৬ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০৩

প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে

* আমরা ভারতকে বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী হিসেবে পেতে চাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশের প্রথম তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এম,এ, মাজেদ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, গণস্বাস্থের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, কবি আল মাহমুদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. খন্দকার মুসতাহিদুর রহমান, সাবেক অ্যাটর্নী জেনারেল ব্যারিস্টার এ,জে মোহাম্মদ আলী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মাহফুজউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আ,ফ,ম ইউসুফ হায়দার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা: আবদুল মান্নান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হাসান মোহাম্মদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আবদুর রহমান সিদ্দিকী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. রেজাউল করিম।
গতকাল বুধবার দেয়া বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাগিণা ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন। তার সফরের তারিখ একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছিল। তার সফরকে কেন্দ্র করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মি. জয়শংকর, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর এবং সর্বশেষে ভারতের গেণাবাহিনীর প্রধান বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।
তারা বলেন, এইসব সফর এবং ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরাখবর নানা জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের সূত্র ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সুধী সমাজের মধ্যে সঞ্চার হয়েছে উদ্বেগ। কথা উঠেছে, এই সফরকালে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি ও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এসব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে জাতিকে স্পষ্ট করে কিছুই বলছেন না। ফলে উৎকণ্ঠা বেড়ে চলছে।
তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের শাগণামলে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছে বলে দুদেশের সরকারী মহল থেকে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ উত্তরপূর্ব ভারতের নিরাপত্তা সমস্যার সংকট লাঘব করে ঘোষণা দিয়েছে ভারতের বৈরী কোনো শক্তিকে বাংলাদেশের মাটিতে থাকতে দেবে না। নামমাত্র মাসুলের বিনিময়ে ভারতকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বহুমূখী ট্রানজিট সুবিধা, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা ভূমি সীমান্ত সমস্যার সমাধান হলেও দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী পানি বন্টন সমস্যার কোনো সমাধান আজও হয়নি।
বুদ্ধিজীবীগণ আরো বলেন, বহুল আলোচিত তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি হবে হচ্ছে বলে ঘোষণা দেয়া হলেও, বাংলাদেশের পানিসম্পদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় ¯্রফে জানিয়ে দিয়েছেন এবার তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ এর হাতে প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশী নাগরিক খুন হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যেও শুল্ক ও অশুল্ক বাধাসমূহ অদ্যাবধি দূর করা হয়নি। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স প্রতিবছর এদেশে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকদের হাতদিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। এখন কথা হলো বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক যদি সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেই থাকে তাহলে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার কি প্রয়োজন তা বোধগম্য নয়।
তারা বলেন, বাংলাদেশকে ভারত থেকে অস্ত্র কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ভারত। অথচ ভারত নিজেই পৃথিবীর সবচাইতে বড় অস্ত্র আমদানীকারক দেশ। ফলে পরিস্কারভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরিপূরক করে তোলাই এসব আয়োজনের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্যকোনো রাষ্ট্রের প্রতিদ্ধন্ধি হিসেবে দাড় করানোর একটি সুচতুর প্রয়াস আছে বলে আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এই প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে আমাদের আশংকা। এতে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
তারা বলেন, ভারত নিয়েছে অনেক কিন্তু দিয়েছে খুবই সামান্য। আমরা আশা করবো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় ঋণ পরিশোধে ভারত এগিয়ে আসবে। আমরা আরো বলতে চাই, চুক্তির বিষয়াবলী অস্বচ্ছ রেখে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা কিংবা সমঝোতা চুক্তি কার্যত সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে পারে না।
তারা জোর দিয়ে বলেন, আমরা ভারতকে বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী হিসেবে পেতে চাই। যেমনটি ঘটেছিল ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। চুক্তির চাইতে সদ্ভাবের মূল্য অনেক বেশি। আমরা আশা করবো, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হানিকর কোনো চুক্তি করবেন না। এটাই এদেশবাসীর প্রত্যাশা।

 

http://www.dailysangram.com/post/278698-