২৩ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ৯:২৬

১১ গুলীবিদ্ধসহ আহত ২৫

শরীয়তপুরের গঙ্গানগর বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় ককটেল বিষ্ফোরণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও গুলীবিনিময়ের ঘটনা ঘটায়। এ সময় ১১ জন গুলীবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় দীপু কাজী নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। দুই গ্রুপের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গঙ্গানগর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলার শৌলপাড়া, জয়নগর ও মুলনা ইউনিয়নের সিমান্তবর্তী এলকার গঙ্গানগর বাজারে। সংঘর্ষকালে গুলীর ঘটনা অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা মিথুন ঢালী বলছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তার সম্মান ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। এ খবর লেখা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।

জাজিরা থানা, সুরুজ মোল্যা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম মিন্টু কাজী ও ঢাকা তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও জাজিরা উপজেলার মূলনা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মিথুন ঢালীর সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ চলে আসছিল। এ ছাড়াও মিন্টু কাজীর সর্মথক শৌলপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সুরুজ মোল্যা ও মিথুন ঢালীর সমর্থক একই ওয়ার্ডের আওয়াম লীগের সভাপতি মজিবর মোল্যার সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মিথুন ঢালী ও তার ভাই শরীয়তপুর জেলা পরিষদের সদস্য সুজন ঢালীর সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে স্থানীয় গঙ্গানগর বাজারে মিন্টু কাজীর সমর্থকদের উপর হামলা করে প্রকাশ্যে গুলী বর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেছে মিন্টু কাজীর সর্মথকরা। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের সময় মিথুন ঢালীর সমর্থকরা ও মিথুন ঢালী তার লাইসেন্সকৃত শর্টগান দিয়ে এলোপাথারি গুলী করলে মিন্টু কাজী গ্রুপের সমর্থক দিপু কাজী, শাহনাজ কাজী, সোহাগ মুন্সি, খালেক সিকদার, সজিব মিয়া, সৈকত মুন্সি, সোরহাব কাজী, মন্নান কাজী, বাবুল মুন্সি, সায়েদ কাজী, শহীদুল ইসলাম মাদবর গুলীবিদ্ধসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ২৫ মারাত্মক আহত হয়। আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে গুলীদ্ধি দীপু কাজীকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারের হালেম বেপারী, হামেদ মাদবর, দোলন কাজী, সিরাজ কাজী, আবু বকর কাজীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও কোপানো হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত গঙ্গানগর বাজারের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
গুলীবিদ্ধ মন্নান কাজী বলেন, মিথুন ঢালী ও তার ভাই সুজন ঢালীসহ অপরিচিত কয়েকজন মিলে আমাদের উপর গুলী চালিয়েছে। এতে আমাদের ১১ জন গুলীবিদ্ধ হয়।
জয়নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম মিন্টু কাজীর বড় ভাই বাবলু কাজী বলেন, ঢাকা তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক মিথুন ঢালী তার সমর্থকদের নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় মিথুন ঢালী প্রকাশ্যে সর্টগান দিয়ে আমাদের লোকজনের উপর গুলী চালায়। এতে আমাদের ১১জন গুলীবিদ্ধ হন।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক মিথুন ঢালী বলেন, আমি স্থানীয় কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। মিন্টু কাজী ও তার সমর্থকরা আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ষড়যন্তমূলক মিথ্যা অপ প্রচার করে আমার সম্মান ক্ষুন্ন করতে চাচ্ছে।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন গুলীবিদ্ধ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এখনো কোন মামলা হয়নি।

 

http://www.dailysangram.com/post/280916-