২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৭

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে

২৫ বছরে ব্যয় হবে ২ লাখ কোটি টাকা

ভারত থেকে অধিক দামে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিতব্য ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এ বিদ্যুৎ কেনা হবে। এ বিদ্যুৎ কেনা হবে ভারতের আলোটিত ‘আদানি’ গ্রুপের কাছ থেকে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ টাকা। যা দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ট্যারিফ মূল্যের চেয়ে বেশি। কয়লাভিত্তিক দেশীয় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড’-এর ট্যারিফ মূল্য থেকে ২৯ পয়সা বেশি।২৫ বছর মেয়াদি এ বিদ্যুৎ কেনায় বাংলাদেশের ব্যয় হবে এক লাখ ৯০ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা।
সচিবালয়ে গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
জানা গেছে, ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিতব্য ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সাথে ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। এ চুক্তির আওতায় ওই বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঝাড়খণ্ড কেন্দ্র থেকে আমদানি করা প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে আট দশমিক ৬১ সেন্ট। যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়াবে ছয় টাকা ৮৯ পয়সা।
সূত্র মতে, ঝাড়খণ্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ মূল্য যা বাংলাদেশী টাকায় দাঁড়াবে ছয় টাকা ৮৯ পয়সা, যা দেশীয় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘এস আলম পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড’-এর ট্যারিফ মূল্য থেকে ২৯ পয়সা বেশি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১০ এ ২০২১ সালের ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুতের এ বর্ধিত চাহিদা পূরণের সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তা ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশলও নির্ধারণ করছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে একটি প্রক্রিয়াকরণ কমিটি গঠন করা হয়। এ আইনের আওতায় গঠিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটির গৃহীত পরিকল্পনা ও প্রস্তাবগুলো কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০১৫ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সূত্র জানায়, আদানি পাওয়ার লিমিটেড ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মিতব্য ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি একটি কম্প্রিহেনসিভ টেকনো-কমার্শিয়াল প্রস্তাব ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে দাখিল করে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২০১০ সালে বিদ্যুৎ খাত সহযোগিতাবিষয়ক একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় আদানি পাওয়ার লিমিটেড কর্তৃক ভারতের যেকোনো উপযুক্ত স্থানে ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে ডেডিকেটেড অল্টারনেটিভ কারেন্ট (এসি) সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশে রফতানির উদ্যোগ নেয়। এ বিদ্যুৎ ক্রয়ের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) ও ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। ওই এমওইউর অধীনে আদানি পাওয়ার লিমিটেড কর্তৃক ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে বাংলাদেশ সীমানা পর্যন্ত নির্মিতব্য ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইনের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৬ সালে একটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে।
সূত্র জানায়, বিউবো, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) এবং কারিগরি কমিটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুস্পষ্ট মতামত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। বিউবো ২০১৬ সালের মার্চ মাসে বোর্ড সভায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০১৫ এর আলোকে ট্যারিফ নোগোশিয়েশনের সুপারিশ করে। পিজিসিবি ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে বগুড়া পর্যন্ত ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের আনুমানিক ১৪৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং আনুমানিক ৯০ কিলোমিটার ভারতের অভ্যন্তরে নির্মাণ করতে হবে। কারিগরি কমিটির সুপারিশে আদানি পাওয়ার লিমিটেড কর্তৃক ভারতের ঝাড়খন্ডে ২৮০০=১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণপূর্বক বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাবটি কারিগরি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় আর্থিকভাবে নির্বাচিত বলে মতামত দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/215464