৬ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৭

খোলা জানালা

ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা দরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন আগামীকাল। সফরটা চার দিনের। এটা মূলত একটা ফিরতি সফর হলেও নানা কারণে এ সফর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। দু’দেশের সংবাদপত্রেই এ নিয়ে মন্তব্য-বিশ্লেষণ প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এ সফরের গুরুত্ব রয়েছে অনেক। প্রথমত, এ সফরে ভারতের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতামূলক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হচ্ছে। কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে না। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মূলত এ সমঝোতা স্মারককে কেন্দ্র করেই। দ্বিতীয়ত, এ সফরটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমন একটি সময়ে যখন বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের পর ভারতের বিশ্লেষকদের এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব আমরা লক্ষ্য করছি। একদিকে চীন, অন্যদিকে ভারত- এ দুই ‘এশীয় শক্তির’ সঙ্গে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করে বাংলাদেশ এতদিন যে নীতি গ্রহণ করে আসছিল, তাতে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা, সেটি হবে আলোচনার মূল বিষয়। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেসব বিষয় রয়েছে, সে ব্যাপারে কতটুকু কী অগ্রগতি হবে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।


ইতিমধ্যে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদপত্রে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শীর্ষক যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে, তার খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। খসড়া সমঝোতা স্মারক নিয়ে তড়িঘড়ি করা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। একাধিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনীতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়া বক্তব্যে বলেছেন, আরেকটু সময় নিয়ে এ সমঝোতা স্মারকটি (এমওইউ) স্বাক্ষর করলে ভালো হতো (সাউথ এশিয়া মনিটর, ৩ এপ্রিল ২০১৭)। এখানে একটা কথা বলা ভালো। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের পরই ভারত এই এমওইউ স্বাক্ষরের ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগী হয়। ভারতের তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি একটি ‘চুক্তি’ করার প্রস্তাব করেছিলেন (সাউথ এশিয়া মনিটর, ৪ এপ্রিল)। কিন্তু বাংলাদেশ চায় একটি এমওইউ এবং তা ৫ বছরের জন্য। এরপর ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বাংলাদেশে আসেন। ধারণা করা যায় তখনই এমওইউ চূড়ান্ত করা হয়। এমওইউ’র যে খসড়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে এবং তাতে যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে ‘এখন অব্দি’ বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় এমন কিছু আমার চোখে ধরা পড়েনি। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সফর বিনিময়, কর্মশালা আয়োজন, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা সহযোগিতা, মহাকাশ প্রযুক্তি সহযোগিতা, সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন, শীর্ষ সেনা নেতৃত্বের মধ্যে বার্ষিক সম্মেলন ইত্যাদির যে কথা বলা হয়েছে, তা একটি স্বাভাবিক বিষয়। দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এ ধরনের সহযোগিতা হতেই পারে। ‘সামরিক সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণে পারস্পরিক সহযোগিতার’ যে কথা বলা হয়েছে এবং যা এমওইউতে আছে, তা একটি ব্যাখ্যা দাবি করে। এ ধরনের সহযোগিতা চীন কিংবা রাশিয়ার অস্ত্রশস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কিনা, এটা জানা দরকার। এতে করে চীনা বা রুশ প্রযুক্তি হস্তান্তরিত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। এমওইউতে আছে, ‘যেসব গোপন তথ্য বিনিময় হবে সেগুলো যাতে পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার না হয় তা দু’পক্ষ নিশ্চিত করবে’- এটা ঠিক আছে। ‘প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রক্রিয়ার সময় দু’পক্ষ গোপনীয়তা মেনে চলবে’- এটাও ঠিক আছে। ‘তৃতীয় কোনো পক্ষের স্বার্থ লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না’- এ ধরনের বাক্য ব্যবহারে সম্ভবত এখানেই এসে যায় ‘চীনা ফ্যাক্টরের’ বিষয়টি। ভারতীয় অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়টিও আলোচনার দাবি রাখে। এজন্য আমরা ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাব। প্রতিটি ঋণই শর্তযুক্ত। ঋণের শর্তে আমরা ভারতীয় অস্ত্র কিনব। প্রশ্ন এখানেই। ভারত কোন অস্ত্র বিক্রি করবে? যেসব অস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনী বর্তমানে আর ব্যবহার করে না, সেসব অস্ত্র? অর্থাৎ যেসব অস্ত্র পুরনো, বর্তমান যুগে অচল, ভারতের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে যা বাতিল ঘোষিত হয়েছে, সেসব অস্ত্র বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে না তো? এর একটি ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হতো।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম অংশীদার। যথেষ্ট সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে সেনাবাহিনী বিশ্বের সর্বত্র কাজ করছে। তাদের জন্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় অস্ত্র কেনার যুক্তি গ্রহণযোগ্য। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারত নিজে বিশ্বের এক নম্বর (শতকরা ১৩ ভাগ) অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। প্রথমদিকের যে ১০টি দেশ বিশ্বে অস্ত্র রফতানি করে তার মধ্যে ভারত নেই। স্পিরির প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অস্ত্রের অন্যতম উৎস চীন, শতকরা ৭৩ ভাগ। সুতরাং বোঝাই যায় ভারত এখানে ঢুকতে চাচ্ছে। অস্ত্র আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজন, তবে তা যেন হয় আধুনিক। বাংলাদেশ যেন বাতিলকৃত বা পুরনো অস্ত্রের বাজারে পরিণত না হয়। আমাদের সেনা নেতৃত্ব নিশ্চয়ই এটি উপলব্ধি করবেন।

