেডিং বাঁচা দায়

তীব্র গরমে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
শহর থেকে গ্রামে সর্বত্রই লোডশেডিং। একে তো তীব্র দাবদাহ, তার ওপর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে মানুষ। পুড়ছে রাজধানীসহ সারা দেশ। জ্যৈষ্ঠের এ গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের কিছুটা সম্ভাবনা থাকলেও এ অস্বস্তিকর গরম থেকে আপাতত মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। থাকবে আরো কয়েকদিন এমন পূর্বাভাসই দিচ্ছে আবহাওয়া বিভাগ। শহরের চাইতে গ্রামে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি বলে অভিযোগ এসেছে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে। অতিমাত্রায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। লোডশেডিংয়ের কারণে অফিস-আদালতেও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। দেশে কোথাও আট থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। এখন প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ভৈরব বাজারের বাসিন্দা লাবণী আক্তার বলেন, তাদের ভৈরবে বিদ্যুতের লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করছে। রাতে-দিনে মিলে ১৭ থেকে ১৮ বার আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। ঢাকার আজিমপুরের বাসিন্দা জুলফিকার বলেন, একে তো জ্যৈষ্ঠের তীব্র তাপদাহ তার উপরে আবার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। রাতে চার-পাঁচবার লোডশেডিং হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতির কারণে এক হাজার এবং কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকার কারণে বিদ্যুতের লোডশেডিং ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, গত ২৩শে মে পিক আওয়ারে (সন্ধ্যায়) ৭টায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে আট হাজার ৬১৫ মেগাওয়াট। এই সমযে সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এতে ঘাটতি বা লোডশেডিং ৮৮৫ মেগাওয়াট। কাগজে-কলমের এই হিসাব দেখানো হলেও পরিস্থিতি এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা আছে ১৫ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াট। তবে আট থেকে সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন হয় না। পাওয়ার সেলের এক কর্মকর্তা বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বলেন, কিছু কিছু সমস্যা আছে। সঞ্চালন ও বিতরণের সমস্যা আছে। গ্যাস থেকে প্রায় ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কিন্তু সেখান থেকে পুরোটা পাওয়া যায় না। ফলে প্রকৃত উৎপাদন কমে যায়। গত ২২শে মে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে ৩ থেকে ৪ বছর লাগতে পারে। তিনি বলেন, এখন আমরা বলবো না যে, খুব ভালো অবস্থানে আছি।
সূত্র জানায়, বিদ্যুতের মূল জ্বালানি হলো গ্যাস। ৬৭ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস দিয়ে। গ্যাসের অভাবে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এই গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। বহু সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের অভাবে অচল বসে আছে। তেল দিয়ে উৎপাদন হয় ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ। বাকিটা কয়লা ও জলবিদ্যুৎ। অতিমাত্রায় গরম ও অতিরিক্ত লাইনের কারণে পল্লী এলাকায় লোডশেডিং হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, সরকারের হিসাবের স্বচ্ছতার অভাব আছে। সরকার তার অভ্যন্তরীণ হিসাব ধরে। এক্সটার্নাল হিসাব ধরে না। প্রতি বছরেই এরকম ঘটনা ঘটে। এখন বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। কোন সমন্বয় নেই। উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু জ্বালানির সরবরাহ বাড়েনি। সরকার বিদ্যুতের যে লোডশেডিংয়ের হিসাব দিয়েছে, তা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে চাহিদা আরো বেশি। তিনি বলেন, কারিগরি বিষয়ে অনুমান নির্ভর কথা বলা উচিত নয়। সরকার বিদ্যুতের নিয়মতান্ত্রিক কোনো হিসাব রাখে না। অনুমান নির্ভর বলে থাকে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=66719&cat=3/