১৪ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৯:২৫

চাঙ্গা বৈশাখের অর্থনীতি

সপ্তাহজুড়ে শপিং মল ও মাছের বাজারে কেনাকাটার ধুম

মার্কেট জোন নামে খ্যাত নিউমার্কেট চাঁদনীচকে ক্রেতাদের তিল ধারনের ঠাঁই নেই। পোশাক ও নানা রকমের গহনা কেনার জন্য সেখানে ভিড় করেন শিশুকিশোর ও তরুণ-তরুণীরা। অন্যদিকে মাছের বাজারে ইলিশ বিক্রির ধুম। ব্যস্ত মুড়ি, দই ও মিষ্টির দোকানিরাও। গেল এক সপ্তাহে বৈশাখ ঘিরে কেনাকাটায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে দেশের অর্থনীতি। আজ পহেলা বৈশাখ। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এ উৎসব।

বৈশাখকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউসগুলোতে ছিল বাহারি রং ও ডিজাইনের বাঙালি পোশাকের সমারোহ। তবে ফুটপাত থেকে শুরু করে নামি দামি শপিং মল, সবখানেই বৈশাখের ছাপ চোখে পড়ে। ক্রেতা আর্কষণে বিভিন্ন কোম্পানি বিশেষ মূল্য ছাড়ও দিয়েছে। বৃহস্পতিবারও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর ছিল বিভিন্ন শপিং মল। কেনাকাটা হয়েছে অনলাইনেও। এ ছাড়া ফুল, মৃৎশিল্প, গহনা ও নিত্যপণ্যের বাজারও ছিল সরগরম। এই উৎসবের মূল আর্কষণ ইলিশ। তাই ইলিশ কিনতে মাছের বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। এখন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও হিম ঘরে (কোল্ড স্টোরেজ) মজুদ করা ইলিশ বাজারজাত করেন ব্যবসায়ীরা।

বৈশাখ ঘিরে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই জমজমাট নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব কর্মকাণ্ড ঘিরে অর্থনীতির লেনদেন বেড়েছে কয়েকগুণ। এর সম্ভাব্য পরিমাণ হবে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায় অর্থনীতিতে গতি আসবে। তবে এতে মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বাড়বে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে পুরো জাতি উৎসবে মেতে ওঠে। অর্থনীতিতে এর একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ এতে দেশে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তার মতে, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে এ উৎসব পুরোটাই ইতিবাচক বলা যায়। তিনি আরও বলেন, এ বছরও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীরাও বৈশাখী ভাতা পাবেন। বাজারে এই বাড়তি টাকা আসায় কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। এতে অভ্যন্তরীণ একটি চাহিদা সৃষ্টি হবে।

জানা গেছে, গত বছর সরকার বোনাস ঘোষণা করে এ উৎসবের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এ বোনাসের কয়েকশ’ কোটি টাকা আসবে বৈশাখের বাজারে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানও নববর্ষের বোনাস দিচ্ছে। এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে- ব্যাংক, বিভিন্ন বীমা কোম্পানি ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বেশকিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মন্টু যুগান্তরকে বলেন, মার্কেটগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেড়েছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈশাখ শুধু ঘরোয়া উৎসব নয়, হোটেল রেস্তোরাঁ এমনকি পাঁচ তারকা হোটেলেও জমজমাট আয়োজন থাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশাখে বেশি কেনাকাটা হয় পোশাকের বাজারে। বছরের প্রায় ২০ শতাংশ কেনাকাটা হয় এ সময়। আর দুই ঈদে হয় ৬০ শতাংশ। বাকিটা সারা বছর।

এশিয়ার বৃহত্তম শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে বর্ণিল বৈশাখী আয়োজন। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এখানে আড়ং, অঞ্জনস, দেশী দশ, নবরূপা, মেট্রো, জেন্টালপার্ক, ইনফিনিটি, ক্যাটসআইসহ দেশের সব শীর্র্ষ ব্র্যান্ডগুলো বৈশাখী পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছে। বিভিন্ন ধরনের পোশাক ৫ থেকে ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড়ে বিক্রি হয়। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি দোকান ঘুড়ি, মুখোশ ও লাল-নীল বাতি দিয়ে সাজানো হয়। যমুনা ফিউচার পার্কের অঞ্জনস ফ্যাশন হাউসের সেলস এক্সিকিউটিভ রেজাউল করিম যুগান্তরকে জানান, বেচাকেনা ভালো হয়েছে। মেয়েদের রং-বেরঙের থ্রি-পিস, কুর্তি, শাড়ি ও ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া বেশি বিক্রি হয়েছে।

সরেজমিন রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়া, শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট ও বেইলি রোডের ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরেও দেখা যায় বৈশাখী কেনাকাটার ধুম। আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মতে, বৈশাখে বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবি ৮শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা, ফতুয়া ৪শ’ থেকে ৮শ’ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ১২শ’ থেকে ৩২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইলিশের। ঢাকার বাজারে এই মাছের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে আগোরা, স্বপ্ন, মীনা বাজারসহ বিভিন্ন চেইন শপিং মল দিচ্ছে আকর্ষণীয় অফার। এদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসছে তরমুজ। বৈশাখে ফলের চাহিদাও বেশি। ফলে ঢাকার বাজারগুলো এরই মধ্যে ছেয়ে গেছে তরমুজে। প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে দু’শ টাকায়।

অন্যদিকে মৃৎশিল্পের বিশেষ কারুকাজ, সরা আঁকা, মিছরির মিষ্টি বানানো, খৈ তৈরি, কাপড় বোনা ইত্যাদি কাজও উৎসবমুখর পরিবেশে চলে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বসেছে বৈশাখী তাঁতবস্ত্রের মেলা। পার্লার ও সোনার দোকানেও ছিল ভিড়। বৈশাখ উপলক্ষে কিছু প্রতিষ্ঠানের নতুন মিউজিক ভিডিও বাজারে এসেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এ উপলক্ষে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/04/14/117426