২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৪২

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এবার মিলল ৮০ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গ

* সব সুড়ঙ্গের শুরু ভারতের দিক থেকে?

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর ও স্পর্শকাতর সীমান্ত “বাংলাদেশ-ভারত” সীমান্ত । চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার এই সীমান্তের মধ্যে বাংলাদেশী হতাহতের ঘটনা সকল পরিসংখ্যান ছাপিয়ে শীর্ষেই অবস্থান করছে । নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে এসবের বাদ-প্রতিবাদ তেমন একটা হয়ে ওঠে না । নানামুখী অপরাধের আখড়া এই সীমান্ত। একের পর এক সুড়ঙ্গের খোঁজ মিলছে এই সীমান্তেই , যা রহস্যের সৃষ্টি করে চলেছে । এর মধ্যেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন একটি সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া সীমান্তের কাছে ৮০ ফুট দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের খোঁজ মেলে বলে গতকাল বুধবার ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয় । এনডিটিভি জানায়, সীমান্ত অনুসন্ধানের সময় এই সুড়ঙ্গের খোঁজ পায় বিএসএফ জওয়ানরা।
এদিকে , একের পর এক রহস্যজনক সুড়ঙ্গের খোঁজ মেলায় নানা আতংক দানা বাঁধছে । বিশেষজ্ঞদের মতে , এ ধরনের সুড়ঙ্গ দিয়ে গরু পাচার হতে পারে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যে দাবি করছে , তা শুধু করলেই হবে না। এ ধরনের সুড়ঙ্গ অতিপরিকল্পিতভাবেই করা হয়ে থাকে , যখন একদেশ আরেক দেশের সাথে গোপন কোন সমঝোতা করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য । এ ছাড়া অস্ত্রের বড় ধরনের চোরাচালানের জন্যও এমনটা করা হয়ে থাকতে পারে । গুম,খুন করে একদেশ থেকে আরেক দেশে মানুষ পাচারের জন্যও এমনটা হতে পারে ।
বিএসএফ মনে করছে, পশু পাচারকারীরাই এই সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে। বিএসএফের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবী শরণ সিংহ ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, পশু পাচারকারীরা কাঁটাতারের নিচে মাটির গভীরে এই সুড়ঙ্গ খুঁড়ছিল। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া বাংলাদেশে পশু পাচারে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণেই এই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ডিআইজি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি চা-বাগানের মধ্য দিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে ওই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ করা হচ্ছিল। এই সুড়ঙ্গের হদিস মেলার পর সীমান্তে টহল আরও জোরালো করেছে বিএসএফ।
এর আগে গত মার্চে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে একটি সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছিল বিএসএফ। মেঘালয়ের তুরা সেক্টরে পাহারা দেয়ার সময় গুজংপাড়ায় একটি পাহাড়ের ঢালে ২২ থেকে ২৫ ফুট গভীর ওই সুড়ঙ্গের হদিস পাওয়া যায়।
কলকাতার একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় , গতকাল সকালে দিনাজপুরের চোপড়া থানার ফতেপুর সীমান্ত চৌকি এলাকায় এই ৮০ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গের খোঁজ পান বিএসএফ জওয়ানরা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুড়ঙ্গটি দেখতে পান তারা। ১০০ মিটার লম্বা এই টানেলটি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। ভারতে গ্রাম আরুগাছের মধ্যে এই সুড়ঙ্গের অবস্থান। ছোট চৌকো মুখের সুড়ঙ্গ দিয়ে চোরাচালান করা হতো বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সুড়ঙ্গটি দেখে এটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। ১৮ ইঞ্চি ঢ ১২ ইঞ্চি ব্যাসের এই গর্তের মুখ সীমান্ত থেকে ভারতের দিকে ২০০ মিটার ভেতরে অবস্থিত। লম্বায় ৪ ফুট এবং চওড়ায় ২ ফুট এই গর্ত সীমান্ত চৌকি ৪০৬/৯-এস-এ অবস্থিত। এই এলাকাটি বিএসএফ-এর অধীনে রয়েছে।
সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের পুরাতন আটওয়ারি গ্রামে উঠেছে এই সুড়ঙ্গ। সীমান্ত চৌকি থেকে ১৫০০ মিটার দূরে এর বাংলাদেশের মুখটি অবস্থিত। সুড়ঙ্গটি কে বা কারা তৈরি করেছে তা এখনও জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের ১৩৯ ব্যাটেলিয়নের অফিসার প্রোমোদ।
বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু আনা-নেয়ার জন্য পাচারকারীরা এ সুড়ঙ্গ তৈরি করে থাকতে পারে বলে বিসএসএফ ধারণা করছে। তবে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি জানিয়েছে, এ ধরনের কোনও সুড়ঙ্গের কথা তাদের এখনও জানানো হয়নি।
বিজিবি’র সরাইল রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহিদ হাসান বলেন, সিলেট সীমান্তে সুড়ঙ্গের বিষয়টি তাদের জানা নেই। বিএসএফ তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি।
গত ২০ বছরে পাকিস্তান সীমান্তে অন্তত ছয়টি সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছে বিএসএফ। সবশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তের সাম্ভা এলাকায় একটি সুড়ঙ্গের খোঁজ মেলে। সে সুড়ঙ্গটি ২০ ফুট দীর্ঘ এবং আড়াই ফুট চওড়া ছিল।
মার্চের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সংলগ্ন মেঘালয় সীমান্তের কাছাকাছি ২০-২৫ ফুট গভীরে একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান মিলেছিল। সীমান্তের কাঁটাতার থেকে এর দূরত্ব ছিল ২০০ মিটারের মতো। এবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে সুড়ঙ্গ শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ সীমান্তে সুড়ঙ্গ শনাক্তের দাবি করল বিএসএফ।
বি এস এফের উত্তরবঙ্গ সীমান্ত এলাকার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "সুড়ঙ্গটা যেখানে শুরু হয়েছে, সেখানে এটি প্রায় সাড়ে চার ফুট উঁচু আর দুই ফুট চওড়া। পরের দিকে উচ্চতা একটু কমে গিয়ে প্রায় তিন ফুট মতো হয়েছে।' তিনি আরও জানান, “৮০ মিটার মতো সুড়ঙ্গটা ইতিমধ্যেই খোঁড়া হয়ে গেছে। সুড়ঙ্গটি এখনও সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি তবে সেটি কাঁটাতারের বেড়ার কাছাকাছি চলে গেছে।” এর সুড়ঙ্গের মতো সব সুড়ঙ্গের শুরু ভারত থেকে, এ প্রশ্ন সংগতভাবেই উঠছে। অন্যদিকে এ সুড়ঙ্গটির আয়তন দেখে বি এস এফের আধিকারিকদের মনে হচ্ছে মানবপাচার আর ফেন্সিডিলের মতো নিষিদ্ধ মাদক পাচারের জন্যই এই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছিল। তার মতে , “ওই এলাকায় গরু বা জাল ভারতীয় নোট পাচার হয় না। তাই সুড়ঙ্গ কেটে ওগুলো পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল বলে মনে হয় না। ফেন্সিডিল পাচারের একটা রুট আছে, মানব পাচারও হয়। সেজন্যই আমাদের ধারণা ওই দুটো কারণেই সুড়ঙ্গটা কাটা হচ্ছিল,' মন্তব্য এক বিএসএফ আধিকারিকের।

http://www.dailysangram.com/post/281465-