৩ মে ২০১৭, বুধবার, ৯:২৭

কোন অবস্থায়ই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না --খালেদ মিশাল

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের নেতা খালেদ মিশাল ঘোষণা করেছেন, তার সংগঠন ১৯৬৭ সালের সীমান্ত নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মেনে নিলেও কখনোই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না।
সোমবার কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে হামাসের নয়া নীতি ঘোষণা করেন তিনি। মিশাল বলেন, “হামাস সমস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড মুক্ত করার নীতিতে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দিয়ে কিংবা কোনো অধিকার ত্যাগ না করেই ১৯৬৭ সালের সীমান্ত মেনে নিতে রাজি আছে।”

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নতুন নীতিতে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। মিশাল বলেন, “আমরা আমাদের নীতিকে হালকা করতে চাই না, তবে আমরা উদার হতে চাই। আমরা আশা করছি নতুন নীতি ঘোষিত হওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলো আমাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।”
হামাস নেতা ইসরাইলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের চলমান অনশন ধর্মঘটের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।
খালেদ মিশালের পক্ষ থেকে ঘোষিত হামাসের নয়া নীতিতে সকল ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনার আহ্বানে অটল থাকার পাশাপাশি ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মসজিদুল আকসা মুসলমানদের সম্পদ এবং এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।

হামাস হচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের অন্যতম প্রধান প্রতিরোধ আন্দোলন। ইহুদিবাদী ইসরাইল ২০০৭ সাল থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকার ওপর তিন দফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে গাজায় ইসরাইলের সর্বশেষ আগ্রাসন শুরু হয়। প্রায় ৫০ দিনের ওই যুদ্ধে ২,২০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হন।
পশ্চিমা বিশ্ব, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এবং মিশরের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে হামাস এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার হামাস নতুন যে নথি প্রকাশ করছে তাতে ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকে স্বীকার করা হয়নি এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইকে সমর্থন করা হয়েছে।

তাছাড়া, নতুন নীতিমালায় হামাসের ১৯৮৮ সালের সনদে কোনও পরিবর্তন আদৌ ঘটানো হয়েছে কিনা সেটিও স্পষ্ট নয়। ওই সনদে ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
অবৈধভাবে জন্ম নেয়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র ডেভিড কেইয়েস বলেছেন, “হামাস বিশ্বকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এ চেষ্টা সফল হবে না।”
এছাড়াও
জায়নবাদ ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রেখা টেনে দিয়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের এক নতুন দলিল। ওই দলিলে সংগঠনটি পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের স্থলে জায়নবাদীদের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করছে। সেখানে জায়নবাদী কারা, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।

হামাসের ওই রাজনৈতিক দলিলে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের লড়াই ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয়। যে জায়নবাদী ইসরায়েলি নাগরিকরা ফিলিস্তিনি ভূখ- দখল করে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করছি আমরা।’
১৯৮৮ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় হামাসের প্রাথমিক ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘ইসরায়েলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করাটাই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।’ সেই সঙ্গে ইসলাম ও ইহুদী ধর্মের বিরোধকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করে এটিকে মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
নতুন নীতিগত দলিলে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সংগঠনটির বিচ্ছিন্নতাকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘হামাস একটি স্বতন্ত্র সংগঠন।’ সেখানে আরও বলা হয়, ‘হামাস কোনও ধর্মীয় সংগঠন নয়, এটি রাজনৈতিক ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক সংগঠন।’

http://www.dailysangram.com/post/282217