২১ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৮:২২

পদ্মায় সরকারদলীয় নেতাদের বালু তোলার ধুম

পদ্মা থেকে অব্যাহতভাবে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ। চারঘাটে পদ্মাতীরবর্তী ক্যাডেট কলেজটির অদূরেই ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে রাতদিন বালু তোলা হচ্ছে। সরকারদলীয় নেতারা এই বালুমহালের সঙ্গে জড়িত। এ কারণে বেপরোয়াভাবে চলছে বালুর কারবার। দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে আসছে বর্ষায় ক্যাডেট কলেজ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে বালুঘাটগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছেন ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত বালু তোলা বন্ধ হয়নি।


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চারঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ। প্রায় ৮৫ একর জায়গা নিয়ে ১৯৬৪টি সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটি। ২০১০ সাল থেকেই কলেজের অদূরে পদ্মা থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ১৩ একর জমি চলে গেছে নদীতে। বালু তোলা চলতে থাকলে অচিরেই কলেজের স্থাপনাও নদীতে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কলেজটির সামনে এবং আশপাশ থেকে সব মিলিয়ে ১১টি বালুঘাট করে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু তুলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের তিন নেতা।

চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান মামুন ও আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান রনির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বালুঘাটগুলো। জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে এক কোটি ৮০ লাখ টাকায় ১১টি ঘাট ইজারা নিয়েছেন তারা। ক্যাডেট কলেজ ঘিরে একের পর এক বালুঘাট করে নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন চলছে। ফলে কলেজসহ আশপাশের অন্তত দুটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারদলীয় নেতাদের ভয়ে কোনো প্রতিবাদের সাহস পান না স্থানীয়রা। ফলে দিনের পর দিন তাদের বালুর থাবা যেন বড় হতেই চলেছে।

রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল হাবিবুর রহমান জানান, ‘অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে গোটা ক্যাডেট কলেজ। এরই মধ্যে ১৩ একর জায়গা চলে গেছে নদীতে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো গোটা কলেজটিই নদীতে চলে যাবে। এ অবস্থায় কলেজটি রক্ষা করতে আশপাশের সব বালুঘাট বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই বালুঘাটগুলো বন্ধ করার জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও করেছেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা ও ক্যাডেট কলেজের নিচ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজে দায়িত্বরত কর্মকর্তা শমসের আলী মন্টু বলেন, ‘অব্যাহতভাবে ভাঙনের কারণে ২০১৫ সালে ক্যাডেট কলেজ রক্ষায় সরকার প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ কাজটি এখন চলমান। কিন্তু বাঁধের নিচেই বর্তমানে পানি রয়েছে প্রায় ৭০ মিটার। বর্ষাকালে যেটি গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮৫ মিটারে। নদীর তীর ঘেঁষে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই এত গভীরতা সৃষ্টি হয়েছে এখানে। তারপরও ৬৫ হাজার বস্তা বালু ফেলে বাঁধ নির্মাণ করে আমরা চেষ্টা করছি ক্যাডেট কলেজ রক্ষার জন্য। কিন্তু এভাবে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে এ বাঁধও কোনো কজে আসবে না। গচ্চা যাবে সরকারের ৮০ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিলীন হয়ে যেতে পারে ক্যাডেট কলেজসহ আশপাশের অন্তত দুটি গ্রাম।’

এ বিষয়ে বালুমহালের ইজারাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান রনি বলেন, ‘আমরা বালুমহালগুলো লিজ নিয়েছি। কিন্তু ওই বালুমহাল ব্যবহার করে বালু ব্যবসায়ীরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করেন। তবে ক্যাডেট কলেজের সামনের বালুমহালগুলো নিয়ে অব্যাহত সমস্যার কারণে নতুন করে সেখান থেকে আর বালু উত্তোলন করা হবে না। তবে যেগুলোতে বালু রাখা আছে, সেগুলো আমরা দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছি।’

আরেক ইজারাদার ও চারঘাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান মামুন বলেন, ‘ক্যাডেট কলেজের সামনে থেকে কোনো বালু উত্তোলন করা হয় না। বালু উত্তোলন করা হয় নদীর মাঝখান থেকে। ফলে সেখানে বালু উত্তোলনের কারণে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’ তবে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর রহমান যুগান্তরকে জানান, বালুঘাট বন্ধের বিষয়ে ক্যাডেট কলেজের কোনো অভিযোগ সশরীরে এসে কেউ দিয়ে যায়নি। এ ছাড়া ডাক ফাইলেও এ ধরনের কোনো অভিযোগের কথা জানা নেই।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/21/118981/