১৩ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:০১

খোলা জানালা

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ও ভারত সফরের আদ্যোপান্ত

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভারত সফর শেষ করে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এটা নতুন নয়। যখনই তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ যান, ফিরে এসে প্রায় প্রতিবারই সংবাদ সম্মেলন করেন এবং সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এবারও হয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু সাংবাদিককেই আমি প্রতিবারই প্রশ্ন করতে দেখি। এ ক্ষেত্রে যা দৃষ্টিকটু তা হচ্ছে, তারা সবাই প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রশংসা করেই মামুলি দু’-একটি প্রশ্ন করেন। অতীতে একবার প্রধানমন্ত্রী এক সম্পাদককে তার প্রশংসাসূচক বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে তাকে প্রশ্ন করতে বলেছিলেন। সেই প্রবণতা এবারও দেখলাম। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে বলা হল একটি প্রশ্ন করতে। কিন্তু দেখলাম প্রশ্নকর্তারা একটি প্রশ্নের মাঝেই একাধিক প্রশ্ন করেছেন। ঢাকায় কিছু বিদেশী সাংবাদিক অথবা বিদেশী সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি থাকেন। তাদের কাউকে দেখলাম না- এটা চোখে লাগার মতো।

আমার কাছে প্রধানমন্ত্রীর এ সংবাদ সম্মেলনের গুরুত্ব ছিল অনেক। কারণ দুটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, এ ব্যাপারে আমার আগ্রহ ছিল। এর একটি হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি বা সমঝোতা না হওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, তা দেখা। দ্বিতীয়ত, সামরিক সমঝোতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়ন কী। কারণ যেসব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, এর মধ্যে এ দুটিই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বাকি সব চুক্তি ও সমঝোতা আমার কাছে গতানুগতিক বলে মনে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে নতুন একটি কথা বলেছেন। বাকি বক্তব্য সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। নতুন কথাটি হচ্ছে প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে। এতদিন আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল তা হচ্ছে, রাজবাড়ীর পাংশায় একটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল, যেখানে একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় একটি রিজার্ভিয়ার নির্মাণ করা হবে, যাতে বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রাখা যায়। এ পানি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতার প্রশ্ন ছিল। দুটি চীনা কোম্পানি এবং জাপান এ খাতে ২ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের তথা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২ দশমিক ৯০ ট্রিলিয়ন লিটার পানি ধরে রাখার কথা। ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও ছিল। এতে করে ভারতও উপকৃত হতো। এখন প্রধানমন্ত্রী জানালেন, পাংশায় যে ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, তা তিনি বাতিল করে দিয়েছেন। তবে একটি উপযুক্ত স্থান দেখার জন্য তিনি মমতা ব্যানার্জির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যৌথ উদ্যোগের কথাও বলেছেন। তবে একইসঙ্গে তিনি পানি ধরে রাখার জন্য নদী ড্রেজিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুই. প্রধানমন্ত্রী যে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করেছেন, তার ৪১নং ধারায় গঙ্গা ব্যারাজের কথা বলা হয়েছে। সেখানে দু’দেশের সমন্বয়ে একটি ‘যৌথ কারিগরি টিম’ গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। এই যৌথ কারিগরি টিমের ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশ সফর করবে এবং এখানে তারা একটি সমীক্ষা চালাবে।

