অ্যান্ড্রু জনসন ; কিনটন ; ট্রাম্প
১৮ মে ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:০৫

ট্রাম্প কি ইমপিচমেন্টের পথে হাঁটছেন

সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফিনের রুশ সংযোগ বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করতে সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে চাপ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পÑ এমন অভিযোগ ওঠার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের দাবি উঠেছে।

ট্রাম্পের অনুরোধ না রাখার কারণেই এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে কোমির একটি নোটের সূত্র ধরে।
কোমি তার নোটে লিখেছেন, রুশ সংযোগ বিষয়ে তদন্ত বাদ দিতে ট্রাম্প তাকে অনুরোধ করেন। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে সাক্ষাতে রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দু’টি ঘটনা মিলে হোয়াইট হাউজের পরিস্থিতি চরম ঘোলাটে আকার ধারণ করেছে। তবে তথ্য ফাঁসের আগেই অন্তত দু’জন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট দাবি করেছেন। অবশ্য ডেমোক্র্যাট দলীয় হাউজ নেতা ন্যান্সি পেলোসি তাদের এই দাবি গ্রহণ করেননি। তবে সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনার পর বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আবারো এই দাবি উঠতে শুরু করেছে। ওবামা প্রশাসনের সাবেক সিনিয়র উপদেষ্টা ডেভিড আলেকজান্ডার এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, আজ পর্যন্ত আমি ইমপিচমেন্টের বিরোধী ছিলাম, কিন্তু কোমির নোট যদি সত্য হয় এবং তার কথা যদি বিশ্বাসযোগ্য হয় তাহলে আমাদের সামনে বিষয়টি সম্পূর্ণ হয়ে দেখা দেবে। এ কথার মাধ্যমে মূলত সাবেক এই উপদেষ্টা ট্রাম্পের ইমপিমেন্টের দাবিতে তার সমর্থনের কথাই জানান দিলেন।
অতীতে দু’জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইমপিচমেন্টের শিকার হয়েছিলেন, যদিও তাদের একজনকেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে হয়নি। ১৮৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন নিয়ম বহির্ভূতভাবে মন্ত্রিপরিষদে পরিবর্তন আনার অভিযোগে কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ইমপিচমেন্টের শিকার হন। তবে উচ্চকক্ষ সিনেটে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে জিতে রক্ষা পান তিনি। আর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইমপিচমেন্টের শিকার হন বিল কিনটন। মনিকা লিউনেস্কি কেলেঙ্কারিতে তার ওপর অনাস্থা আনে নি¤œকক্ষ। তবে ১৯৯৯ সালের ওই ঘটনায় একই রকমভাবে সিনেটে টিকে যান কিনটন।
আর ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়ার পর ১৯৭৪ সালে ইম্পিচ হওয়ার সম্ভাবনা দেখে নিজেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন রিচার্ড নিক্সন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্য মনে করেন না অনেকেই। তবে তার এই অভিযোগ ইম্পিচ করার মতো গুরুতর কি না তা নিয়ে ভিন্ন মত আছে রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু রাশিয়ার কাছে গোপন তথ্য ফাঁসের কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে একমত সবাই। অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রকাশের অধিকার তার রয়েছে এমন দাবিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন ট্রাম্প। কেউ কেউ ট্রাম্পের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিষয়টি এর সাথে জড়িত আছে বলে মনে করছেন। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শপথ নেয়ার পর থেকেই তিনি বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক সংবিধানের ৯ অধ্যায়ের এক নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছেন।
কাজেই নতুন এই বিতর্ক ট্রাম্পের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বিল কিনটনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি ছিল বিচার ব্যবস্থায় বাধা প্রদান। জেমস কোমিকে বরখাস্ত করার পর ঠিক একই অভিযোগ উঠছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। কারণ কোমি রুশ সংযোগ বিষয়ক অভিযোগের তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন এবং কোমির নোটে এ কথা জানা গেছে যে ট্রাম্প তাকে তদন্ত বন্ধের অনুরোধ করেছিলেন। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল বলেছেন, ‘নোটনি বিচার বিভাগে বাধা দেয়ার শক্তিশালী প্রমাণ। স্বাধীন বিশেষ কৌঁসুলির মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করা উচিত’। আর আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাধীন সংস্থা এফবিআইয়ের প্রধানকে কোনো তদন্ত বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া অবশ্যই আইনের লঙ্ঘন।
ঘটনাটি এতই মারাত্মক যে এই ঘটনায় নিজ দল রিপাবলিকান এমপিদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা কম ট্রাম্পের জন্য। নি¤œ কক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভের তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ও রিপাবলিকান দলীয় নেতা জ্যাসন শাফেৎজ বলেছেন, ‘কোমির নোট আমাদের হাতে আসবে, যদি সেটি সত্যি হয়। আমি দ্রুতই এটি দেখতে চাই এবং আমার হাতে কলম প্রস্তুত আছে’। এ কথার মধ্যমে মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে কঠিন বার্তাই দিলেন এই রিপাবলিকান নেতা। একের পর বিতর্কিত কাণ্ডে দল ও দলের নেতার বিব্রত করা ট্রাম্পের জন্য সর্বশেষ এই ইস্যুতে দলীয় সহানুভূতি পাওয়া কঠিন হতে পারে।
উল্লেখ্য, মাইকেল ফিন সম্পর্কিত খবর প্রকাশের আগেই এক জনমত জরিপে দেখা গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৪৮ ভাগ নাগরিক দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচ চায়। ট্রাম্পকে যারা মতায় দেখতে চায় তাদের চেয়ে ইমপিচমেন্টের পে জনমত বেশি বলে জানায় ওই জরিপ রিপোর্ট।
ডেমোক্র্যাটিক ফার্ম পাবলিক পলিসি নামে একটি সংস্থা জরিপ পরিচালনা করেছে এবং এতে ৪৮ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে মতাচ্যুত করার পে মত দিয়েছে। এর বিপরীতে ৪১ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে মতায় দেখতে চায়। প্রতিষ্ঠানটি তিন মাস আগে এক রিপোর্টে বলেছিল, মার্কিন নাগরিকেরা এ ইস্যুতে সমানভাবে বিভক্ত।
গত মঙ্গলবার জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় এবং গত ১২ থেকে ১৪ মে জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ সময় ৬৯২ জন নিবন্ধিত ভোটারের সাাৎকার নেয়া হয়েছে। এর একদিন আগে গ্যালুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের ভিত্তিতে আমেরিকার যে চারজন প্রেসিডেন্ট জনমত জরিপে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন তার মধ্যে ট্রাম্প সবার নিচে।

 

www.dailynayadiganta.com/detail/news/220855