২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১১:০১

বাড়ছে সাইবার অপরাধ, বেশি শিকার নারীরা

দেশে সাইবার অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মামলা এবং এ-সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যাও।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে মানহানি ও শ্লীলতাহানি-সংক্রান্ত সাইবার অপরাধের বেশির ভাগ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। যার বেশির ভাগ শিকার হচ্ছেন নারীরা। তাঁরা বলছেন, অনেকেই জানেন না যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেলে এ বিষয়ে তাঁরা সমাধান পাবেন। আর যাঁরা আসেন তাঁরা সামাজিকভাবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে মামলা পর্যন্ত যেতে চান না।

ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি মামলা নিয়ে ট্রাইব্যুনালের কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরের বছর মামলা আসে ৩২টি। ২০১৫ সালে ১৫২টি ও ২০১৬ সালে ২৩৩টি মামলা। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই এসেছে ১৪১টি মামলা। ট্রাইব্যুনালে এখন ৩৮২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাইবার অপরাধ তদন্তবিষয়ক সেল রয়েছে।
সাইবার অপরাধবিষয়ক কোনো মামলায় বিশেষজ্ঞ মতামত (অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, তা ফরেনসিক পরীক্ষা করে মতামত) দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সিআইডি। ২০১৩ সাল থেকে সিআইডি এই মতামত দিয়ে আসছে। ওই বছর ২৫টি মামলায় বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছে সংস্থাটি। এরপর ২০১৪ সালে ৬৫টি, ২০১৫ সালে ২১৭টি, ২০১৬ সালে ৪১৬টি এবং এ বছরের প্রথম দুই মাসে ৭৫টি মামলায় মতামত দিয়েছে তারা।
গত বছর থেকে কাজ শুরু করা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ৪২টি মামলার তদন্ত করছে। আর ২০১৫ সালে দুটি মামলা দিয়ে তদন্ত শুরু করা পিবিআই তদন্ত করছে ২৫টি মামলা।
সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে যে সংখ্যক মামলা আসে, তার চেয়ে বেশি অভিযোগ আসে ব্যক্তিগতভাবে। এসব অভিযোগের সমাধান দ্রুততার সঙ্গে করতে হয় বলে ব্যক্তিগতভাবেই তাঁরা এর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, থানায় মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাইবার অপরাধ বিষয়ে তেমন একটা দক্ষতা নেই। তাই এ ধরনের কোনো অভিযোগ এলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারাই বুঝে উঠতে পারেন না কী করবেন। এতে অনেকেই সমাধানও পাচ্ছেন না।

নারীরা কী হারে বা কেমন সংখ্যায় অপরাধের শিকার হচ্ছেন, তার কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে। তদন্ত সংস্থাগুলোর বাইরেও সাইবার অপরাধ নিয়ে কিছু সংগঠন কাজ করে থাকে। জাস্টিস ফর ওমেন বাংলাদেশের সাইবার অপরাধ বিশ্লেষক মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ে তাঁদের সংগঠন থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন এমন ১ হাজার ২০০ ব্যক্তির ওপর জরিপ চালিয়ে তাঁরা দেখেছেন, অপরাধের শিকার ৭১ শতাংশই নারী।
গত ৮ মার্চ ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: সাইবার অপরাধ, নিরাপদ ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছিলেন, বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীদের ৭৩ শতাংশই নানা ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এর ২৩ শতাংশই অভিযোগ করেন না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।


সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জালাল উদ্দীন ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, প্রেমিক তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ওয়েবসাইটে ছেড়ে দিচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ ঠেকানোর একটা বড় উপায় হচ্ছে সচেতনতা বাড়ানো। যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাঁদের অন্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1153741