তিস্তার পানি পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়টি এখন আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যদি বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখেন, তাহলে এ দেশ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ একটি বড় ধরনের সংকটে পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকবে। এমনকি এতে করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে। মনে রাখতে হবে, তিস্তায় পানি প্রাপ্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আমাদের অধিকারকে নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির আপত্তি বা সমর্থন রয়েছে কিনা সেটা আমাদের বিষয় নয়। আমাদের নেতৃত্ব বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়নি। আমাদের অধিকার, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত, তা নিশ্চিত করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে বলা ভালো, সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর খড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। পরবর্তীকালে ২০০৭ সালের ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দু’দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এরপর যুক্ত হয়েছিল মমতার আপত্তি। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারেই অতীতে মমতার সম্মতি পাওয়া যায়নি। এখানে আরও একটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। তিস্তার পানি বণ্টনে সিকিমকে জড়িত করার প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। কেননা সিকিম নিজে উজানে পানি প্রত্যাহার করে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে দিন দিন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষকদের কাছে তিস্তার পানির চাহিদা বেশি। মমতা ব্যানার্জি এ পানি চাইবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক নদীর পানি তিনি এককভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তিনি এবার একটি ‘নতুন ফর্মুলা’ দিলেন। তিনি তোরসা ও জলঢাকাসহ ৪টি নদীর নাম বললেন, যেখান থেকে পানি নিয়ে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করা যায়! বাংলাদেশে তোরসা ও জলঢাকা দুধকুমার ও ধরলা নামে পরিচিত। মমতার এ বক্তব্য তো মূলত ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পেরই নামান্তর। এর আগে ঢাকায় এসে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, বাংলাদেশ আত্রাই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে! এই হচ্ছেন মমতা। এখন নয়াদিল্লিতে মোদি বললেন, মমতার সম্মতি নিয়েই তিস্তা চুক্তি হবে। মমতার বক্তব্যের পর মোদির আশ্বাস শুধু আশ্বাসের মধ্যে থেকে যায় কিনা, সে আশঙ্কা থাকলই।

সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে যৌথ ঘোষণাপত্রে কোনো উল্লেখ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে পাটজাত পণ্যের ওপর ১৩ ভাগ হারে ভারত যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক এবং তৈরি পোশাকের ওপর ৩০ ভাগ হারে কাউন্টারভেইলিং শুল্ক আরোপ করেছে, তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। যৌথ ঘোষণাপত্রে ভারতের অঙ্গীকার তাতে পাওয়া গেছে। ভারত যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রস্তাব করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ২০১০ সালে ভারত যে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছিল, তার প্রায় ৫০ ভাগ এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে। ২০১৬ সালে আরও ২ বিলিয়ন ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। এ অর্থের ব্যবহার এখনও শুরুই হয়নি। এবার এলো প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব। এ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা, কিংবা কবে নাগাদ তা ছাড় দেয়া হবে, এ ক্ষেত্রে রয়ে গেছে অস্পষ্টতা। উপরন্তু এসব ঋণ প্রকল্পে প্রকারান্তরে লাভবান হবে ভারতই।

প্রতিরক্ষা খাতে ৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব আছে। এর একটা ভালো দিক হচ্ছে, বাংলাদেশ তার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ অস্ত্র দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম কিনবে। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দু’দেশের সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা এখন একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে গেল। অনেক আগে থেকেই সেনা সদস্যরা এসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ তথা শিক্ষা লাভ করেন।

