ভাঙচুর হওয়া গাড়িটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ছবি: পান্না বালা
২ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০০

সাংসদের গাড়িবহর থেকে শিল্পপতির গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সাংসদের গাড়িবহর থেকে শিল্পপতির গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় শিল্পপতিসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, হামলাকারীরা শিল্পপতির লাইসেন্স করা একটি পিস্তল এবং টাকার দুটি ব্যাগসহ মোট চারটি ব্যাগ নিয়ে গেছে।

আজ সোমবার বেলা সোয়া একটার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদী বাসস্ট্যান্ড-শরিফাবাদ ভায়া ঘাড়ুয়া আঞ্চলিক সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত টেকনো গ্রুপের চেয়ারম্যান ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের পাথরাইল গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ মঞ্জুরুল হক (৬৫), পিএস মামুন চৌধুরী (৩৫), ভাগনে শাহরীয়ার লস্কর ওরফে আরজ (৩৯), গাড়িচালক বাবলু মিয়া (৪৫) ও পিয়ন হানিফকে (৩৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিল্পপতি মঞ্জুরুল ও তাঁর ভাগনে শাহরীয়ারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পিএস মামুন চৌধুরীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং চালক ও পিয়নকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শাহরীয়ার লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব সদরদী উচ্চবিদ্যালয়ে আজ দুপুরে অভিভাবক সমাবেশ ছিল। ওই অনুষ্ঠানে মঞ্জুরুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। আমরা দুটি গাড়ি নিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ভূঁইয়া বাড়ি এলাকায় সাংসদের গাড়িবহর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হই। তিনি বলেন, সাংসদের বহরে সাংসদ মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর গাড়ি, ভাঙ্গার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়ি ছাড়া আরও আটটি মাইক্রোবাস ছিল। শাহরীয়ারের অভিযোগ, সাংসদের বহরটি আমাদের গাড়ির কাছাকাছি এলে বহরের বিভিন্ন গাড়ি থেকে প্রায় অর্ধশত লোক নেমে হাতুড়ি ও ইট নিয়ে আমাদের গাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় আমরা পাঁচজন আহত হয়েছি।’ তিনি দাবি করেন, হামলাকারীরা শিল্পপতির লাইসেন্স করা একটি পিস্তল, টাকা ভর্তি দুটি ব্যাগসহ মোট চারটি ব্যাগ নিয়ে যায়।
‘শিল্পপতির বহরে হামলা হয়েছে বলে শুনেছি’—মন্তব্য করেন সাংসদ মজিবুর রহমানের সফরসঙ্গী ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শিল্পপতির ওপর হামলা হয়েছে শুনেছি। শুনেছি একটি পিস্তলও খোয়া গেছে। তবে এ হামলার সঙ্গে আমি বা সাংসদের গাড়িবহরের কেউ জড়িত নন।’ তিনি বলেন, ‘এ হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি পুলিশকে বলি, নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হোক।’
পূর্ব সদরদী উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ব্যাপারী আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার দুপুরে আমাদের বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ ছিল। এ সমাবেশে শিল্পপতি মঞ্জুরুল হক আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু শিল্পপতির আসার খবর জেনে যান সাংসদ ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। রোববার বিকেলে তাঁরা ফোন করে এ অনুষ্ঠানে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।’ তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে সাংসদ ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আগে আসেন। তাঁরা অনুষ্ঠান করে যাওয়ার পথে সাংসদের বহর থেকে শিল্পপতির গাড়িতে হামলা ও পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পপতির গাড়িতে হামলা হয়েছে এবং তার গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়েছে। গাড়িটি থানায় নেওয়া হয়েছে। ‘কারা হামলা করেছে তা আমি জানি না’ মন্তব্য করে ওসি বলেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শিল্পপতি থানায় কোনো অভিযোগ দেননি।
প্রসঙ্গত শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুরুল হক ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ২০০১ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে মনোনয়নপত্র জমাও দিলেও শেষ মুহূর্তে তা প্রত্যাহার করে নেন।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1165366/