২৯ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ৮:৪৪

বেষ্টনী ছাড়াই চলছে কাজ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলে যানবাহন ও পথচারীরা

ফ্লাইওভার নির্মাণে মানা হচ্ছে না নিয়ম

রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ কোনো ধরনের বেষ্টনী ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে প্রতিদিনই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। ভুলতা এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যানবাহন চলাচল করে। ফ্লাইওভারের কাজ চলার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ফ্লাইওভারের কাজ চলছে কোনো রকম বেষ্টনী ছাড়াই, এতে করে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে মানা হচ্ছে না কোনো প্রকার নিয়মনীতি। নির্মাণ শ্রমিকদের হেলমেট, বেল্ট, জুতাসহ ইত্যাদি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করার প্রয়োজন হলেও এগুলো কোনটিই ব্যবহার করা হচ্ছে না। প্রকল্প এলাকা ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। ধুলাবালি রোধে নিয়মিত পানি দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয় না। এতে পথচারী ও স্থানীয় লোকজন অসুস্থ পড়ছেন। এদিকে, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিছু দিন পর পরই ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন এবং নির্মাণ কাজ দ্রæত গতিতে সমাপ্ত করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। এতে করে স্থানীয় জনগণ মন্ত্রীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে, ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় যেসব সমস্যাগুলো রয়েছে, সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য জোর দাবি জানান স্থানীয় জনগণ। জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারলেন বিশিষ্ট ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল সরকার। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের কাজ পেয়েছিল চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রæপ কোং, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও এএম বিল্ডার্স। চারলেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ২৩৮ কিলোমিটার। মূল ফ্লাইওভারের নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা, সড়ক নির্মাণে ব্যয় ১১২ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় হবে সাড়ে সাত কোটি টাকা। ভুলতা ফ্লাইওভারটির কাজ ২ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ কাজ বাকি রয়ে গেছে। ফ্লাইওভারের কাজ যথাসময়ে শেষ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। এমনিতেই ফ্লাইওভারে কাজ চলার কারণে জনগণকে চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। তার উপর যদি যথা সময়ে ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ শেষ না হয় তাহলে জনগণের ভোগান্তির অন্ত থাকবে না। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভুলতা ফ্লাইওভারে পাইলিং, ফ্লাইওভার, ড্রেন, এপার্টম্যান্ট, রাস্তা সব মিলিয়ে কয়েক শত শ্রমিক কাজ করছে। ভারি ও যেকোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার সব সময় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার উচিত। ফ্লাইওভারের কোন শ্রমিদেরকে কোন ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করতে দেখা গেছে। অনেক সময় শ্রমিকদেরকে অনেক উঁচুতে উঠেও কাজ করতে হয়। কোন ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই উপরে উঠে কাজ করছে। বেশকয়েক দিন আগে আলতাফ নামে এক রডমিস্ত্রি গুরুতর আহত হয়। ফ্লাইওভারের কাজ চলাকালীন সময়ে বেষ্টনী দিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই করেই বেষ্টনী ছাড়াই চলছে ফ্লাইওভারের কাজ। ভুলতা পাশেই রয়েছে গাউছিয়া মার্কেট। মার্কেট হওয়ার কারণে এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ভুলতাতে আসে। দুই পাশে রাস্তা আর মাঝে চলছে ফ্লাইওভারের কাজ। কোন বেষ্টনী না থাকার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। যে কোন সময় ঘটতে পারে নানা রকমের দুর্ঘটনা। এছাড়া ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন পিলারের নিচে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও ফুটপাত বসানো হয়েছে। পথচারীদেরও আনাগোনা বেড়ে গেছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণাধীন পিলারের লোহা জাতীয় সরঞ্জামাদি নিচে পড়ে পথচারীরা আহত-নিহত হতে পারে। ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, ফ্লাইওভারের কাজ চলাকালীন সময়ে অবশ্যই চারপাশে বেষ্টনী দেওয়া প্রয়োজন। বেষ্টনী দিয়ে কাজ করলে অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সুজন নামে এক পথচারী জানান, ফ্লাইওভারের কাজ চলাকালীন সময়ে বেষ্টনী দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশে বেষ্টনী না থাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদেরকে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচে ২ জন নিহত ও অন্তত ৫ জন মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রে অব্যশই চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া নির্মাণ শ্রমিকদের অব্যশই হেলমেট, বেল্ট, জুতাসহ ইত্যাদি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতে হবে। বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। এ ব্যাপারে জানতে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

https://www.dailyinqilab.com/article/77249/