২৩ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ৮:৪৩

হাওড়ে মড়ক : যথাযথ পরীক্ষা প্রয়োজন

হাওড়ে ধানের পর মাছ এবং এখন মরতে শুরু করেছে হাঁস। হাওড়বাসীর সারা বছরের জীবিকার অবলম্বনগুলো শেষ হতে চলেছে। আর পরিবেশগত মারাত্মক বিপর্যয় তাদের শঙ্কার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, পচা ধান ও মাছের উৎকট গন্ধ হাওড় এলাকা ছাপিয়ে জনবসতিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত দুই দিনের বৃষ্টিতেও দূষণের মাত্রা ও গন্ধ কমছে না। এমন অবস্থায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সরকারি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা ধান পচে এই গন্ধ হচ্ছে। ধান পচার কারণে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমেছে এবং বেড়েছে অ্যামেনিয়া গ্যাসের পরিমাণ। ফলে হাওড়ের মাছ মরে যাচ্ছে।

শুধু কাঁচা ধান পচেই কি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, নাকি রয়েছে অন্য কোন কারণ? এমন প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার সকালে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল হাওড় এলাকায় এসেছেন। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়, মাটিয়ান হাওড় ও খরচার হাওড়ের পানি দূষিত হয়ে মারা যাওয়া মাছসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছে দলটি। উল্লেখ্য যে, গত মার্চে আকস্মিক বৃষ্টি ও মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওড় এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সেখানকার ধান বিনষ্ট হয়। ফসল নষ্ট হওয়ার পর হাওড়ে মাছ, ব্যাঙ এবং হাঁসের মড়ক হাওড় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইউরেনিয়াম খনি থেকে বিষাক্ত উপাদান হয়তো ঢলের পানিতে মিশেছে এবং ওই পানি হাওড়ে এসে জমেছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে রয়েছে ওপেনপিট ইউরেনিয়াম খনি। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের রসায়ন বিভাগের প্রধান ড. বিলকিস আরা বেগম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভারত থেকে ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানি বাংলাদেশের হাওড়গুলোতে আসার সম্ভাবনা অনেক। আর যদি তাই ঘটে থাকে তাহলে আমাদের জন্য বিষয়টি খুবই বিপদজনক হবে। তবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সিলেট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেছেন, হাওড় অঞ্চলের জলজ প্রাণীদের এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে ইউরেনিয়ামের সংযোগ থাকতে পারে। যদি ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানি হাওড়ে এসে পড়ে তাহলে তা আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ভারতের ইউরেনিয়াম খনির সঙ্গে হাওড়ের জলজ প্রাণীর মৃত্যুর সম্পর্ক থাকার যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে তার কারণ রয়েছে। খোদ মেঘালয়েই সেখানকার ইউরেনিয়ামের মাধ্যমে পানি দূষণের অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য যে, গত ডিসেম্বরে মেঘালয়ে স্থানীয় খাসি জনগোষ্ঠী সেই এলাকার রানীকর নদীর পানির রং নীল থেকে বদলে সবুজ হয়ে যেতে দেখেন। এ নিয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (কেএসইউ) সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সংগঠনটি নদীর মাছ মরে যাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করে। অবশ্য মেঘালয় রাজ্য সরকার বলেছে, তাদের রাজ্যে মাছ মারা যাওয়ার ঘটনাটির সঙ্গে ইউরেনিয়াম খনির কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমরা মনে করি, অভিযোগ ও আশঙ্কার কথা যখন প্রকাশ করা হয়েছে তখন বিষয়টি তদন্ত ও পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যেমন সঙ্গত নয় তেমনি কোন অভিযোগ বা আশঙ্কাকে তদন্ত বা পরীক্ষা ছাড়া ফেলে রাখাও সমীচীন নয়। সিলেটের হাওড় এলাকায় জলজ প্রাণীর সড়ক ও পরিবেশ বিপর্যয়ের যে চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা খুবই মারাত্মক। ওই এলাকার জনগণের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির সম্মুখীন। জনমনে আতঙ্কের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। তাই আমরা মনে করি জনগণের বেঁচে থাকার সংগ্রামে সরকারের যেমন সহযোগিতা প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন মড়ক ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ উদঘাটন। আমরা আশা করবো এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও পরীক্ষা হবে এবং জনগণ তা জানতে পারবে।

http://www.dailysangram.com/post/280910-