২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১১:৩৪

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগে লাখো মানুষ

চট্টগ্রামে প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে শহরের অলিগলি। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নগরজুড়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে থেমে থেমে তা গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্দর নগরীর লাখ লাখ মানুষ। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। গ্যাস সংযোগ বন্ধ। বন্ধ রয়েছে বন্দরে পণ্য উঠানোনামানোর কাজও। চরমে পৌঁছেছে ভোগান্তি। চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা সচেতন নগরবাসীর।


সরজমিন দেখা গেছে, শহরের অন্তত ছোট বড় ৪০ এলাকায় জমে গেছে বৃষ্টির পানি। এতে তলিয়ে গেছে বেশিরভাগ জায়গা। হাঁটুপানি থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় কোমর পর্যন্ত পানি উঠে গেছে।
সরজমিন গতকাল পানিবন্দি হওয়া বেশিরভাগ এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সারা দিনের বৃষ্টিতে অনেকে বাসা থেকে বের হতে পারেননি। এতে খাবার সংকটে বেশিরভাগ বাসিন্দাকে ভুগতে হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক নিচু এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমেছে। কোথাও গলা সমান পানিও হয়েছে। অনেক এলাকায় বাসা-বাড়ির নিচতলা ও দোকানে পানি ঢুকে গেছে। অধিক পানি জমে যাওয়ায় রাস্তায় বন্ধ রয়েছে বড় গাড়ির চলাচল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমর সমান পানিতে রিকশা ও ভ্যানে করে যাতায়াত করেন কেউ কেউ।
টানা বৃষ্টিতে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়েও পানি জমে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন বলেন, কার্যালয়ের মাঠে প্রায় তিন ফুট পানি জমেছে। গ্যারেজ, ফুয়েল রুম, প্রশাসনিক ভবনেও পানি ঢুকেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর কাদার আস্তরণ পড়ে গেছে।


এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বলেন, ‘একযোগে উন্নয়ন কাজ চালাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। ওয়াসার পাইপ লাইনের কাজ চলছে। সিডিএ-র ফ্লাইওভার নির্মাণ চলছে। জাইকার সহায়তায় সিটি করপোরেশনও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছে। নালা পরিষ্কার করলেও এসব উন্নয়নযজ্ঞের কারণে আবার ভরাট হয়ে যায়। যার কারণে পানি আটকে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।’
নগরীর বিভিন্ন এলাকা সকাল থেকেই ছিল বিদ্যুৎবিহীন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পতেঙ্গা কার্যালয়। সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, কালবৈশাখীর সঙ্গে ভারিবর্ষণ শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এজন্য কোনো সংকেত দেখাতে বলা হয়নি।
নগরীর ষোলশহর, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, হালিশহর, বিবিরহাট, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, চান্দগাঁও, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। একই রকম চিত্র দেখা গেছে কাপাসগোলা, কেবি আমান আলী রোড, বাকলিয়া সৈয়দ শাহ রোড, রাহাত্তারপুল, বাকলিয়া, পুরাতন চান্দগাঁও থানা, বহদ্দারহাট ফরিদেরপাড়া, মোহাম্মদপুর, সুন্নিয়া মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায়ও।


সিডিএ এভিনিউ রোডের ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড় থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত এবং আরাকান রোডের পুরাতন চান্দগাঁও থানার সামনের রাস্তায় পানি জমে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। এতে সড়কের উভয়পাশে যানজট দেখা দেয়।
জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জেও। সেখানকার বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে লেনদেন।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যা বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজ শনিবারও দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।


ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগে দুঃখ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা একদিনের নয়। এটি এ শহরের ১৫-২০ বছরের সমস্যা। এটা রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। তবুও জলাবদ্ধতা নিরসনে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছি। যার কারণে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ভারিবর্ষণের পাশাপাশি উপচেপড়া জোয়ারের কারণে পানি বেশি হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তৎপরতার কারণে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি নেমে গেছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=62487