প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকে কোথাও কোনো ‘শর্ত’ আরোপ করা হয়েছে কিনা, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। এর আগে ভারত নেপালের সঙ্গে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল, তাতে ‘শর্ত’ ছিল। বলা হয়েছিল, নেপাল যদি তৃতীয় দেশ থেকে অস্ত্র কেনে, সেক্ষেত্রে প্রথম পক্ষের (অর্থাৎ ভারত) সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। নেপাল যখন চীনের কাছ থেকে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চেয়েছিল, ভারত তা আটকে দিয়েছিল। বলতে দ্বিধা নেই, ভারত এ অঞ্চলে চীনের ‘অতি তৎপরতার’ ব্যাপারে উৎকণ্ঠিত। চীন এ অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াচ্ছে। চীন যে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশ এ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ভারতের উৎকণ্ঠা এ কারণেই। ভারতের আপত্তির কারণেই বাংলাদেশ সোনাদিয়ায় চীনের সহযোগিতায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারেনি। তা সত্ত্বেও কুতুবদিয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের নৌ-বিশারদদের ভয়, সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মিত হলে চীনা সাবমেরিন এখানে আসতে পারে! শ্রীলংকার হামবান-তোতায় চীনা সাবমেরিন ডকিং করেছিল। এটা ছিল ভারতের শঙ্কার কারণ এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি। যদিও কী ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছিল, তা স্পষ্ট করেনি ভারত। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে পরে ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হয়েছিল। এবং পরবর্তী সময়ে সিরিসেনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে শ্রীলংকায় চীনের প্রভাব কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। শ্রীলংকার পাশাপাশি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গাওদারে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর চীনারা করে দিয়েছে। গাওদারে চীনা সাবমেরিন নিয়মিত আসা-যাওয়া করে এ তথ্য ভারতের গোয়েন্দাদের কাছে আছে। তাই গাওদারের নিকটবর্তী ইরানি সিসতান-বেলুচিস্তান প্রদেশের চাকবারে ভারত একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। বুঝতে কষ্ট হয় না, এ অঞ্চল ঘিরে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব বাড়ছে। কাজেই সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হবে, তা ভারত চাইবে না। শেষ পর্যন্ত সোনাদিয়া প্রজেক্টটি পরিত্যক্ত বলেই মনে হয়। চীন এখানে ভারতের পাশাপাশি বিনিয়োগ করতে রাজি। কিন্তু ভারতের তাতে সুস্পষ্ট আপত্তি রয়েছে।

