১৯ মে ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩৬

দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকের জন্য বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা মূলধন

দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে বাজেটে আবার দেয়া হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত অধিকাংশ ব্যাংক এখন চরম মূলধন সঙ্কটে ভুগছে। এই সঙ্কট কাটানোর জন্য নতুন মূলধন জোগাতে বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে ২০১১-১২ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘পুন:মূলধন বিনিয়োগ’ খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের বিপরীতে চাহিদার পরিমাণ সাত গুণেরও বেশি।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি ব্যাংক সংস্কারে নেয়া পদেেপর ফলে এসব ব্যাংকের দতা বেড়ে ঘাটতি কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। সে আশা পূরণ হয়নি; বরং বিশাল এ ঘাটতির বিপরীতে সরকারি ছয় ব্যাংককে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ঋণ পেয়েছে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটি পেয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। আর সোনালী ৩০০ কোটি, রূপালী ২০০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৪৯ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১০০ কোটি এবং গ্রামীণ ব্যাংক ২২ কোটি টাকা।
বাজেট প্রতিবেদন অনুযায়ীÑ ২০১১-১২ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণে রাখা হয় ৩৪১ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ওই অর্থবছরে ব্যয় হয় ৫৪১ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ৪২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ব্যয় হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবারো পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও শেষ পর্যন্ত খরচ হয় পাঁচ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তবে ওই অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে বরাদ্দ রাখা হয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর এ খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুধু বেসিক ব্যাংকেই মূলধন ঘাটতি বাবদ সরকার জোগান দেয় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেয়া হয় ১৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে দেয়া হয় ৫৫ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংক পায় এক হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংককে দেয়া হয় ৭১০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ২৫০ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে সরকার জোগান দেয় ৭৫ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক পায় এক হাজার ৯৯৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ৮১৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক এক হাজার ৮১ কোটি, রূপালী ব্যাংক ২১০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১৭৫ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন বাংককে ৮০ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছ থেকে সোনালী ব্যাংক পায় ছয় কোটি ৮১ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংক ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১১৯ কোটি ৪৯ লাখ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য দেয়া হয় ১০৮ কোটি টাকা। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংককে দেয়া হয় ৮৩ কোটি এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জন্য ছাড় করা হয় ১০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/221105