চারদিকে বালুর ভেতরে তিস্তা এখানে সরু খালে রূপ নিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেছেন সফি খান
১৮ মে ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:০০

তিস্তা একটি নদীর নাম

এপারে পানি কম, বালু বেশি

তিস্তাপারে দহগ্রামের সরদারপাড়ার বাসিন্দা হোসেন আলী। বয়স আশির ওপর। গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে কাঠফাটা রোদে হোসেন আলীর সঙ্গে কথা হয় তিস্তাপারে দাঁড়িয়ে। বললেন, ‘তিস্তায় পানি কম। তাই মাটিতে রস কম। আবাদ করতি কষ্ট হয়।’

উত্তর-পশ্চিম থেকে তিস্তা নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম হয়ে। এখানে ভূখণ্ড এক, কিন্তু র্যাডক্লিফ সাহেব আছেন লাঠির আগায় লাগানো সাদা পতাকায়। অর্থাৎ এটা বাংলাদেশ, ওটা ভারত। ছাগল-গরু চরাতে এসে কৃত্রিম সাবধানতা দেখান গ্রামের যুবক রেজানুর রহমান। কথা বলেন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে, তাঁর ছাগল-গরু চরে বেড়ায় ভারতে।
রেজানুর হাত উঁচু করে দেখান, সরাসরি তিস্তার পশ্চিম পারে ছোট জঙ্গলের মতো জায়গাটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার সদর থানার অরুণ গ্রাম। গ্রামটা আসলে চর। গ্রামের ওপারে আবার তিস্তা। নীলফামারী জেলার ডিমলায় এসে তিস্তা যখন পৌঁছায়, তখন শুধুই বাংলাদেশ।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিস্তা নিয়ে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৩৩০ মিটার উচ্চতায় হিমালয়ে তিস্তার উৎস। ভারতের সিকিমের পর পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলা হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে তিস্তা।
তিস্তার ডান পারে নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা; রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা। আর বাঁ পারে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলা এবং কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা। সবশেষে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা।
এ–মাথা থেকে ও–মাথা
নদীর শুরু থেকে শেষ দেখার মধ্যে একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে। জীবন দেখার মতো। কিন্তু উপায় নেই। কারণ, আমাদের প্রায় সব নদীর উৎস ভারতে। দহগ্রাম থেকে তিস্তার শুরু দেখা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো।
২৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে সাতটায় বাস থেকে পাটগ্রাম নামি। আগের দিনের কালবৈশাখীর দাগ রাস্তাঘাটে। আমাদের পাটগ্রাম প্রতিনিধি এ বি সফিউল আলমের জন্য অপেক্ষা। তাঁর মোটরসাইকেলে তিস্তার বাংলাদেশে ঢোকা দেখার জন্য রওনা হলাম। চলতে চলতে তিনি বোঝাতে থাকেন ভারতের ভূখণ্ড কোনটা, কোনটা বাংলাদেশের। এপার বাংলাদেশ, ওপার বাংলাদেশ মাঝখানে ভারতের তিনবিঘা করিডর। গ্রামের মানুষের কাছে জানতে চাই, ‘কোথায় তিস্তা।’
ভুট্টাখেতের ভেতর দিয়ে ভাঙাচোরা রাস্তা। তারপর বিশাল বালুর মাঠ। আসলে মাঠ নয়, এটা তিস্তার চর। জায়গাটা দহগ্রাম ইউনিয়নের সরদারপাড়া। বালুতে মোটরসাইকেল আর চলে না। হাঁটতে থাকি। একসময় তিস্তার পাড়ে পৌঁছাই। কথা হয় হোসেন আলী আর রেজানুরের সঙ্গে। তাঁরা বলেছেন, তিস্তা ক্রমেই বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে।
বেলা তিনটার দিকে পাটগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি পৌঁছাই। তারপর চরখড়িবাড়ি। এই এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে ভারত। এখানে ভুট্টার আবাদে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। বিকেলে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয় ডালিয়া অফিসে। তাঁরা আমাকে গেস্টহাউস ‘অবসর’-এ থাকার ব্যবস্থা করেন। অবসর অনেক বড়। কিন্তু বাসিন্দা আমি একা।
