৭ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৯:২১

সাড়ে ৩ বছরে ৩৮১ জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত

সাড়ে ৩ বছরে ৩৮১ জন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের তালিকায় গাজীপুর, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন মেয়র রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়রকে দ্বিতীয় দফা বরখাস্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুনরায় তারা আদালতের রায়ে পদ ফিরে পেয়েছেন। সিটি মেয়র বাদে ৩৫ পৌর মেয়র, ৫৭ কাউন্সিলর, ৫৩ উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬৭ ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ৯১ ও মেম্বার ৭৪ জনকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এসব জনপ্রতিনিধি নাশকতা, বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মামলার

চার্জশিটভুক্ত আসামি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরখাস্তকৃত জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব জনপ্রতিনিধি ভোট কেন্দ্রে আগুন, গাড়িতে পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলাসহ রাজনৈতিক সহিংসতার মামলার আসামি। সংশ্লিষ্ট মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কোন কোনো উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সব ভাইস চেয়ারম্যানরা অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি-জামাতের সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যানকে সরানোর জন্য পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন। অনেকে এক্ষেত্রে সফলও হন। অনেক এলাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পদে বসতে না পারায় ওই সব এলাকার জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন), স্থানীয় সরকার (পৌরসভা), স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধি যে কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে (আদালত কর্তৃক চার্জশিট গৃহীত হলে) কিংবা ওই প্রতিনিধি শারীরিকভাবে সক্ষমতা হারালে কিংবা পরিষদের সভায় পরপর তিনবার অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে। এ আইনের ধারায় জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে যায়। নাশকতা আর বোমাবাজিতে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়। ওই তাণ্ডবের রেশ কাটতে না কাটতেই ক্ষমতাসীন সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এসব ঘটনার মামলায় আসামি করা হয় বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের। তদন্ত শেষে পাঁচ শতাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আদালতে চার্জশিট গৃহীত হওয়ার পরপরই ওই সব জনপ্রতিনিধিকে আইন অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। তবে অনেক জনপ্রতিনিধি উচ্চ আদালতে রিট করে তাঁদের বরখাস্তে স্থগিতাদেশ নিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জানা গেছে বগুড়া, সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি এলাকার বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রকে দ্বিতীয় দফায় বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। উচ্চ আদালতের আদেশে রোববার মেয়রের দায়িত্ব নেয়ামাত্র আবারও বরখাস্ত হন রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এরই মধ্যে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। তারা ফের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। একই সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বরখাস্ত হওয়া হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছের বরখাস্ত আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বরখাস্ত করা মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জার্জিস হোসেনের বরখাস্ত আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাই তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতেও কোনো সমস্যা হবে না।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=60531&cat=2/