২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১১:২৫

রিং বাণিজ্যের মধ্যস্বত্বভোগী হাসপাতাল!

‘হার্টের রিং নিয়ে কেবল বিক্রেতারাই রোগীদের কাছ থেকে বেশি অর্থ আদায় করছে? হাসপাতালগুলো তো রীতিমতো বড় মধ্যস্বত্বভোগী। আপনারা শুধু আমাদের ব্যবসার দিকটাই দেখছেন কেন? কোনো কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল তো আমাদের কাছ থেকে রিং নিয়ে বিনা চালানে আমাদের চেয়েও বেশি লাভ করে!’ হৃদযন্ত্রের রিং (করোনারি স্টেন্ট) নিয়ে গত দুই দিনে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যবসায়ী গতকাল শুক্রবার দুপুরে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিনা চালানে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর লাভের বিষয়টি পরিষ্কার করতে বললে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘কোনো রোগীর জন্য রিং দরকার হলে হাসপাতাল থেকে আমাদের কল করা হয়। আমাদের লোক গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় রিং দিয়ে আসে। আমাদের বেশির ভাগ কম্পানিই হাসপাতাল থেকে এই রিংয়ের জন্য আগাম বা নগদ কোনো টাকা নেয় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর কাছ থেকে তাদের নির্ধারিত হারে টাকা আদায় করে সেখান থেকে নিজেরা একটা বড় অংশ রেখে আমাদের বিল পরিশোধ করে। আমরা এ ক্ষেত্রে অনেক সময় হাসপাতালের সঙ্গে ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখার তাগিদে দাম কমিয়েও রাখি। কিন্তু এখন সরকারের এমআরপি পদ্ধতি কার্যকর হলে আমাদের চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে অনেক হাসপাতাল ও ডাক্তারের। ফলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এমআরপি নির্ধারণের সিদ্ধান্তে তারা অনেকটা নাখোশ। ’
আসলেই হাসপাতালগুলো রিং বাণিজ্যের অনৈতিক মধ্যস্বত্বভোগী কি না জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. রুহুল আমিন এক বাক্যে তা স্বীকার করেন। তিনি আরো যুক্ত করে বলেন, ‘হাসপাতাল তো রোগীর কাছ থেকে কত ধরনের সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকে। তার পরও দীর্ঘদিন ধরেই রিংসহ অন্য সব ডিভাইসের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকায় রয়েছে। এ কারণেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে দর্শনীয় স্থানে নতুন নির্ধারিত মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ রিংয়ের প্যাকেটের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকবে একই আইটেমের ক্ষেত্রে ওই দামই দেবে রোগীরা। কোথাও এর হেরফের হতে পারবে না। ’

কয়েক দিন ধরে রিং নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির পর আজ শনিবার থেকে সরকারিভাবে নির্ধারিত এমআরপি বা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। অধিপ্তরের পরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত মোট ৩৭টি আইটেমের রিংয়ের ওপর এমআরপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর এসংক্রান্ত চিঠি এরই মধ্যে ২৭টি হাসপাতালে চলে গেছে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে মূল্যতালিকা টানিয়ে দিতে। বাকিগুলোতেও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
আজ হাসপাতাল খোলা থাকলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বন্ধ থাকায় হাসপাতালে হাসপাতালে তালিকা ঝোলানোসহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দৃশ্যমান করতে আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় সব রিং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন আইটেমের রিংয়ের এমআরপি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে। ফলে অনুমোদিত আইটেমের কোনোটিই ওই দামের বাইরে দেশের কোথাও বিক্রি করা যাবে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে শাহীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। শনিবার থেকেই এমআরপি কার্যকর অনুসরণ করব। ’
এখন আমদানি করা রিংয়ের ইনভয়েসে থাকা মূল্যের সঙ্গে লাভ হিসাবে ১.৫৫ শতাংশ যোগ করে এমআরপি নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এটি মানছেন না বাংলাদেশ মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওই নেতা। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। আমাদের দাবি, এ হার ১.৮৯ শতাংশ দেওয়া হোক। ’

এদিকে ওই ব্যবসায়ীর নিজের প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্ট এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কম্পানিসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট দুটি আইটেমের রিংয়ের দাম যথাক্রমে ২৫ ও ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাবের বিষয়টি এখন আর মানা হচ্ছে না। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে সাংবাদিকদের কাছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ব্যবসায়ী শাহীন। তিনি বলেন, ‘২৫ হাজার ও ৫০ হাজার টাকার বিষয়টি যেভাবে প্রচারিত হয়েছে তাতে নিজেদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই এখন এমআরপি অনুসারে যেটার যে দাম হবে তাই আমরা অনুসরণ করব। এ ক্ষেত্রে ২৫ হাজার বা ৫০ হাজারের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। আর এতে রোগীরা আগের তুলনায় অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে রিং কেনার সুযোগ পাবে। ’

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/04/22/489408