৩০ এপ্রিল সকালে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সহায়তায় সেচের সুবিধা পাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলি। জালের মতো ছড়িয়ে পড়া মূল ক্যানেল, শাখা ক্যানেল, উপশাখা ক্যানেল ঘুরে দেখি ভ্যানে চড়ে। দুপুরে এসে দেখি তিস্তা ব্যারাজের তিনটি গেট খোলা। পানি ভাটিতে গড়াচ্ছে। বিকেলে সফিউল আলম হাজির। মোটরসাইকেলে রংপুরে পৌঁছাই সন্ধ্যায়।
এখন আসলে সহজে তিস্তার কাছে যাওয়া যায় না। কারণ, কোথাও কোথাও তিস্তা মূল সড়ক থেকে ১০-২০ কিলোমিটার দূর। নদী ধরে এগোনো যায় না, পানির অভাবে এখন তিস্তায় নৌকা চলে না।
১ মে সকালে দেখতে যাই যমুনেশ্বরী নদীর ওপর দিয়ে প্রকল্পের কৃত্রিম খালের প্রবাহ। দেখার পর ফিরে আসি রংপুর শহরে। উদ্দেশ্য কুড়িগ্রাম। ১ মে যান চলাচল বন্ধ। আবার সফিউল আলম ভরসা। মুঠোফোনে কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সফি খান জানালেন, কাউনিয়ায় তিস্তা ব্রিজের কাছে নৌকা পাওয়া যাবে। সেখান থেকে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় চিলমারী। এই প্রথম উত্তেজনা হলো। নৌকায় তিস্তা দেখা যাবে।
তিস্তা ব্রিজের নিচে গোটা চারেক নৌকা। পানিও আছে। কিন্তু কেউ যেতে রাজি হলেন না। নৌকার মালিকেরা জানালেন, এই পথে যাতায়াত প্রায় বছর দশেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ সবার জন্য লাভজনক। উত্তেজনা শেষ। অগত্যা রিকশা ও ইজিবাইকে চড়ে কুড়িগ্রাম পৌঁছাই।
আবার মোটরসাইকেলে নানা পথ ঘুরে, বহু মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করে ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার মোহনায় যাওয়ার চেষ্টা করলাম। সবাই বলেন, বালু আর বালু মোটরসাইকেল চলবে না। হাঁটাপথ অনেক। শেষে চিলমারীর জোড়গাছ বাজারে এসে পৌঁছাই বিকেল পাঁচটায়।
ব্রহ্মপুত্রের চেহারাই আলাদা। উত্তর থেকে দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র বইছে তীব্র গতিতে, সশব্দে। নৌকার মাঝি বললেন, ‘ওই খানে মোহনা।’ দূরে কোথায় মোহনা বুঝলাম না। নৌকায় উঠলাম। ইঞ্জিনচালিত নৌকা, অনুকূল স্রোত। সন্ধ্যার আগে আগে পৌঁছালাম তিস্তার শেষ প্রান্তে।
অদ্ভুত দৃশ্য! এক দিকে ব্রহ্মপুত্রের প্রবল বেগ। অন্যদিকে তিস্তা যেন থমকে গেছে। স্রোতহীন। ব্রহ্মপুত্র যেন বালুর স্রোত, সে তুলনায় তিস্তার পানি স্বচ্ছ। এলাকাটি সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা জেলার একটি উপজেলা।
তিস্তার পানিতে চাষাবাদ
চরখড়িবাড়ি তিস্তার আরেক গ্রাম। গ্রামটি ডিমলা উপজেলায়। বিকেলে এই গ্রামে এসে দেখা গেল ভুট্টা তোলা/কাটা, বাছাই, বিক্রির উৎসব চলছে। নদীপাড় রক্ষার জন্য কংক্রিটের ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তার ঢলে আর বাড়িঘর ভাসবে না—, এই বিবেচনায় অনেকে পাকা বাড়ি তৈরি করছেন।
বাঁধের ওপর গিয়ে দেখা গেল মানুষ ভুট্টা চাষ করেছে নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে। হামিদ আলী এই গ্রামেরই বাসিন্দা। বলেন, ‘বর্ষায় ওই চর থাকব না।’ হামিদ আলী আরও বলেন, ভারত তিস্তায় ‘কপাট সিস্টেম’ করেছে। পানি আটকে রেখে সেই পানি তারা নালা দিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। পানি বেশি হলে কপাট খুলে দেয়। তখন বাংলাদেশে পানি আসে।
মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষায়ও ‘কপাট সিস্টেমের’ তথ্য উল্লেখ আছে। অবশ্য তাকে বলা হয়েছে ব্যারাজ। তিস্তায় দুটো ব্যারেজ: একটি ভারতের অংশে (গজলডোবা), অন্যটি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানিতে। বাংলাদেশে ঢোকার ১৯ কিলোমিটার পরই দোয়ানিতে তিস্তা ব্যারাজ। আটকানো পানি নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলার কৃষিজমির সেচে ব্যবহৃত হয়।
দহগ্রাম থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত মানুষ পানির স্বল্পতার কথা বলেছেন। নলকূপে পানি কম ওঠে। যন্ত্রচালিত নলকূপে পানি তুলতে অনেক খরচ, ১০ থেকে ১৫ মিনিট চলার পরও পানি আসে না। ভারত পানি আটকে দেওয়ায় এমন হয়েছে, এটা সাধারণ মানুষ মনে করেন। তবে তাঁদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে আসা বালু অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে।
তবু এই বালুর চরেই বসতি গড়তে দেখা গেছে। যাঁরা বসতি গড়ছেন, তাঁরা নদীভাঙনের শিকার। কেউ বলেন, তাঁরা ময়মনসিংহ, জামালপুর থেকে এসেছেন। পাউবোর কর্মকর্তারা বলেন, নদীর মাঝের এই জায়গা খাস। এই জায়গায় গড়া বসতি অবৈধ।
বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে পাউবো। পাউবো ৮৯ কিলোমিটার তিস্তা খনন করতে চায়। তারা ১০ কোটি ১১ লাখ ঘনমিটার বালু অপসারণের পরিকল্পনাও তৈরি করে ফেলেছে। ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা, তিস্তা খনন নিয়েও তেমনই অনিশ্চয়তায় আছে পাউবো।
৩০ এপ্রিল বেলা দুইটায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেটের মধ্যে ৩টি খোলা দেখা যায়। তিন দিন পর ৩ মে তিনটি গেট সম্পূর্ণ এবং চারটি গেট আংশিক খুলে দেয় ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন কৃষিজমিতে পানির চাহিদা কম, তাই ধরে রাখা পানি মূল তিস্তা নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে উজানে ভারত থেকে পানি আসার পরিমাণও বেড়েছে।
নিয়ন্ত্রিত তিস্তা
তিস্তা এখন নিয়ন্ত্রিত। তিস্তার প্রাকৃতিক প্রবাহ কোথাও নেই। না ভারতে, না বাংলাদেশে। জলবিদ্যুৎ ও সেচের জন্য তিস্তার প্রবাহকে আটকে দেওয়া হয়েছে একাধিক স্থানে। তাই তিস্তার প্রবাহে, গতিপথে নানা পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে।
হেঁটে তিস্তা পার হওয়ার কথা বলেছেন একেবারে উত্তরের দহগ্রামের সরদারপাড়ার মানুষেরা। কিছু দক্ষিণে এসে ডিমলার চরখড়িবাড়ি এলাকায় দেখা গেছে নদীর মাঝের চরের ভুট্টাখেতে কৃষক যাচ্ছেন হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে হেঁটে। অর্থাৎ পুরো তিস্তা একটা সময় প্রায় শুকিয়ে যায়। পাউবো বলছে, ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিস্তায় পানি সবচেয়ে কম থাকে।
প্রবাহ, নদীভরাট, গতিপথ পরিবর্তন ও ভাঙনের নিরিখে পাউবো তিস্তাকে তিন অংশে ভাগ করছে। প্রথম অংশ আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে তিস্তা ব্যারাজ পর্যন্ত; মাঝের অংশ তিস্তা ব্যারাজ থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত। শেষ অংশ কাউনিয়া থেকে ব্রহ্মপুত্রের মোহনা পর্যন্ত। পাউবো বলছে, ভারতে ও বাংলাদেশে তিস্তার তীর রক্ষার অধিকাংশ কাজ ও অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে ডান পাশে। নদী ধীরে ধীরে বাঁ দিকে সরে যাওয়ার এটা অন্যতম প্রধান কারণ।
