২৩ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ৯:১২

ইউরেনিয়াম পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ দল

জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে এখন সুনামগঞ্জের মানুষ। শত বছরেও এ রকম বিপর্যয়ে পড়েনি এ অঞ্চলের মানুষ। পরিবেশ খাদ্য অর্থসহ সব ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে হাওরের জলজ উদ্ভিদ সহ নানা প্রজাতির প্রাণী। এতে চরম দুর্ভোগ ও দূর্গতিতে পড়েছেন হাওরপাড়ের লাখ লাখ মানুষ। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়বে এ অঞ্চলের মানুষ। বাঁচার তাগিদে ও কাজের সন্ধানে দুর্ভোগ ও দুর্গতি থেকে রক্ষা পেতে গ্রাম ছাড়ছেন অনেকেই।

এরই মধ্যে হাওরের দূষণ পরীক্ষা করতে ঢাকা থেকে এসছে বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল। তারা সবাই পঁচা ধান থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি পেয়ে পানির দূষণ হয়েছে বলে জানান। তবে ইউরেনিয়ামের ব্যাপারে তারা তেমন কিছু বলতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র থেকে একটি প্রতিনিধি দল পানিতে ইউরেনিয়াম আছে কি না তা পরীক্ষা করতে আসছে বলে একটি সূত্র জানায়।
ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরে মাছ ও জলজপ্রাণীর অস্বাভাবিক মড়ক এবং পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গবেষকদল হাওরে কাজ শুরু করেছে। দু’টি দল বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে জানিয়েছে এমোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি, অক্সিজেন ও পিএইস অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে এবং পানি দূষিত হচ্ছে। পানিদূষণ রোধে মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি উপজেলায় চুন ও জিওলাইট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবার থেকে এই বিষয় নিয়েই হাওরে গবেষণায় নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর মনিরুজ্জামান এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল। তারা বলছেন, অ্যামোনিয়ার কারণেই পানি দূষণ হয়েছে। তারা পানিতে কোন রকমের ইউরেনিয়াম নেই বলে জানান। এটা শুধু গুজব বলে তারা মন্তব্য করেন। হাওরের ফসল পচে গিয়ে মাছসহ জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করবেন এই দলের প্রতিনিধিবৃন্দ। তারা সঙ্গে পরীক্ষার জন্য নানা যন্ত্রপাতিও নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ হোসেন খান বলেন, হাওরের পানি পরীক্ষা ও মরা মাছ পরীক্ষা করে প্রাথমিক কারণ হিসেবে আমরা দেখেছি হাওরে অস্বাভাবিক অক্সিজেন কমে যাওয়া এবং মাত্রাতিরিক্ত এমোনিয়া গ্যাসের আধিক্য। অন্য কোন কারণ আছে কি না তা জানতে আরো বিশেষ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার দরকার। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১৫-২০ দিন লাগতে পারে।
এদিকে একই সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে পচা ধান ডুবে যাওয়ার কারণে পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেছে। এমোনিয়া গ্যাস ও পিএইস এর মাত্রা বৃদ্ধি এবং অক্সিজেন অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার কারণেই মাছ মরে যাচ্ছে এবং পানি দূষিত হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপ-পরিচালক মো. রমজান আলী বলেন, হাওরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় মাছ খেতে জনসাধারণকে নিষেধ করেছি। এছাড়াও মৎস্য প্রজননের কথা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

হাওরে ৫০ টন মাছ মরে গেছে
এদিকে অকাল বন্যায় ধান পচে সৃষ্ট গ্যাসে সুনামগঞ্জের হাওরাগুলোতে ৫০ টন মাছ মরে গেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসান। শুক্রবার সুনামগঞ্জের মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর, করচার হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর পরির্দশন শেষে সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। সৈয়দ মেহেদী বলেন, ‘শুক্রবার দিনভর আমাদের একটি প্রতিনিধি দল সুনামগঞ্জের হাওরগুলো পরিদর্শনের পাশাপাশি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে আমরা পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করেছি। সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে ৫০ মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। হাওরে তলিয়ে যাওয়া ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে। এ গ্যাসের কারণে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মওে গেছে। টানা বৃষ্টিপাত হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” মাঠিয়ান হাওর ও শনির হাওরে পানি স্বাভাবিক বলেও জানান তিনি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=62585&cat=3/