ভারত থেকে অস্ত্র কেনা কিংবা নিরাপত্তা সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক নিয়ে যেহেতু একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে, সেহেতু তা প্রকাশ করাই মঙ্গল। আগেই বলেছি, স্পিরির গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অর্থাৎ অস্ত্র, বিমান, জাহাজ ইত্যাদির অন্যতম উৎস চীন। এর পরের অবস্থান রাশিয়ার, শতকরা ১৮ ভাগ। তৃতীয় অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের, শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ। ভারত থেকে অতীতে কোনো অস্ত্র কেনা হয়নি। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বেলাল চীনে গিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। তখন চীন থেকে ৫টি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, ৪৪টি ট্যাংক ও ১৬টি জেট যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছিল। বেগম জিয়ার চীন সফরের সময় (ডিসেম্বর ২০০২) চীনের সঙ্গে একটি সামরিক সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে তৎকালীন চীনা জেনারেল জু কি লিয়াংয়ের (ভাইস চেয়ারম্যান, মিলিটারি কমিশন, কমিউনিস্ট পার্টি) ঢাকা সফরের সময় ৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর মস্কো সফরের (২০১৩) সময় রাশিয়ার সঙ্গে একটি অস্ত্র ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। রাশিয়া এ খাতে ঋণ দিয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে মিগ-২৯ বিমান, বিটিআর-৮০, ব্রেম-কে ও বিএমএম ধরনের আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার এবং এম-আই ১৭১ ধরনের ৩টি হেলিকপ্টার কিনবে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় নৌবাহিনীতে এসডব্লিউএডিএস ইউনিটও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অর্থাৎ অনেক দেশ থেকেই বাংলাদেশ অস্ত্র কিনছে। এখন ভারত তাতে যোগ দিল। দেখতে হবে ভারতীয় অস্ত্র আমাদের কতটুকু কাজে লাগে।

এটা সত্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসংক্রান্ত অন্য বিষয়গুলো চাপা পড়ে গেছে। বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে গঙ্গা ব্যারাজ চুক্তির ব্যাপারে ভারত আগ্রহ দেখাতে পারে। একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের ভেতরে একটি রিজার্ভিয়ার তৈরি করে পানি ধরে রাখা হবে এবং শুষ্ক মৌসুমে তা ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ সেক্টরে বিনিয়োগ করবে এবং সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতীয় এলাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের মনোভাব ইতিবাচক হতে হবে এবং ভারতের সম্মতির ব্যাপারে একটি চুক্তি হতে হবে। জ্বালানিসংক্রান্তও ৭টি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে কানেকটিভিটির আওতায় একটি চুক্তি হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়েনি। কিন্তু বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির পরিমাণ বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের পণ্য আমদানি-রফতানিতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছি, তাতে ভারতের সাতবোন রাজ্যের পণ্য ‘হ্যান্ডেল’ করব কীভাবে? ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা তাদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কানেকটিভিটির আওতায় শুধু ভারতকে সুযোগ দিলে প্রশ্ন উঠবেই। আমাদের পণ্যের ভারতে প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে যেসব ‘জটিলতা’ রয়েছে, তার সমাধানও প্রয়োজন।

ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। তার সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে আমরা উপকৃত হতে পারি। আঙ্কটাডের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। বর্তমানে উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬ নম্বরে (ভারতের অবস্থান ৬০, আর পাকিস্তানের ৫২তম)। সুতরাং উন্নয়ন আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। এ ক্ষেত্রে ভারত যে আমাদের অগ্রযাত্রায় সহায়ক শক্তি হতে পারে, তাতে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা সম্পর্কটা বৃদ্ধি করতে চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে। ভারতকেও আমাদের দেয়ার অনেক কিছু আছে। ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। ভারত একতরফাভাবে এ সুযোগটি নিচ্ছে। নেপাল ও ভুটানকে সেই সুযোগ দিচ্ছে না- এ ধরনের অভিযোগও আছে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি। এ চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হবে সেটিই আসল কথা। এ চুক্তি কিংবা ভারতীয় অস্ত্র দিয়ে যদি আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ ও আধুনিকমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয় এবং তাতে করে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। আমাদের উন্নয়নে ভারতকে যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি প্রয়োজন রয়েছে চীনকেও। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছেন, বাংলাদেশের জন্য সেটিই সঠিক নীতি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে আমরা স্বাগত জানাই এবং আশা করি যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে, তাতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে।

ড. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

tsrahmanbd@yahoo.com

http://www.jugantor.com/sub-editorial/2017/04/06/115448/