২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:৩২

রমযানের আগেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

আগামী মাসের শেষের দিকে রমযান মাস শুরু হবে। প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, ছোলা ও চালের দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মওসুুম পরিবর্তনের কারণেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আড়ৎদাররা। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, সবজির বাজার আগের বাড়তি দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে অধিকাংশ মুদি পণ্যের দাম।


বাজার বিশ্লেষণ এবং ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৪-৬ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ২৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশী পেঁয়াজ আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ৬ টাকা বেড়ে ২৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম মানভেদে কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশী রসুন আজকের বাজারে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।


এছাড়া কেজি প্রতি দেশী মসুর ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১০০ টাকা, দেশী মুগ ডাল ১২০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ১১০ টাকা, মাসকলাই ১৩৫ টাকা এবং ছোলার ডাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চালের বাজারেও বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজি প্রতি মোটা স্বর্ণা চাল ৪২ টাকা, পারিজা চাল ৪২-৪৩ টাকা, মিনিকেট ভালোটা ৫৫-৫৬ টাকা, মিনিকেট নরমাল ৫২ টাকা, বিআর২৮ ৪৬ টাকা, নাজিরশাইল ৪২-৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৬ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪-৭৬ টাকা, হাস্কি নাজির চাল ৪১ টাকা এবং পোলাও চাল ১০০ (পুরাতন), নতুন ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বাড়ার ব্যাপারে মুদি ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, আড়ৎ থেকে পুরাতন চাল সরিয়ে নতুন চাল মজুদ করা হচ্ছে। আর মওসুুম পরিবর্তনের কারণে সব মুদি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আড়ৎদাররা।
তিনি আরও জানান, দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় বাজারে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরাও এখন আমদানি বাড়িয়েছেন। তবে তা সার্বিক চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এতে বাজারে পণ্যটির দাম কিছুটা বেড়েছে।


ব্যবসায়ীদের এমন তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এসব অযুহাত রমজানের আগে পণ্যের দাম বাড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। ক্রেতা আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতি বছরই রমজানের আগে সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে এদিকে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এটা আমাদের জন্য ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই না।
মুদি পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে ৫ লিটারের বোতল ব্র্যান্ড ভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি লিটার ভোজ্য তেল ১০০ থেকে ১০৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব সবজি আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, সাদা বেগুন ৫৫-৬০ টাকা, কালো বেগুন ৪০-৫০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, শশা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০-৪০ টাকা, চাল কুমড়া ১৫ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কেজি প্রতি আলু ২০ টাকা, পেঁপে ১৫ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি প্রতিটি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা এবং লেবু হালি প্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক আঁটি প্রতি ১৫ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা এবং লাউশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০-২০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৩০-১৮০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০-৮০০ টাকা, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ টাকা, প্রতিটি ইলিশ ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে; প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৬০০ টাকা।
এছাড়া আগের বাড়তি দামেই গরুর গোশত প্রতি কেজি ৪৮০-৫০০ টাকা, খাসির গোশত প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। এছাড়া লেয়ার মুরগি ১৮০, দেশী মুরগি ৪০০, পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

http://www.dailysangram.com/post/280735