৮ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ৮:৩৭

রাজধানীতে বেপোরোয়া চাঁদাবাজিতে গণপরিবহনে চরম নৈরাজ্য

গণপরিবহনে সরকারি দলের বেপোরোয়া চাঁদাবাজিতে রাজধানীর গণপরিবহনে এখন চরম নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-মিনিবাস ধরপাকড়ের অভিযান । ফলে বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির হচ্ছে। নানা অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ ভাড়া আদায় করছে পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে জনদুর্ভোগ সীমাহীন হয়ে উঠছে।

তথ্য মতে, জনদুর্ভোগ কমানোর দৃষ্টান্ত স্থাপনে বরাবর পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দায়িত্বশীলরা কখনো কখনো সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন ঠিকই কিন্তু সেসব পরিকল্পনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দিকেই ধাবিত হয়। গণপরিবহন খাতের নৈরাজ্য কমাতে এর আগেও সংশ্লিষ্টরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-মিনিবাস ধরপাকড়ের উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। আর বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় তার খেসারত দিতে হয়েছে যাত্রীদেরই। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, রাজধানীর সড়কে যেসব গণপরিবহন অবাধে চলাচল করছে, তার বেশিরভাগই ফিটনেসহীন লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন। লাইসেন্স নেই এমন চালকরাও যানবাহন চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। আর এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের তারা সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন।

অভিযোগ রয়েছে গণপরিবহনের যারা মালিক তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন তাদের দিকে হাত বাড়াতে ভয় পায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন আটক করে আইনগত ব্যবস্থার কথাও মাঝেমধ্যে জানা যায়, কিন্তু তাতেও রাজধানীতে গণপরিবহনের নৈরাজ্য কিছুতেই কমেনি। আবার শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতাধররা জড়িত থাকায় তাদের বাড়াবাড়িও সীমাহীন। সরকারি সিদ্ধান্ত কিভাবে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছে আগাম পৌঁছে যায়! এভাবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গণপরিবহনের নৈরাজ্য দূর করা যাবে কি?

জানা গেছে, পরিবহন শ্রমিক লীগের নেতারা নামে বেনামে গণপরিবহনে চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। সরকারের উচ্চ মহল থেকে জনসাধারণ পর্যন্ত সবারই এ চাঁদাবাজির কথা জানা রয়েছে। তারপরও চাঁদাবাজি বন্ধের কোন উদ্যোগ নেই। আর এ চাঁদাবাজির অজুহাতে প্রতিনিয়তই ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের পকেট কেটে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। জনগণ এর প্রতিবাদ করলেও কিন্তু কোন প্রতিকার নেই।

এর আগেও, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার খবর আগে থেকেই পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কানে পৌঁছে যায়। এতে মালিকরা লক্কড়ঝক্কড় মার্কা পরিবহনগুলো কিছুদিন লুকিয়ে রেখে, তা আবারও ফিরিয়ে এনেছেন রাস্তায়। পুরনো যানবাহনে রঙ করিয়ে সড়কে নামানো হচ্ছে। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না- লোক দেখানো এই ধরপাকড় অভিযান চালিয়ে জনসাধারণকে বিপাকে ফেলার কোনো অর্থ হতে পারে না। তবে সরকার-প্রশাসন-সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে গণপরিবহনের নৈরাজ্য দূর করা অসম্ভব নয়। মালিকরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী, আর এ কারণেই অভিযানে সফলতা আসেনি। অতীতেও একাধিক ব্যর্থ অভিযান চালানো হয়েছিল। অথচ সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে দ্রত এই পরিস্থিতি নিরসনের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো শুধু মেয়াদোত্তীর্ণই নয়, যাত্রী নেয়ার জন্য যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যানজটও সৃষ্টি করে থাকে। আর পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা তো সরাসরিই বলেন- তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালায়। ফলে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নেয়া জরুরি তেমনি যাতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠতে না পারে সে ব্যাপারেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রয়োজনীয় নতুন পরিবহন না নামিয়ে এসব গণপরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে জনদুর্ভোগ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু তারপরেও কি কারণে এ অবিযান চালানো হয় তা বুঝার কোন উপায় নেই।

অভিযান শুরুর আগে সরকারি গণপরিবহন বিআরটিসির বাসগুলোও বিকল্প হিসেবে চালুর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন খাতটি চালু রাখা গেলে গণপরিবহন খাতে সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক হবে। গণপরিবহনের এই নৈরাজ্য কিন্তু সরকারের জনপ্রিয়তাও নষ্ট করছে। কাজেই সরকারকে পথে নামতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দায়িত্বশীলরা পরিকল্পিত দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে গণপরিবহন খাতের নৈরাজ্য দূর করাসহ যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

http://www.dailysangram.com/post/278967-