৬ মে ২০১৭, শনিবার, ১০:১৩

আইসিএএফসির গভীর উদ্বেগ

হাজার কোটি টাকা পাচারে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি

বাংলাদেশে অব্যাহত আর্থিক দুর্নীতি, বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ অবাধে লুটপাট এবং দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমস’ বা আইসিএএফসি। সংস্থাটি অর্থ পাচার বন্ধ ও অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। নিউ ইয়র্কভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমসের চেয়ারম্যান ওয়ালিউল আলম, নির্বাহী পরিচালক ইমরান আনসারী এই বিবৃতি প্রদান করেন।
সংস্থার মুখপাত্র কাউসার মুমিন স্বারিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিএফআইর মতে যে ছয়টি কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচার হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রধান কারণ রাজনৈতিক সহিংসতা এবং গণতন্ত্রের অভাব। কোনো ব্যক্তিই চাইবে না তার অর্থ সেখানে বিনিয়োগ হোক। যদি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ সরকার অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ করতে চায় তাহলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে জিএফআইর মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে।
জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারটি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের দ্বিগুণ। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। প্রতি বছরই এই পাচারের হার বাড়ছে। শুধু ২০১৩ সালে পাচার হয়েছে ৭৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থ পাচারে দণি এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। জিএফআইর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ পাচারের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ। সে হিসাবে আমরা ২০১৫ ও ১৬ সালে দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে সহজেই তা অনুমেয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ দেশে দুর্নীতিতেই ব্যাংকিং খাত শেষ হচ্ছে। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, বেসিকসহ ব্যাংকিং খাতে যতগুলো বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছেÑ এসব ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ইচ্ছে থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ তা করতে পারেনি। নিজেদের দুর্নীতি সেই সাথে এই অর্থ লুটপাটে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীনদের যোগসাজশের ফলে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি এক ধরনের ব্যাংক ডাকাতি। কয়েকটি ব্যাংকের খেলাপি অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে লাখ কোটি টাকা। মূলধন অভাবে ভুগছে প্রতিটি সরকারি ব্যংক। লুটপাটের একটি বড় অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। ব্যাংকের কোনো জবাবদিহিতা নেই। অর্থমন্ত্রী নিজেকে অসহায় মনে করছেন। এমনকি এই ডাকাতি থেকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাদ যায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ১০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বাংলাদেশে প্রধানত অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার নজির হচ্ছে শেয়ার বাজারকে কুক্ষিগত করা, রাজনৈতিক নেতাদের ঋণ খেলাপি হওয়া, সংসদ সদস্য, আমলা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ মওকুফ করা, মেগা-প্রজেক্টে নজিরবিহীন ব্যয়-বরাদ্দ। এ অবস্থায় দেশকে চরম পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচাতে দেশের অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্ট এগিয়ে আসবেন বলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমস আশা প্রকাশ করে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/217747