ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে অসুস্থ নূরনবীকে আদালতে হাজির করা হয় -যুগান্তর
২৫ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০৭

রোগীর পায়েও ‘ডাণ্ডাবেড়ি’

গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগানোর মামলার আসামি নূরনবী মণ্ডল (২৭) কারাবন্দি। আদালতের নির্দেশে তাকে শারীরিক ও মানসিক রোগী হিসেবে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে (ইএক্স-১৬)


চিকিৎসাধীন আছেন। মামলার নির্ধারিত ধার্য তারিখ থাকায় বুধবার নূরনবীকে ঢামেক থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এদিন বাঁ-হাতে ‘হাতকড়া’ ও পায়ে ‘ডাণ্ডাবেড়ি’সহ তাকে ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়।

ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতের এজলাসে আসামি হাজির করা যাবে না বলে চলতি বছরের ১৩ মার্চ আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে কারাগার থেকে আদালতে আসামি আনানেয়ার সময় নিরাপত্তার স্বার্থে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো যাবে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। এ ছাড়া পুলিশ প্রবিধানের ৩৩০ ধারায় বলা হয়েছে, হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ও অমর্যাদাকর। বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ, তাদের ক্ষেত্রে এমন কড়াকড়ি উচিত নয়।

১৯ এপ্রিল বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, আসামি নূরনবী মণ্ডলের বাঁ-হাতে হাতকড়া ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় নূরনবীর ডান হাতে লাগানো ছিল ‘ক্যানোলা’ (রক্ত বা স্যালাইন দিতে ব্যবহার করা হয়)। আর বাঁ-হাতের হাতকড়ার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তা হাতে ধরে রাখেন এক পুলিশ সদস্য। ওই অবস্থাতেই তাকে ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে পুলিশি পাহারায় তাকে আবার ঢামেকে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, ঢামেকে আসামির বেডের পাশে সার্বক্ষণিক একজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এরপরও হাসপাতালের বেডে নূরনবীর হাতে হাতকড়ার পাশাপাশি পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে। ওই অবস্থাতেই তাকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে আসামির চাচা আতাউর রহমান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, একজন সুস্থ মানুষকেও ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখলে সে অসুস্থ হয়ে যাবে। আর নূরনবী তো পুরোপুরি অসুস্থ।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে এজলাসে না তোলার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যদি এটা অমান্য করা হয়, তবে নিঃসন্দেহে তা হবে আদালত অবমাননা। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ হিরু যুগান্তরকে বলেন, নিরাপত্তার অভাবে আসামি পালিয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। হয়তো এ কারণেই আসামিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারই বলবেন যে আসামি ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর জন্য কতটা ফিট। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে, পুলিশ কাউকে ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে পারে না, এটা অমানবিক। আসামির সঙ্গে থাকা পুলিশ কনস্টেবল মোস্তফা বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাছে যেভাবে দেয়া হয়েছে, আমরা সেভাবেই আদালতে উপস্থাপন করেছি। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা জানা থাকলেও এ ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক যুগান্তরকে বলেন, শুধু পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে আসামিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে দিতে বলা হলেই ওই নির্দিষ্ট আসামিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া কাউকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয় না। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে পুলিশ ডাণ্ডাবেড়ি খুলে আসামিকে এজলাসে তুলবে। এ দায়িত্ব সম্পূর্ণ তাদের।

এ ব্যাপারে সূত্র জানিয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণে ডাণ্ডাবেড়ি খোলার কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে আসামিকে আনানেয়ার দায়িত্বে থাকা একজন এসআই, এএসআই কিংবা কনস্টেবলের ইচ্ছা থাকলেও তারা ওই আসামির ডাণ্ডাবেড়ি খুলতে পারছেন না। মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ ঢাকা নতুন ইপিজেডের সফটেক্স সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গোডাউনে আগুন লাগে। এতে ফ্যাক্টরির গোডাউনে থাকা সুতাসহ আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় আত্মঘাতী আগুন লাগানোর অভিযোগে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে এ মামলাটি করা হয়। নূরনবী এ ফ্যাক্টরির সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এ মামলায় চার্জশিট দাখিলের পর ইতিমধ্যে আসামি নূরনবীর বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেছেন আদালত। আগামী ২৯ মে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/04/25/119994/