গতকালের টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ব্যাপক পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকা থেকে তোলা ছবি
২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১১:৪১

টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ব্যাপক পানিবদ্ধতা ॥ নগরবাসী চরম দুভোর্গে


গতকাল শুক্রবার ভোররাত থেকে প্রবল বর্ষণে প্রায় অচল হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের জনজীবন। ব্যাপক পানিবদ্ধতায় চরম বিপাকে পড়ে নগরবাসী। নগরীর বেশীরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে ছিল। বাড়িঘর, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয়। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। গভীর রাত থেকে শুরু হয় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। প্রবল বৃষ্টিতে থইথই করছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়ক। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে পানির তোড় পথচারী সমস্যায় ফেলে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর আবার কোথাও ছিল বুক সমান পানি। বৃষ্টির সময় কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার থাকায় পানিবদ্ধতা আরও বেড়ে যায়। দুপুর একটার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১শ' ৪৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন পতেংগা আবহাওয়া অফিস। কালবৈশাখীর সঙ্গে ভারিবর্ষণ আজ শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ভারিবর্ষণ অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধস হতে পারে বলেও আশংকা করছে আবহাওয়াবিদরা। সকাল থেকে পানিবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর, নাসিরাবাদ, কাতালগন্জ, চান্দগাও, বহদ্দারহাট, মোহরা, বায়েজীদ বোস্তামী এলাকা, অক্সিজেন, প্রবর্তক মোড়, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়া, ডিসি রোড, মিঞাখান নগর, আগ্রাবাদ, কমার্স কলেজ রোড, মোগলটুলী, পশ্চিম মাদারবাড়ী, হালিশহর ছোটপুল, বড়পুল, পোর্ট কানেকটিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, শান্তি বাগ, বেপারীপাড়া, মুহুরী পাড়া, রংগীপাড়া, শ্যামলী আবাসিক, নয়াবাজার, রামপুরা, ছোটপুল, ফইল্লাতলী, পাথরঘাটা, রেয়াজউদ্দিনবাজার, তিনপোলের মাথা, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাইসহ বিভিন্ন নীচু এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় এগুলো বিকল হয়ে পড়ে। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়।
টানা দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা এলাকার বিভিন্ন দোকানপাট, বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এসব এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। চকবাজার কাঁচাবাজারে ছিল কোমর সমান পানি। চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম জানান, অপরিকল্পিত নালা-নর্দমার সংস্কার কাজ করার ফলে এখানকার মানুষ পানিবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে অথচ এ সংস্কার কাজের সুফল পাচ্ছে না এখানকার বাসিন্দারা। টানা বৃষ্টিতে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়েও পানি জমে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন জানান, তাদের মাঠে প্রায় তিন ফুট পানি জমেছে। গ্যারেজ, ফুয়েল রুম, প্রশাসনিক ভবনেও পানি ঢুকেছে। মাঠে রাখা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রমেও জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন জসীম।
জুবিলী রোডের ব্যবসায়ী শহীদুল হক জানান, সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টিতে তিনপোল এলাকা, রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় প্রচুর পানি উঠেছে। এতে বিভিন্ন দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে। নালা নর্দমা সিটি কর্পোরেশন ঠিকমত পরিষ্কার না করায় এ দুভোর্গ ব্যবসায়ীদের। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বাসিন্দা চেমন আরা সামু জানান, সকাল থেকে বৃষ্টিতে অলিগলি থেকে শুরু করে বাসাবাড়ী পানিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে। বেশীরভাগ বাড়ির নীচতলার বাসিন্দাদের মালপত্র নষ্ট হয়েছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, বর্ষার আগে সিটি কর্পোরেশন খালগুলো খনন না করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ষোলশহর এলাকায় চশমাখাল দিয়ে প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি নামতে দেরী হয়। চাক্তাইখালের বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করাতে পানি নামতে পারছে না। চকবাজার দেওয়ানবাজার এলাকার চাক্তাইখালের অবস্থা শোচনীয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে। পানিবদ্ধতা নিরসনে চসিক, চবক, সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করলে নগরবাসী এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেত বলে বলছে নগরবাসী।

জানা গেছে, বন্দরনগরীতে ৩৪টি বড়ছোট খাল আছে। অনেকখাল বেদখল হয়ে গেছে। কিছু নাব্যতা হারিয়েছে। অনেকখাল দখল করে ফেলা হয়েছে। পাহাড় থেকে বালি নেমে নালা নর্দমা বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সিডিএর উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এগুলোর আবর্জনা নালা নর্দমায় গিয়ে পড়ছে। পানি চলাচলের স্বাভাবিকতা হ্রাস পাচ্ছে। এতে অল্প বৃষ্টি হলে নগরীতে পানিবদ্ধতা বাড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের নামে কর্ণফুলী নদীকে গত কয়েকবছর আগে নগরীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়া পর্যন্ত অংশ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিত ভরাট করে নদীর প্রবাহকে নষ্ট করে দিয়েছে। নদীর প্রশস্থতাকে সংকুচিত করা হয়েছে। এতে নগরীর পানি নামতে বিভিন্ন পয়েন্টে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ডুবে যায়। মহেষখালের এক অংশে বাঁধ দেয়ায় নগরীর হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে চবকের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তারা বলছে, টানা বর্ষণের সময় কর্ণফুলী নদীতে পূর্ণ জোয়ার থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে দেরী হওয়াতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগ কাজ করছে সাধ্যমত। মেয়র এ দুটি বিভাগকে পানি সরাতে যা যা করণীয় তা করতে বলেছেন।

http://www.dailysangram.com/post/280724