পরমাণু শক্তি কেন্দ্র নির্মাণে ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা, সাইবার নিরাপত্তা চুক্তি, বিচারপতিদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নিঃসন্দেহে সফরের ভালো দিক। খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস কিংবা ঢাকা-খুলনা-কলকাতা বাস সার্ভিসও ভালো দিক। সাধারণ মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে। তবে ভিসা সহজীকরণের ক্ষেত্রে যদি কোনো ঘোষণা আসত, তা বাংলাদেশীদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনত। কিন্তু তা আসেনি। বাণিজ্য বৈষম্য (২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭৬১ দশমিক ০৮ মিলিয়ন ডলার) কমিয়ে আনার ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের পাশাপাশি ফেনী, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতি, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিবণ্টনের আলোচনা অব্যাহত রাখার কথাও বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তাকে বেশ ‘কনফিডেন্ট’ই মনে হয়েছে। এবারও তিনি আশ্বস্ত করেছেন, ভারতের সঙ্গে যে সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা হয়েছে, তা সাংবাদিকরা জানবেন। তবে সংবিধানের ১৪৫ক ধারা মতে এটি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে উত্থাপিত হবে কিনা, সে ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দেননি। পশ্চিমবঙ্গ যে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চেয়েছে, এ কথাটাও তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যৌথ ঘোষণাপত্রের ২৭নং অনুচ্ছেদে ভারত থেকে বাংলাদেশ যে বিদ্যুৎ পাচ্ছে, সে কথাটার উল্লেখ আছে। ২৮নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, জ্বালানি সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত সমঝোতার কথা। আগামীতে যে কোনো সুবিধাজনক সময়ে এ ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নেপালের সঙ্গে একই ধরনের একটি সমঝোতায় উপনীত হওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন। বলা ভালো, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এর আগে ঘোষণা করেছিলেন, জলবিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ ভুটান ও নেপালে বিনিয়োগ করবে। যৌথ বিনিয়োগে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে, তা বাংলাদেশে রফতানি করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। কেননা এ বিদ্যুৎ ভারতীয় এলাকার ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। ভারতের সম্মতি পাওয়া না গেলে এটা কার্যকর করা যাবে না। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০১৫ সালের ঢাকা সফরের সময় যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্ম হয়েছিল (বিবিআইএন), তার মাধ্যমেই এ তিন দেশীয় বিদ্যুৎ সমঝোতা সম্ভব। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দ্বিপাক্ষিকতা। এই দ্বিপাক্ষিকতার আলোকে ভারত ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং নিজ দেশে আমদানি করছে। একটি ত্রিদেশীয় (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত) মোটর ভ্যাহিকেল চুক্তি (যান চলাচল সংক্রান্ত) স্বাক্ষরিত হলেও ভুটানের সর্বশেষ আপত্তি ও সংসদে তা পাস না হওয়ায় এটি এখন অকার্যকর। তবে বিদ্যুৎ সেক্টরে বিনিয়োগে ভুটান ও নেপাল রাজি। এটি একটি নতুন দিক।

ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে ভারতের অবস্থান মাত্র ২ দশমিক ৮ ভাগ হলেও ২০৫০ সাল নাগাদ ভারত দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। সুতরাং ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ভারতকে আরও উদার হতে হবে। ভারত যদি আরও উদার না হয়, তাহলে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার যে বড় সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে। ‘কবি’ নরেন্দ্র মোদি (তার দুটি কবিতার বই আছে) ঢাকায় এসে বলেছিলেন, পাখি কিংবা বায়ুর কোনো সীমান্ত নেই। তার ‘নেইবারহুড ফার্স্ট পলিসি’ আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু। যৌথ ঘোষণাপত্রে যে ৬২টি দফা আছে, তাতে অনেক ভালো ভালো কথা আছে। এখন দেখার পালা এর কতটুকু বাস্তবায়িত হয়। শুধু ‘আশ্বাস’ বাংলাদেশীদের মন ভরাতে পারবে না। ভারতীয় নেতাদের ‘মাইন্ড সেটআপে’ পরিবর্তন দরকার। যদি তা না হয়, তাহলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পানি কেউ আটকে রাখতে পারবে না।’ এই পানি, অর্থাৎ তিস্তার পানিই কি হয়ে যাচ্ছে দু’দেশের মাঝে সম্পর্কের ভিত্তি? পানি নিয়ে মমতা ‘রাজনীতি’ করছেন। এটা এখন অনেকের কাছেই স্পষ্ট। ভারতীয় গণমাধ্যমও মমতার এই ‘অবস্থান’কে সমর্থন করছে না। এখন মোদির বক্তব্যই আমাদের ভরসা। নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মোদি আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার আর নয়াদিল্লিতে মোদি সরকারের আমলেই তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান হবে। মোদির কাছে আছে সংবিধানের ২৫৩ নম্বর ধারাটি। যে ধারা বলে বিদেশের সঙ্গে যে কোনো চুক্তি তিনি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনো রাজ্য সরকারের সমর্থনের প্রয়োজন তার নেই। এখন এটাই আমাদের ভরসা। পশ্চিমবঙ্গ যদি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তাদের আপত্তি অব্যাহত রাখে, তাহলে হয়তো মোদি এ ধারাটি ব্যবহার করেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করবেন। ২০১১ সালে তৈরি করা চুক্তির খসড়া তো দুই সরকারের কাছেই আছে।

ড. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

tsrahmanbd@yahoo.com

http://www.jugantor.com/sub-editorial/2017/04/13/117237