তিস্তার পানির উচ্চতা মাপার জন্য নয়টি ও পানির প্রবাহ মাপার জন্য পাঁচটি স্টেশন আছে। কাউনিয়া ও কালীগঞ্জ স্টেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে পাউবো বলছে, ১৯৮৫ সালের পর থেকে তিস্তায় পানির উচ্চতা বাড়ছে। কারণ নদীবক্ষে বেশি পরিমাণে বালু জমা হচ্ছে। ওই সালে ভারত গজলডোবার ব্যারাজ চালু করে পানি প্রত্যাহার শুরু করে। ভারত শুষ্ক মৌসুমে ব্যারাজের গেট বন্ধ রাখে, বর্ষায় খুলে দেয়।
বাংলাদেশ অংশে বালু বেশি জমে তিস্তা ব্যারাজের উজানে। এই অংশে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বালু তুলতে দেখা গেছে। ব্যারাজ কর্তৃপক্ষও বালু সরাতে চায়। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বালু যত তোলা হবে, ব্যারাজের রিজার্ভারে তত বেশি পানি সঞ্চয় করা যাবে। তাঁরা খননও চান।
তিস্তার প্রশস্ততা সব জায়গায় সমান না। কোথাও পূর্বপারে দাঁড়িয়ে পশ্চিম পারের গাছপালা-বাড়িঘর ঝাপসা দেখা যায়। আবার কোথাও নদীর এপারে দাঁড়িয়ে ওপারের মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায়। সরকারি তথ্য বলছে, তিস্তার গড় প্রশস্ততা তিন কিলোমিটার। প্রশস্ত কোথাও ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার, আবার কোথাও কমে মাত্র ৩০০ মিটার।
একাধিক জেলার তিস্তাপারের মানুষের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তারা চর জেগে ওঠা ও চর বিলুপ্তির কথা বলেছেন। বলেছেন পানি কমে যাওয়ায় নদীতে বোরোলি মাছ কমেছে। চরে দেশের অন্য এলাকার মানুষের বসতি গড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। নদীভাঙন খুব একটা নেই।
পাউবো বলছে, তিস্তায় নদীভাঙন কম হওয়ার দুটো কারণ। এই নদীর তীর রক্ষার কার্যক্রম আছে। দ্বিতীয়ত, এই নদীর পানিপ্রবাহ কমে গেছে। ১৯৫৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরের প্রবাহ বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে, উজান থেকে অর্থাৎ ভারত থেকে পানি আসছে কম। জুন থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে। পানির প্রবাহ তলানিতে এসে ঠেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর মার্চ থেকেই পানি বেশি আসতে দেখা গেছে। পাউবোর ডালিয়া অফিসের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে সামনে রেখে ভারত সম্ভবত সৌজন্য দেখিয়ে একটু বেশি পানি ছেড়েছে।
১ মে ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার মোহনায় সারা দিন মাছ ধরার চেষ্টা করেছেন নূর আলম, সঙ্গে চন্দন দাস। তাঁদের বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কামারের ভিটা গ্রামে। ওই মোহনার চরে দাঁড়িয়ে ওই দিন সূর্যাস্তের আগে আগে তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। বলেন, তাঁরা সারা দিন নৌকায় থাকেন, রাতে নৌকায় ঘুমান। নূর আলম বলেন, সারা দিনে একটি বোয়াল গেঁথেছিল বড়শিতে। দুই শ টাকায় বিক্রি করেছেন। চন্দন বলেন, ‘জমিজমা নাই। নদীত মাছ নাই। শুধু আমরাই জানি কেমনে দিন পার হয়।’
এখানে প্রবল তোড়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র, উত্তর থেকে দক্ষিণে। কল কল শব্দ শোনা যায়। কানে আসে পাড় ভাঙার শব্দ। পূর্ব দিক থেকে এসে তিস্তা মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে। দুজনেই বলেন, মাস দু-এক আগেও তাঁরা এখান দিয়ে হেঁটে তিস্তা পার হয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিল্লি বৈঠকে কী হয়, তা জানার আগ্রহ ছিল চরখড়িবাড়ির কৃষক হামিদ আলীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাবছিলাম কপাট খোলার (ভারতের গজলডোবা তিস্তা ব্যারাজের গেট) একটা সিদ্ধান্ত হবে। এখন শুনতাছি কোনো সিদ্ধান্ত হইনি।’

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1183906/