৩ মে ২০১৭, বুধবার, ১০:০১

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় আফগানিস্তানের চেয়েও পেছনে বাংলাদেশ

গণমাধ্যম বিষয়ে এক গবেষণায় টিআইবি বলছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আফগানিস্তানের চেয়েও পেছনে রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। কিন্তু সরকার তা স্বীকার করে না। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। কর্মীদের পাওনা পরিশোধে অনীহা, কর্মীদের অধিকার সংরতি না হওয়া, ত্রে বিশেষে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সমতার অভাব রয়েছে। গবেষণা বিষয়ে আলোচনায় বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে। সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সুবিধা নেয়ার কারণে এ বিভাজন আরো প্রকট হচ্ছে। এমতাবস্থায় দরকার পেশাজীবী সংগঠন।

বিশ^ গণমাধ্যম দিবস-২০১৭ উপলে ধানমন্ডির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত এসডিজি-১৬ ও সুশাসন, সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা এ কথা বলেন। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবি পরিচালক রিজওয়ান উল আলম। টিআইবির ট্রাস্ট্রি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক, গবেষক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী, গণমাধ্যম বিশ্লেষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জ ই মামুন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিক নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে না। বাংলাদেশের গণমাধ্যম সর্বদা জনস্বার্থে পরিচালিত হয় নাকি বাণিজ্যিক স্বার্থ রা করে সে বিতর্ক এখন জনমনে প্রবল হয়ে উঠেছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সার্বিকভাবে গণমাধ্যমেরর মানের অবনতি হয়েছে। গণমাধ্যমেরর স্বাধীনতা শুধু সাংবাদিকের প্রতিবেদন লেখা বা মন্তব্য করার স্বাধীনতা নয়। অন্য দিকে বিভিন্ন আইন ও নীতির বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে অমসৃণ করার প্রবণতাও লক্ষণীয়।

গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের পাওনা পরিশোধে অনীহা, কর্মীদের অধিকার সংরতি নয়, ত্রে বিশেষে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সমতার অভাব রয়েছে। এমনকি ওয়েজবোর্ড সংক্রান্ত সমস্যা ও অনিয়ম এবং ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। নারীদের জন্য অনুপযুক্ত কর্মপরিবেশ এবং তারা বেতনভাতা ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের একাংশের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
আফসান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের একতা হবে না। পুঁজির চরিত্রে যেমন হেফাজত ও আওয়ামী লীগ একত্রিত হয়েছে, ঠিক তেমন হবে না।

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, প্রেস কাউন্সিলের আইনের মধ্যে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এসব সংশোধনে কারো কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে। সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সুবিধা নেয়ার কারণে এ বিভাজন আরো প্রকট হচ্ছে। তিনি বলেন, মানিক মিয়াদের মতো নির্ভীক সাংবাদিকতা এখন সম্ভব নয়। আগে জেল বরণ করতে হতো। এখন গুম করা হচ্ছে।
জ ই মামুন বলেন, গণমাধ্যমে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে এটা ঠিক। আমাদের সরকারি ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই সঠিক সাংবাদিকতা করতে হবে। অনেকে করেও যাচ্ছেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে এখন নির্ভীক সাংবাদিকতা করা কঠিন। গণমাধ্যমের জন্য সহায়ক আইনি পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে গণমাধ্যমকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজনিত চাপ, হুমকি, অসহযোগিতা, বাধা-বিপত্তি, স্বআরোপিত সেন্সরশিপ ইত্যাদি মোকাবেলা করে গণমাধ্যম কর্মীদের যেমন এগিয়ে যেতে হবে, তেমনি এসব বাধা-বিপত্তি সরিয়ে গণমাধ্যমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে জনগণ, বিশেষ করে এসডিজি প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে সরকারকে অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
ড. শামসুল হুদা বলেন, বাংলাদেশে পেশাদারিত্ব গড়ে উঠেনি। কারণ তারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে না। সরকারকে উপো করার কোনো কারণ নেই। সরকার থাকবেই। সরকারকে কার্যকর করতে কাঠামো সঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, সুশাসন বিষয়ক ল্য অর্জনে সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণপূর্বক একটি বাস্তবায়ন কাঠামো এবং সব পকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। পাশাপাশি, পেশাজীবী সংগঠনগুলো নীতি-নৈতিকতার মান নির্দিষ্ট করে তা মেনে কার্যক্রম পরিচালিত হলে ল্য অর্জনে সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/216949