২৮ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ১:৫০

টেন্ডার ছাড়াই কেসিসি’র দেড় কোটি টাকা খরচ

টেন্ডার ছাড়াই দেড় কোটি টাকা মূল্যের ছয়টি ‘হাই মাস্ট’ বা উঁচুপোলের বাতি ক্রয়ে সকল রেকর্ড তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে উন্মুক্ত পদ্ধতি বাদ দিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ডিপিএম পদ্ধতিতে এসব বাতি ক্রয় নিয়ে গত বছরে বেশ বিতর্কের সৃষ্টিসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তলব করেছে।

কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক, নতুন অ্যাসফল্ট প্লান্ট প্রকল্প, নতুন রাস্তা মোড়, শিববাড়ী মোড়, রূপসা স্ট্যান্ড মোড় ও রাজবাঁধ ল্যান্ডফিল এ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আলোকিত ও নিরাপত্তার স্বার্থে ৬টি ‘হাই মাস্ট’ বা উঁচুপোলের বাতি কেনার উদ্যোগ নেয় খুলনা সিটি কর্পোরেশন। এক কোটি ৫০ লাখ ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পে থাকে ১৬০টি লাইট, ৬টি পোল, কানেকটিং ক্যাবল, আর্থিন, টাওয়ার লাইট, ফাউন্ডেশন ও উঠা-নামার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ইত্যাদি। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ রকি এডভোকেট এর সাথে যাবতীয় চুক্তিপত্র সম্পন্ন শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুন ওয়ার্ক অর্ডার। এরপর চায়না থেকে ওইসব জিনিসপত্র আমদানি শেষে কেসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল গত বছরের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। নির্দিষ্ট মেয়াদে শহীদ হাদিস পার্ক ও নতুন অ্যাসফল্ট প্লান্ট প্রকল্পে দু’টি লাইট স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও বাকী চারটি লাইটসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম ওভাবেই পড়ে রয়েছে। উন্মুক্ত পদ্ধতি বাদ দিয়ে ডিপিএম পদ্ধতিতে ওইসব বাতি ক্রয় নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টিসহ অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ ওঠায় এখনও পর্যন্ত বাকী চারটি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ছয়টি লাইট কেনার বিপরীতে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ নিরুপনসহ খুঁটি-নাটি সকল অভিযোগ অনুসন্ধানে যাবতীয় নথি তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
কমিশনের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবুল হুসাইন বলেন, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে ঢাকা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা আসে। যার প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জাহিদ হোসেন শেখের কাছে সংশ্লিষ্ট ছয়টি ‘হাই মাস্ট’ কেনার সকল রেকর্ড চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক নথি পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় আরো কিছু তথ্য ও নথি দরকার। সেগুলো সরবরাহ করা জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, নথিপত্র না দেখে এসব ব্যাপারে কোন কিছু বলা যাবে না।
উল্লেখ্য, ওই সময় এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ। সমিতির সভাপতি শেখ মনি খোকন ও সাধারণ তসলিম আহমেদ আশা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছিলেন, সম্প্রতি অসাধু কতিপয় কর্মকর্তা যোগসাজসে দেড় কোটি টাকা মূল্যের লাইট ক্রয় করা হয়েছে। এই কাজটির টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। যার মাধ্যমে সরকারি ও জনগণের টাকা লুটপাট হয়েছে। উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে এসব কাজ করা হলে দুর্নীতি ও জনগণের অর্থ নষ্ট হতো না।

 

http://www.dailysangram.com/post/281686-