২ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৪৩

ভারতকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন এরদোগান?

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান এখন ভারত সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সোমবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কিন্তু দিল্লিতে আসার ঠিক আগে প্রেসিডেন্ট এরদোগান যেভাবে কাশ্মির ইস্যুতে বহুপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন ও পাকিস্তানের সদিচ্ছা আছে বলে তাদের দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তা ভারতকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।
সোমবার বিকেলে মোদি ও মি. এরদোগান যখন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তখন তারা কেউ অবশ্য কাশ্মির শব্দটি উচ্চারণও করেননি।
কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুর্কি প্রেসিডেন্টের এই সফর থেকে ভারতের কূটনৈতিক অর্জন যে কিছু হবার নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
দু'সপ্তাহ আগে এক গণভোটের মাধ্যমে তুরস্কে নিজের কর্তৃত্ব আরও জোরদার করার পর প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রথম যে বিদেশ সফর করছেন, তা এই ভারতেই।
কিন্তু দিল্লির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে একটি ভারতীয় চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি কাশ্মির প্রসঙ্গে যা বলেছেন তা ভারতের কাছে একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না।
তিনি সেখানে বলেন, "কাশ্মিরে এই রক্তপাত আমরা চলতে দিতে পারি না। চিরতরে এই সঙ্কটের সমাধানের জন্য আমরা বহুপক্ষীয় একটা সংলাপের সূচনা করতে পারি, তাতে তুরস্কও জড়িত হতে পারে। আর এতে ভারত, পাকিস্তান উভয়েরই লাভ হবে।"
"আমার প্রিয় বন্ধু, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আমার অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে। আমি খুব ভাল করে জানি তার সদিচ্ছা আছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবেও চান এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।"
তুরস্ক বরাবরই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ বলে পরিচিত, কিন্তু কাশ্মির প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোগান যে প্রকাশ্যে এমন মনোভাব দেখাবেন তা ভারত ধারণা করতে পারেননি।
এই প্রসঙ্গটি সফরে আলোচিত হচ্ছে কি না, দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তার সরাসরি জবাবও এড়িয়ে গেছেন।
তবে দিল্লিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অশ্বিনী রায় বলছিলেন, কূটনৈতিক দিক থেকে এই সফরে ভারতের যে বিশেষ কিছু পাওয়ার নেই, তা পরিষ্কার।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খাতে হয়তো সহযোগিতা বাড়বে, কিন্তু এই সফরে রাজনৈতিক সংলাপের নিরিখে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা আমি দেখছি না।"
"তুরস্কে যে ধরনের সরকারই থাকুক, ভারতে বর্তমান সরকারে যে ধরনের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ঝোঁক দেখা যাচ্ছে, তাতে এই মুহূর্তে ডিপ্লোম্যাটিক মাইলেজ পাওয়ার আশা নেই বললেই চলে।"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষীয় বৈঠকের পর কাশ্মির নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
তবে এটুকু তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন কাশ্মির ইস্যুর নিষ্পত্তিতে সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার ভারতের পক্ষে কিছুতেই মানা সম্ভব নয়।
মোদি বলেন, "সন্ত্রাসবাদের বিপদ ভারত ও তুরস্ক উভয়কেই দুশ্চিন্তায় রেখেছে। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে এবং আমরা একমত হয়েছি যে কোনো কারণ বা কোনো লক্ষ্য, কোনও যুক্তি দিয়েই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা যায় না।"
"জঙ্গি নেটওয়ার্ক নির্মূল করতে, তাদের অর্থায়ন বন্ধ করতে, সীমান্ত-পারাপার বন্ধ করতেও আমরা একযোগে কাজ করবো", জানিয়েছেন মোদি।
অর্থাৎ কাশ্মিরে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না-হলে পাকিস্তানকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই, প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে পাল্টা এই বার্তাই দিতে চেয়েছে ভারত।
যদিও এটা জেনেই, যে তুরস্ক ও পাকিস্তানের বহু দিনকার আস্থা ও বন্ধুত্বের সম্পর্কে চিড় ধরানো যাবে না, মনে করছেন অধ্যাপক অশ্বিনী রায়।
তিনি বলছিলেন, "তুরস্ককে ওই বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরিয়ে আনা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। তা ছাড়া কাশ্মিরে তো ভারত তো নিজেরাই দিন কে দিন তাদের অবস্থান হারাতে বসেছে। সংলাপ শুরু করাটা ভারতের মধ্যেই বেশ স্পর্শকাতর বিষয়, এবং ভারত বরাবরই বলে আসছে কাশ্মীর একটা দ্বিপাক্ষিক বিষয়, এখানে বাইরের লোকজন ঢুকবে না।"
"তার কারণ হলো আমাদের কারো সঙ্গেই তেমন বন্ধুত্ব নেই এখন - কাজেই বাইরের লোকজন ঢুকলে তো বিপদ। আমেরিকা ইদানীং অবশ্য ভারতের বন্ধু হয়েছে, কিন্তু কাশ্মির প্রশ্নে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের দোস্তি আরো অনেক পুরনো। চীনও পাকিস্তানের সঙ্গে আছে, তুরস্ক তো ছিলই। রাশিয়া নিয়েও বলা শক্ত, তারা এখনো ভারতের কতটা বন্ধু।"
ফলে ভারত যে কিছুতেই কাশ্মির নিয়ে আলোচনাকে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চায় না, তার কারণ বোঝা শক্ত নয়।
ভারতের জনমতও বিশ্বাস করে এটা ভারত-পাকিস্তানের ব্যাপার, কাশ্মিরে তৃতীয় কারো নাক গলানোর সুযোগ নেই।
তাই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সফরের পর হয়তো ভারতে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়বে।
কিন্তু কাশ্মির নিয়ে সেই বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন হবে না।
সূত্র : বিবিসি

www.dailynayadiganta.com/detail/news/216711