২৫ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৫৭

হাওরবাসীর নতুন সংকট বিশুদ্ধ পানি

জগন্নাথপুরের হাওরপাড়ের মানুষের দুর্দিন যেন শেষ হচ্ছেই না। শুধু বেড়েই চলছে। ধান গেল, মাছ গেল, এবার বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ধানগাছ পচে হাওরের পানি দূষিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র দুর্গন্ধ। ফলে হাওরবাসীর খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজেও এখন তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। গত রোববার নলুয়ার হাওরের তীরবর্তী হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ফসলডুবির পর গত ১৬ই এপ্রিল হাওরের ধান পচে বিষাক্ত অ্যানোমিয়া গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে হাওরের মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠে। ধানগাছ পচে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। দূষিত হয়ে যায় হাওরসহ নদ-নদী, খাল ও বিলের পানি। বিষাক্ত পানি পান করে হাঁসের মড়ক দেখা দিচ্ছে বলেও তারা জানান। এ মুহূর্তে হাওরবাসীর বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

নলুয়া হাওরপাড়ের বাসিন্দা উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ভুরাখালি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাসিম জানান, ফসলডুবির পর কৃষকদের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল হয়ে উঠে হাওরের মাছ। ধান পচে পানি বিষাক্ত হয়ে বিষক্রিয়ায় মাছও মরেছে। ধানগাছ পচে হাওরের পানি দূষিত হওয়ায় খাওয়ার পানি আমাদের জন্য দুরূহ হয়ে উঠেছে। একই গ্রামে কৃষক আসমান উল্লাহ জানান, হাওরের অধিকাংশ মানুষ খাওয়ার জন্য, গোসল করাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে হাওরের পানি ব্যবহার করেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। দূষিত পানিতে অনেকই গোসল করছেন। আবার কেউ কেউ হাওরের পানিতে গোসল করছেন না। গ্রামের দূরবর্তী একটি বাড়ি থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছি।
কৃষক আসলাম উল্লাহ জানান, পর পর তিন বছর ধরে ফসল পাইনি। খুবই অভাবের মধ্যে আছি। ধার কর্জ করে সংসার কোনোমতে চালাচ্ছি। দুঃখ, কষ্ট আমাদের পিছু ছাড়ছেই না। আল্লাহপাকই জানেন কবে কষ্ট শেষ হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান জানান, হাওরপাড়ের মানুষের শুধুই দুঃসংবাদ শুনা যাচ্ছে। ধান পচে পানি দূর্ষত হওয়ার পর এখনো বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও হাওরের দূষিত পানি খেয়ে হাঁস মুরগির মড়ক দেখা দিচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। গত শনিবার উপজেলার মইয়ার হাওরের পানি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন মৎস্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল। বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান নেতৃত্বদানকারী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসান স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, জগন্নাথপুরের হাওরগুলোতে অ্যামোনিয়া গ্যাস কমে গেছে এবং পানি স্বাভাবিকের কাছে পাওয়া গেছে। পানির দূষণও কমেছে। আশা করছি আর মাছ মরবে না। বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রমজান আলী, সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শংকর রঞ্জন দাস, জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহিদুল আবরার, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কামরুল আহমদ খান প্রমুখ।
জগন্নাথপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কামরুল আহমদ খান জানান, জগন্নাথপুরের হাওরগুলোতে হাঁসের মড়ক নেই। তবে একটি খামার পরিদর্শন করে দেখেছি, ওই খামারের ১৬০০ হাঁস বিষক্রিয়ায় মারা গেছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=62843&cat=6/