চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর পায়ে র্যাশ
১৮ মে ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১০

অন্য ধরনের জ্বর বলে রোগীরা বুঝতে পারছেন না কোথায় যাবেন

রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব

ছড়িয়ে পড়েছে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া জ্বর। এটি ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। চিকিৎসাও অনেকটা ডেঙ্গুর মতোই কিন্তু প্রচারণা কম থাকায় আক্রান্ত অথবা অভিভাবকেরা বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন, কোথায় যাবেন অথবা এ রোগের চিকিৎসকইবা কারা। চিকিৎসকেরা বলছেন, মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত-পা ও আঙুলের গিটে ব্যথা নিয়ে আসছেন রোগীরা। সাধারণ জ্বরের মতোই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে অ্যান্টিবায়োটিকও দিচ্ছেন। মানুষ সুস্থও হয়ে যাচ্ছেন কিন্তু বাধ সাধছে নতুন প্রচারণায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভুল তথ্যসহ নানা ধরনের তথ্য দিয়ে প্রচারণা চলছে। কিছু কিছু অনলাইনও প্রচারণা চালাচ্ছে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে বলে। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ চিকিৎসকেরা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য চান।
মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ২০০৫ সালে ভারতে এ রোগের ভয়াবহতা দেখা দিলে সেখানে ১৪ লাখ মানুষের আক্রান্তের খবর সংগ্রহ করা হয়।
তিনি জানান, চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ কোনো রোগ নয়। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত, পা ও আঙুলের গিটে ব্যথা হতে পারে। চার থেকে পাঁচ দিন জ্বর থাকতে পারে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ভাইরাসটির কারণে জ্বরের মাত্রা বেশি। চার-পাঁচ দিনের বেশি জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ড. মাহমুদুর রহমান জানান, এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস ইজিপটাই প্রজাতির মশার কামড় থেকে এ রোগের উৎপত্তি। এ ভাইরাস মশা থেকে মানুষের শরীরে আসে। আবার আক্রান্ত মানুষকে কামড় দিলে মশাও আক্রান্ত হয় এবং বাহক হিসেবে আবার মানবদেহে প্রবেশ করে। শুধু স্ত্রী জাতীয় এডিস মশার কামড়েই এই রোগটি হতে পারে। সাধারণত মশায় কামড়ানোর পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে লণগুলো ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, জীবনের জন্য এ রোগ সরাসরি হুমকি নয়, তবে এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে।
তিনি জানান, এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে এ জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল ও গা মুছিয়ে (স্পঞ্জিং) দিতে হবে। প্রচুর পানি, শরবত, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি পান করালে রোগী স্বস্তি বোধ করবে।
চিকিৎসকেরা জানান, এডিস মশা দিনে কামড়ায়, বিশেষ করে বিকেলে। দিনে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। তা ছাড়া মশার প্রজননত্রেগুলো ধ্বংস করতে হবে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকা খোলা পানির আঁধারগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
রোগটি প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকায় দেখা যায়। পরে এশিয়ায় ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়াতে এর বিস্তার দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পরে ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা যায়। এরপর বিচ্ছিন্ন দুই-একজন রোগী ছাড়া এ রোগের বড় ধরনের কোনো বিস্তার আর বাংলাদেশে লক্ষ করা যায়নি। বর্ষার পরপর যখন মশার উপদ্রব বেশি হয় তখন এ রোগের বিস্তার বেশি দেখা যায়। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে। জিকা ভাইরাসও একই মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং প্রায় একই রকম লক্ষণ দেখা যায়।

 

www.dailynayadiganta.com/detail/news/220762