ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শ্রীমঙ্গলে অকাল বন্যা : নয়া দিগন্ত
৬ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০০

প্রবল বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা

শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ১৬১ মিমি বৃষ্টি

প্রবল বর্ষণে গতকাল বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। একই সাথে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে বজ্রসহ ঝড়ও হচ্ছে। গতকাল বুধবার দেশের কয়েকটি স্থানে ভারী বর্ষণে সাময়িকভাবে ভরে যায় পুকুর, ডোবা, জলাশয়, খাল-বিল। শুকনো নদীর তলদেশ ভরে গেছে পানিতে। পুরো এপ্রিল মাসেই অবশ্য কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। ঝড়ের ফাঁকে আবহাওয়া হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ারও পূর্বাভাস রয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলোতে যেমন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে। আবার সীমান্ত অঞ্চল হওয়ায় ভারতের পাহাড়িয়া অঞ্চলের ঢলে শুরু হয়েছে হঠাৎ বন্যাসম অবস্থা। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় সবগুলো অঞ্চলে চলছে এ অবস্থা। এ দুই বিভাগের হাওরের ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে পাহাড়িয়া ঢলে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুসারে গতকাল শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ১৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর বাইরে অবশ্য চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় সর্বত্র প্রবল বর্ষণ হয়েছে। গতকাল কুমিল্লায় সর্বোচ্চ ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। নেত্রকোনায় হয়েছে ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি। রাজধানী ঢাকায় গতকাল বিকেলে প্রবল বর্ষণ হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৭ মিলিমিটার।
বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণের কারণে গতকাল তাপমাত্রাও ছিল বেশ সহনীয় পর্যায়ে। এর বিপরীত অবস্থা চলছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত অনেক কম। গতকাল বুধবার রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে সামান্যই বৃষ্টিপাত হয়েছে। অন্য দিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগের প্রায় সর্বত্র ভেসে গেছে প্রবল বর্ষণে।
আবহাওয়ার মাসব্যাপী পূর্বাভাস বলা হয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হতে পারে। সাগরে নিম্নচাপ হতে পারে কমপক্ষে দু’টি। নিম্নœচাপ থেকে একটি ঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি ঢলের কারণে আকষ্মিক বন্যা হতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে আকস্মিকভাবে তীব্র বেগে কালবৈশাখী হতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক স্থানে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এবং সর্বনিম্ন ছিল নেত্রকোনায় ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে গতকাল সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩০.৫ ও ২৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নি¤œাঞ্চল। চৈত্রের অকাল এ বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও আবাসিক এলাকার বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট ও মাছের খামারসহ ডুবে গেছে হাইল হাওরের বোরো ফসলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। চৈত্রের খরার বদলে এমন বন্যা হওয়ায় হতভম্ব হয়ে পড়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
গত এক সপ্তাহজুড়ে এ অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত বিরামহীন ভারী বর্ষণের ফলে বিভিন্ন এলাকায় আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করছেন অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও বাড়িঘর নির্মাণ এবং পাহাড়ি ছড়া দখল করার কারণে এই অকাল বন্যা দেখা দিয়েছে। শহরের আশপাশে যে যার মতো ছড়া দখল করে স্থাপনা ও বাঁধ নির্মাণ করায় এবং পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় চৈত্রের বর্ষণে এমন জনদুর্ভোগ হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। এ জন্য বর্ষা মওসুম আসার আগেই স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অনেকে।
প্রবল বর্ষণের ফলে খাল, বিল ও ছরায় পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শহরতলির সবুজবাগ, লালবাগ, রুপসপুর, উত্তর ভাড়াউড়া, দনি ভাড়াউড়াসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
জুড়ী (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, টানা কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। বন্যায় হাকালুকি হাওর পাড়ের সাড়ে চার হাজার হেক্টর কাঁচা বোরো ফসলের প্রায় সব ধানই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এ ছাড়াও জুড়ী, কুশিয়ারা ও সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জুড়ী নদীর বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানের ভাঙনের ফলে ওই ইউনিয়নগুলো ও হাকালুকি হাওর পাড়ের বোরো জমিতে দিন দিন পানি বাড়ায় ফসলের ব্যাপক তি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। তন্মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে সব ফসলই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। অত্রাঞ্চলের কৃষকেরা এবারের ফসলের আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/209967