২৫ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৪৭

বিপন্ন মানুষের পাশে নেই হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তর

অপ্রত্যাশিত আগাম বন্যায় হাওরের মানুষ দিশেহারা। শস্য হারিয়েছেন। মাছ মরে শেষ। শত চেষ্টাতেও রক্ষা করা যাচ্ছে না বাঁধ। হাওরের বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে, হাওরবাসীর উন্নয়নে সরকারের একটি অধিদপ্তর রয়েছে। অধিদপ্তরটির নাম 'বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর'। কিশোরগঞ্জের তারাপাশা এলাকায় অধিদপ্তরটির আঞ্চলিক কার্যালয়। কিন্তু বর্তমানে বিপন্ন হাওরবাসীর পাশে এ কার্যালয়ের কাউকে পাওয়া যায়নি। আঞ্চলিক কার্যালয়টি পরিদর্শন করে বরং পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র। নামে অফিস থাকলেও কাজ নেই এখানকার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর।


গতকাল সোমবার সকালে আঞ্চলিক কার্যালয়টি পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, কার্যালয় চত্বরে জামাকাপড় শুকানো হচ্ছে। দেখলে মনে হয়, এটি অফিস নয়, ধনী কোনো মানুষের বাড়ি। অফিস চত্বরে প্রবেশ করে একটু এগিয়ে দেখা যায়, অফিসের কক্ষগুলো তালা দেওয়া। এমনকি অফিস ভবনে প্রবেশের প্রধান ফটকেও তালা ঝোলানো। অফিসের পাশেই স্টাফ কোয়ার্টার। কোয়ার্টারগুলোরও দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পর একজন লোক বেরিয়ে আসেন। তিনি ওই অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ইকবাল হোসেন মিয়া। জানালেন, আবাসিক কোয়ার্টারে কাজে ব্যস্ত ছিলেন।


পরে বেলা ১১টার দিকে অফিস ভবনের প্রধান ফটক খোলা হয়। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সব কক্ষের টেবিল-চেয়ারে ধুলাবালির স্তূপ। বিশ্রামকক্ষের সোফাগুলোও একই অবস্থায়। সেখানে বসার উপায় নেই। কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আজিজুর রহমান। খুব দাপুটে মানুষ। ওই অফিসের ফুটেজ সংগ্রহ করার সময় গতকালই তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তবে আজিজুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কার্যালয়টিতে আটটি কক্ষ রয়েছে। সব কক্ষে গতকাল তালা ঝুলতে দেখা গেছে। দুটি কক্ষের জানালা খোলা। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকালে দেখা যায়, একটি টেবিল ও তিনটি চেয়ারে বালুর স্তূপ। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জানালেন, অফিসে একটি কম্পিউটারও নেই।


অপারেটর ইকবাল হোসেন মিয়া আরও জানান, কিশোরগঞ্জে ২০০০ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর হাওর উন্নয়ন বোর্ড অফিস নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১৬ সালে এটিকে 'বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর' অফিস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি ছাড়া ওই কার্যালয়ে উপপরিচালক পদে ড. মো. নুরুল ইসলাম, অফিস সহকারী পদে উমায়ের হোসেন ও নৈশপ্রহরী পদে রয়েছেন মো. আজিজুর রহমান।


গতকাল পরিদর্শনের সময় উপপরিচালক ড. মো. নুরুল ইসলামকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জানান, স্যার (উপপরিচালক) ঢাকায় থাকেন। মাঝে মধ্যে এ অফিসে আসেন।


এলাকাবাসী জানান, ওই উপপরিচালককে দু-একদিন দেখেছেন তারা। মূলত ওই অফিসের কোনো কর্মকাণ্ড না থাকায় অফিস সহকারী উমায়ের হোসেনসহ অন্য দু'জন অফিস দেখভাল করেন। মাস শেষে বেতন নেওয়া ছাড়া তাদের অন্য কোনো কাজও নেই।


ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জানান, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর থেকে তিনি এ কার্যালয়ে কাজ করছেন। লোকবল না থাকায় অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ঢাকার বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে। তার কাছে হাওর সম্পর্কে কোনো তথ্য আছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি জানান-নেই।


উপপরিচালক ড. মো. নুরুল ইসলামকে কার্যালয়ে না পেয়ে তার মোবাইলে ফোন করলে তিনি জানান, ঢাকায় গ্রিন রোডে প্রধান কার্যালয়ে রয়েছেন। কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক কার্যালয়ে ওই পদে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আঞ্চলিক কার্যালয়টিতে এখনও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়ায় কার্যক্রমও নেই। এর জন্য প্রয়োজনীয় আইনও তৈরি হয়নি। তিনি আরও জানান, ঢাকা অফিসে বসে তিনি হাওরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করছেন।


কিশোরগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি ঊষা রানী দেবী জানান, এ আঞ্চলিক কার্যালয়টির কোনো কাজ নেই। কার্যালয়টি যেন বিপন্ন হাওরবাসীকে উপহাস করছে। অথচ কথা ছিল, এ কার্যালয়টির আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ানোর।

 

http://bangla.samakal.net/2017/04/25/287917#sthash.xy550pGb.dpuf