খুলনায় নির্মাণাধীন রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে ফাটল : নয়া দিগন্ত
১৮ মে ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:০৯

খুলনা আধুনিক রেলস্টেশন প্রকল্প

নির্মাণকাজ শেষের আগেই প্লাটফর্মে ফাটল

খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের এপ্রিলে। গত ২৪ এপ্রিল রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক খুলনায় এসে আগামী নভেম্বরে রেলস্টেশন উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ মাস মেয়াদে গত বছরের অক্টোবরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিদাকারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয় চার কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্লাটফর্মের ছাদে ফাটল ধরার বিষয়টি ধরা পড়ে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান গোপনে প্লাস্টার দিয়ে ফাটলগুলো ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করলেও ২ নম্বর প্লাটফর্মের জায়গায় এ ফাটল ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
সরেজমিন দেখা যায়, আধুনিক রেলস্টেশন প্রকল্পের মূল স্টেশন ভবন ও তিনটি প্লাটফর্মের নির্মাণকাজ চলছে। এরমধ্যে মূল স্টেশন ভবনের কাজ প্রায় শেষের পথে থাকলেও প্লাটফর্মগুলোর কাজ বেশ বাকি। তবে ২ ও ৩ নম্বর প্লাটফর্মের ছাদের ৭০০ থেকে ৮০০ ফুট করে ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে মূল স্টেশন ভবন থেকে ২ নম্বর প্লাটফর্মের দিকে কয়েক ফুট এগোতেই কয়েকটি অংশে পাঁচটি ফাটল দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে ডান দিকে তিনটি এবং বাম দিকে দু’টি ফাটল রয়েছে। ফাটলগুলো প্লাস্টার করে ঢেকে দেয়া সত্ত্বেও স্পষ্ট হয়ে রয়েছে চিহ্নগুলো।
মঙ্গলবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেল মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান সরেজমিনে প্রকল্পে গিয়ে নির্মাণাধীন প্লাটফর্মের বিম ও ছাদে ফাটল, ছাদের এবড়োখেবড়ো অবস্থা দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। পরিদর্শন শেষে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি রেলমন্ত্রীকে অবহিত করলে মন্ত্রী একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য বলেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের উপসহকারী প্রকৌশলী মোসাব্বির হক বিপ্লব ফাটলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে আঁশজাতীয় ফাটল হতে পারে। এটি তেমন কোনো সমস্যা নয়। তিনি জানান, প্রতিটি প্লাটফর্মের দৈর্ঘ্য ১২ শ’ ফুট এবং প্রস্থ ৩০ ফুট করে। এক নম্বর প্লাটফর্মের ছাদের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে ২ ও ৩ নম্বর প্লাটফর্মের ছাদের ৭০০ থেকে ৮০০ ফুট করে ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
খুলনা রেলওয়ের সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমানও ফাটলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বৈদ্যুতিক পাইপ লাইনের কারণেই ফাটল ধরেছে। বিষয়টি তারা মনিটরিং করছেন। এভাবে আর ছাদ দিয়ে পাইপ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। সামনে আর এ ধরনের সমস্যা হবে না।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আলহাজ শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণে ব্যাপক অবহেলা দেখা গেছে। নির্মাণসামগ্রীগুলো যত্রতত্র অযতœ ও অবহেলায় পড়ে সেগুলোতে মর্চে ধরেছে, কাঠের দরজাগুলো অবহেলায় পানিতে নষ্ট হচ্ছে। এসবের তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে ওই স্থাপনাগুলো কুয়েট এবং বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের এপ্রিলে শুরু হয়। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ মাস মেয়াদে গত বছরের অক্টোবরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে চার কোটি ৪৫ লাখ টাকা। নতুন রেলস্টেশনটি হচ্ছে তিনতলাবিশিষ্ট। প্রথম তলায় স্টেশন ভবনে থাকছে ছয়টি টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের রুম। দ্বিতীয় তলায় স্টেশন মাস্টারের রুম, রেস্টুরেন্ট, তফসিলি ব্যাংকের শাখা, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম, ফাস্ট ফুডের দোকান ও রেল কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কক্ষ। তৃতীয় তলায় রেলওয়ের প্রকৌশলীদের কক্ষ। স্টেশন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে একসাথে ছয়টি ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ এবং বের হতে পারবে। ফলে প্রায় ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।

 

www.dailynayadiganta.com/detail/news/220759