২৩ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:৫৫

গরমে কাহিল জনজীবন

দেশজুড়ে বইছে দাবদাহ। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। কোথাও কোথাও কিছুটা বৃষ্টির দেখা মিললেও গড় তাপমাত্রায় তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় দুপুরের দিকে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায় ঢাকার ব্যস্ত রাজপথ। পারতপক্ষে জরুরি কাজ ছাড়া কেউ ভরদুপুরে বাসা বা অফিস থেকে বের হচ্ছে না। তবে জীবনের প্রয়োজন মেটাতে গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গরমের এই মাত্রা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। চলতি মাসের ২৬ তারিখের আগে গরম কমার কোনো আভাস দিতে পারছেন না তারা। আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, সাধারণত এপ্রিল-মে মাস গরমের মৌসুম হওয়ায় স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাকে আমরা দাবদাহ বলে থাকি। তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছলে তাকে বলা হয় দাবদাহ। আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েসবাইট ওয়েদার ডটকমের রিপোর্ট অনুযায়ী শনিবার দেশের রাজশাহী অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার যা এক ডিগ্রি কমে ছিল, ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, শনিবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৬শে মে পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকতে পারে। এদিকে গরমের সঙ্গে রাজধানীতে দিনভর বিভিন্ন সড়কে লেগে থাকছে যানজট। যানজট আর গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কর্মমুখী মানুষদের।

আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান বলেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার যে অবস্থা দেখছি তাতে ২৬শে মে পর্যন্ত গরম এমন অবস্থায় থাকবে। এরপর থেকে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সাধারণত ১লা জুন থেকে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয়। এবারো তেমনটি আশা করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়ার তারতম্য হলে কখনো কখনো বৃষ্টি দেরিতে শুরু হয়। গত বছর ১লা জুন বৃষ্টি শুরু না হলে ৬ দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। জুনের বৃষ্টি শুরু হলে আবহাওয়ার তাপমাত্রাও অনেক কমে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ প্রকৗশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এপ্রিল ও মে একটু ব্যতিক্রমী মাস। মাসের পুরোটাই তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। গত বছরও এ দুই মাসই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর এপ্রিলে সাধারণত এক থেকে দুটি তাপপ্রবাহ থাকে, যা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। মে মাসেও একই রকম অবস্থা থাকে। তবে কোনো কোনো বছর তাপমাত্রার স্থায়িত্ব একটু বেশিদিন হয়ে যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এর আগে ১৯৯৫, ১৯৯৯, ২০০৯ ও ২০০৭ সালে দাবদাহ হয়েছিল। ৯৫-এর দাবদাহ ঘুরেফিরে দেশের ১২টি জেলায় মোট আট দিন ছিল। এরপর ২০০৭ সালে সাতটি জেলায়, ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে ছয়টি জেলায় পাঁচ থেকে ছয় দিন দাবদাহ বয়ে গিয়েছিল। গত বছরও আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক আচরণ ছিল একটানা ২৪ দিন। যা আগে কখনো একাধারে এতদিন চলতে দেখা যায়নি।
ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালে তাকে এলনিনো ধরা হয়। সাধারণত এই তাপমাত্রা ৩ মাস অতিক্রম করলে অফিসিয়ালি এলনিনো ঘোষণা করা হয়। গত বছরও শক্তিশালী এলনিনো ছিল। এ বছরও এলনিনোর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর প্রভাবে আফ্রিকা থেকে শুরু হয়ে পূর্ব এশিয়া হয়ে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার প্রভাবে বাংলাদেশেও প্রচণ্ড দাবদাহ হয়েছিল গত বছর। এবারো সেটাই হচ্ছে। তিনি বলেন, এই এলনিনো শেষ হলে শুরু হবে লানিনো। তখন আবার বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। যোগাযোগ করা হলে দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছেই। তবে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই বৃষ্টি শুরু হবে। এতে তাপমাত্রাও কমে যাবে।
এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে রাজধানীর কর্মজীবী মানুষেরও বেড়েছে কষ্ট। একই সঙ্গে বেড়েছে রোগব্যাধি। পানিশূন্যতার কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে। রাজধানীর আইসিডিডিআরবি’তে দিনে প্রায় ৫০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে রোগীর এ হার অনেক কম থাকে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা দাবদাহে রোদ এড়িয়ে চলা এবং পরিষ্কার পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক জনসংখ্যার চাপ, মাত্রাতিরিক্ত শিল্প ও আবাসিক ভবন, গাছপালা আর নদ-নদীর অভাব; এছাড়া সূর্যের তাপের সঙ্গে গরমের মাত্রা বাড়াচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন ও বিভিন্ন যন্ত্রের বিকিরণ। গরম এই মুহূর্তে কমানো সম্ভব না। তবে সাধারণ মানুষকে প্রচণ্ড গরমের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রেহাই পেতে প্রচুর পরিমাণ পানি ও খাবার স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=66558