২৩ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ৮:৩৯

বিরোধী দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত

হয়রানি নয়, কাজের সুযোগ দিন

স্থানীয় সরকারে বিপুলসংখ্যক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এখন দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বিরোধী দল সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার কারণ দেখিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে এবং তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় সব উপজেলাতেই একাধিক জনপ্রতিনিধিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় অভিযোগপত্র দেয়ার পরপরই বরখাস্ত করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা করা হয়েছিল। এসব মামলায় বিরোধী দল সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরাও আসামি ছিলেন। এখন এসব মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মতো সিটি করপোরেশনের মেয়রদেরও বরখাস্ত করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে তারা দায়িত্ব পালনের অনুমতি পেলেও কাজ করতে পারছেন না। কারণ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কার্যত বিরোধী দলের এই নির্বাচিত মেয়ররা কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারছেন না। সর্বশেষ, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কুমিল্লার নির্বাচিত মেয়র এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। এই জনপ্রতিধিকেও হয়তো বরখাস্ত করা হবে।
একের পর এক জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করার কারণে সাধারণ মানুষের স্বার্থে স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব পালনে সুযোগ থাকছে না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে থাকছে না কোনো জবাবদিহিতা।
রাজনৈতিক মামলার কারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অব্যাহতি দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অব্যাহতি দেয়ার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও কোথাও বিরোধী দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে স্থানীয় সরকারে কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। নির্বাহী বিভাগ বা স্থানীয় সরকারকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের দমনের অন্যায় প্রক্রিয়া স্থানীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে তুলছে। সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
আমরা মনে করি, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক এসব মামলা প্রত্যাহার তথা হয়রানি বন্ধ করে তাদের সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া উচিত। এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শুধু শক্তিশালী হবে না, জনগণের মতামতের প্রতি সম্মানও দেখানো হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/214224