৩ মে ২০১৭, বুধবার, ৯:১৮

দিবস : ৩ মে বিশ্ব মুক্তসাংবাদিকতা

সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের গণমাধ্যম

সংবাদপত্রের স্বাদীনতার মৌলিক আদর্শগুলো চিহ্নিত করে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে আফ্রিকার নামিবিয়ায় উইন্ডহোয়েক শহরে ইউনেস্কো ও ইউএনডিপিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ডিকারেশন অব উইন্ডহোয়েক ঘোষণা হয়। ১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ ৩ মে’কে বিশ্ব প্রেস-স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। প্রেস-স্বাধীনতা কিভাবে লঙ্ঘিত বা বিঘিœত হচ্ছে এবং কোন কোন সাংবাদিক স্বীয় কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বা কারাবরণ করেছেন, সেসব তথ্য জনগণকে জানানো এ দিবস পালনের লক্ষ্য। সাধারণ জনগণকে এ সম্বন্ধে সতর্কীকরণ এবং তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রেস-স্বাধীনতার প্রাসঙ্গিক আলোচনার বিষয় ও পেশাগত নৈতিকতার কথা মিডিয়া পেশাজীবীদের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা করা, পেশাগত কর্তব্য পালন করতে গিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের স্মরণ করা এবং প্রেস-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ বা বিলুপ্ত করার প্রয়াসে যারা শিকার হয়েছেন, তাদের সহায়তাদান হচ্ছে ওই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।

’সংবাদপত্র হলো সভ্যতার অগ্রদূত’। এক দিনে গড়ে ওঠেনি আমাদের এই সম্ভ্রান্ত আধুনিক সভ্যতা। এই সভ্যতার পেছনে বহু মানুষের বহু দিনের শ্রম যেমন অবদান রেখেছে, সংবাদপত্র তথ্যের পরে তথ্য প্রদান করে তেমনি তিলে তিলে দাঁড় করিয়েছে এই সভ্যতার রূপরেখা। সংবাদপত্রই প্রথম তৈরি করেছে সভ্যতা উন্নয়নের উত্তাল ঢেউ। এই ঢেউকে আবার ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে; যার ফলে পৃথিবীর নানা প্রান্তে লেগেছে আমাদের এই সভ্যতার ছোঁয়া। ইদানীং অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যে জয়জয়কার তার সূতিকাগারও এই সংবাদপত্র।

বাংলাদেশ একটি নি¤œপ্রযুক্তির দেশ। ধীরে ধীরে মধ্যমপ্রযুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। শিল্প, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই নি¤œœ মধ্যম প্রযুক্তির কর্মকাণ্ডনীতি গ্রহণ করা হয়। সংবাদপত্র শিল্পেও এই নীতি গ্রহণ করা হয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সব নিয়মনীতি ত্যাগ করে ১৯৬২ সালে কলা অনুষদের অধীনে ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম কোর্স চালু করে। স্বাধীনতার পর ডিপ্লোমা কোর্স বন্ধ করে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। আশির দশকে সব পাবলিক ও নব্বই দশকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়।

বর্তমান অবস্থায় সাংবাদিকতা কাজটা কুসুমাস্তীর্ণ নয় বরং কণ্টকাকীর্ণ। এ পথটা বড়ই পিচ্ছিল ও দুর্গম। এ সময় কলমসৈনিক থাকবে সদাজাগ্রত, অতন্দ্র প্রহরীর মতো। অত্যন্ত সজাগ ধীর অথচ তীè-বিচক্ষণ এবং সার্বক্ষণিক চৌকস অবস্থায়। এ জন্য দরকার সৃজনশীল সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা শিক্ষা। ডিপ্লোমা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে নি¤œœ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। তাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য দ্রুততম সময়ে কাজে যোগদান করে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা। পৃথিবীর কোনো দেশে ডিপ্লোমাধারীদের পেশা পরিবারের কোনো নজির নেই। প্রতিটি জেলায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে একাধিক ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। সেখান থেকে স্বল্পব্যয়ে ঘরে বসে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা শিক্ষা অর্জন করবে যুবসমাজ। পেশা পরিবর্তনের মানসিকতা উত্তীর্ণ হবে। তাদের মেধা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতায় সংবাদমাধ্যম দ্রুত বিকাশ লাভ করবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণভিত্তিক চিন্তা ও কাজের সমন্বয়ে গড়ে উঠবে আগামী প্রজন্মের সংবাদশিল্প। সংবাদশিল্পের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার ভাবনায় শক্তিশালী হবে স্বাধীন সাংবাদিকতা।
মো: আবুল হাসান, খন রঞ্জন রায়

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/216860