২৫ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০০

সিলেটে বন্যায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি

সুনামগঞ্জের মতো সিলেটের হাওর এলাকায়ও এবার বোরো ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় গুড়িয়ে দিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র সিলেট জেলায় অকাল বন্যা ও ঢলে ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। হাওরে বাঁধ না থাকায়ই বৈশাখের ঢলেই সিলেটে হাওর অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে সুনামগঞ্জের মতো সিলেটের হাওর এলাকার দিকেও বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন হাওর এলাকার বাসিন্দারা। এপ্রিলের শুরু থেকে সাধারণত সিলেট অঞ্চলে বন্যা আঘাত হানে না। অকাল বন্যা হলেও সেটি মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়। কিন্তু এবার মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই সিলেটে শুরু হয় প্রবল বর্ষণ। একই সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢলও। সিলেটের উত্তর-পূর্ব এলাকায় রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা। এ কারণে সিলেটে বর্ষণ হলেই সিলেটের পানি তো থাকেই তার সঙ্গে এসে যুক্ত হয় ভারতের পাহাড়ি এলাকার পানি। ফলে টানা কয়েকদিনের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের আগেই আক্রান্ত হয় সিলেট। এবারের বর্ষণ ও অকাল বন্যায় সিলেটে বোরো ধানের পাশাপাশি শাক-সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে হাওরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় সিলেটের হাওর এলাকায় মাছের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে কেবলমাত্র সিলেটেই ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির কারণে আগামী ৬ মাস সিলেটের মানুষও নানা টানাপড়েনকে সঙ্গী করে চলতে হবে। সিলেট কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছেন, অকাল বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার সবক’টি হাওরের নিম্ন ও মধ্য এলাকার সকল বোরো ধান তলিয়ে গেছে। দুইদিনের ব্যবধানে চোখের সামনে এসব হাওর তলিয়ে যাওয়ায় ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি। কৃষক জানিয়েছেন, হাওরের বন্যা আঘাত হানে এপ্রিলের শুরুর দিকেই। যে সময় ঢল নামে সে সময় হাওরের ধানে ‘তোড়’ই আসেনি। সিলেট জেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। প্রথমে ওই জমির মধ্যে ৩৪ হাজার হেক্টরের বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও পরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সঠিক হিসাব তুলে ধরে জানায়, সিলেটে এবার ২৬ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরেও আংশিক কিছু ক্ষতি হয়েছে। আর অকাল বন্যার আগে সিলেটের তিনটি উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ৩৫৫ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। শিলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত তিনটি উপজেলার মধ্য রয়েছে বিয়ানীবাজার, সদর ও কোম্পানীগঞ্জ। এই তিনটি উপজেলায় এবার চৈত্র মাসেই অধিকমাত্রায় শিলাবৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হাশেম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটে আবাদ করা বোরো ধানের অর্ধেকের বেশি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। এর কারণ সিলেটের উঁচু জমিতেও বোরো ধান আবাদ করা হয়। আর যে ধানগুলো তলিয়ে গেছে সেগুলো হচ্ছে হাওরের ধান। অকাল বন্যায় হাওর তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সিলেটে বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও অতি বৃষ্টিতে মাঠে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার শাক-সবজির ক্ষেত। এসব ক্ষেতের অবস্থান উঁচু এলাকায় হলেও অতিবৃষ্টির কারণে সেগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এদিকে অতিবৃষ্টিতে শাক-সবজি তলিয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে সিলেটের বাজারেও শাক-সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে হাওরের পানি বিষাক্ত হওয়ার কারণেও সিলেটের হাওরগুলোতে মরেছে মৎস্য সম্পদ। সিলেটের ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ এলাকার হাওরে মারা গেছে মাছ। গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার মধ্যে পড়েছে হাকালুকি হাওরের একাংশের অবস্থান। সিলেট অঞ্চলে প্রথমেই হাকালুকি হাওরে বিষাক্ত পানিতে মাছে মড়ক দেখা দেয়। এতে করে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মৎস্য সম্পদের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। সিলেটের হাওর এলাকার পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারার বিশাল মৎস্য ভাণ্ডারের। যে সময়ে পানি বিষাক্ত হয়েছে সেই সময় ভাসমান পানিতে মাছের ডিম ছাড়ার কথা।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=62925&cat=2/