২৬ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৮:৩০

যুদ্ধের সাজসাজ রব

কোরীয় উপদ্বীপে সাবমেরিন স্নাইপার প্লেন পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

কোরীয় উপদ্বীপে আবারও যুদ্ধের সাজসাজ রব উঠেছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই পাশের মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ত্রুক্রজ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ পারমাণবিক স্নাইপার প্লেনও পাঠিয়েছে দেশটি। গতকাল মঙ্গলবার দেড় শতাধিক ত্রুক্রজ

ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনটি যখন সিউলের বন্দরে পেঁৗছে, তখন সেনাবাহিনীর ৮৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালায় উত্তর কোরিয়া। মহড়ায় মোটাদাগে কামান দেগে সিউলকে হুঁশিয়ারি বার্তা দেয় পিয়ংইয়ং। হুমকি দিয়েছে, যুদ্ধ বাধলে উত্তর কোরিয়াও কাউকে ছেড়ে দেবে না। পারমাণবিক হামলা চালাবে তারা। তবে বসে নেই দক্ষিণ কোরিয়াও। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে গতকালই পাল্টা নৌ-মহড়া শুরু করেছে দেশটি। পাল্টাপাল্টি মহড়া চালিয়ে দু'পক্ষের এমন সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মধ্যে করণীয় নিয়ে হোয়াইট হাউসে পুরো সিনেটকে বৈঠকে ডেকেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ বুধবার শত সিনেটরের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ 'বিরল' বৈঠকে উত্তর কোরিয়ায় আগাম হামলা চালানোর বিষয়ে অনুমোদন চাইতে পারেন ট্রাম্প। এ ছাড়া টোকিওতে ত্রিদেশীয় বৈঠকে উত্তর কোরিয়াকে কঠোর শাস্তি দিতে একমত হয়েছেন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা। এদিকে, কোরীয় উপদ্বীপে সংকট প্রকট হওয়ার প্রেক্ষাপটে সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে চীন। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। খবর বিবিসি, সিএনএন ও ডেইলি মেইলের।

উত্তর কোরিয়া মঙ্গলবার তাদের সেনাবাহিনীর ৮৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। এ দিবসে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারেন_ এমন আশঙ্কার মধ্যে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সাবমেরিন ইউএসএস মিশিগান দক্ষিণ কোরিয়ায় পেঁৗছল।

ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ইউএসএস মিশিগান গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার বুশান নৌঘাঁটিতে পেঁৗছায়। সাবমেরিনটি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসনের নেতৃত্বাধীন রণতরী বহরের সঙ্গে যোগ দেবে; অংশ নেবে সামরিক মহড়ায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিচালিত ইউএসএস মিশিগানে ১৫৪টি টমাহক ত্রুক্রজ ক্ষেপণাস্ত্র আছে। একাধিক মিনি-সাবমেরিন আছে। আছে ৬০ জন বিশেষ অভিযানের সেনা।

কার্ল ভিনসনের নেতৃত্বাধীন রণতরী বহর আবারও কোরীয় উপদ্বীপের দিকে রওনা হয়েছে। বহরটি এরই মধ্যে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে পেঁৗছেছে।

তা ছাড়া কোরীয় উপদ্বীপে একটি স্নাইপার প্লেন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 'ডবি্লউসি-১৩৫ কনস্ট্যান্ট ফিনিক্স' নামে এই পারমাণবিক প্লেন পীতসাগর এলাকায় অবতরণ করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা জানায়, এই স্নাইপার প্লেন বাতাস থেকে নমুনা নিয়ে সেখানে কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা বা বিস্ফোরণ হয়েছে কি-না, তা শনাক্ত করতে সক্ষম।

এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংটায়েগে ওশান বিমানঘাঁটিতে প্রস্তুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউ-২ গোয়েন্দা বিমান ও এ-১০ হামলাকারী বিমান। যুদ্ধ শুরু হলে অগ্রগামী হয়ে হামলা চালাবে মার্কিন এয়ারফোর্সের এ-১০ যুদ্ধবিমান।

যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের এমন প্রস্তুতি সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করবে না। সরকারি ওয়েবসাইটে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ শুরু করলে তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে।

পাল্টাপাল্টি সামরিক মহড়া :উত্তর কোরিয়া সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশটির ওনসান অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু হয়েছে। অতীতে এমন আয়োজনে পিয়ংইয়ংকে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে দেখা গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া তাদের পূর্ব উপকূলে বড় ধরনের সামরিক মহড়া করছে। সেখান থেকে কামান দাগা হচ্ছে।

একই দিনে কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূলে পীতসাগরে পাল্টা যৌথ নৌ-মহড়া শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী জানিয়েছে, তারা কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিমের জলভাগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক মহড়া করছে। এ মহড়ায় শিগগির কার্ল ভিনসনের নেতৃত্বাধীন রণতরী বহর যোগ দেবে।

টোকিওতে ত্রিদেশীয় বৈঠক :টোকিওতে গতকাল উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা। বৈঠক সম্পর্কে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিম হুং কিউন বলেন, উত্তর কোরিয়া যদি উস্কানিমূলক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতেই থাকে, তবে দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বসছে নিরাপত্তা পরিষদ :ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করে ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়া বিশ্বের জন্য বড় হুমকি এবং এটা এমন সমস্যা, যা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে। তার এ আহ্বানের পর আগামী শুক্রবার উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

 

http://bangla.samakal.net/2017/04/26/288109#sthash.qZfPnSDa.dpuf