১ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:২২

চিকিৎসকেরা হতবাক

কোনো লাশের অর্ধেক অংশ নেই, কোনো লাশের শুধু মাথা আছে। এখানে চারটি শিশু ছিল। শিশুদের বীভৎস লাশ দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না। মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে উগ্রবাদীদের আস্তানায় সোয়াতের অভিযানের পর উদ্ধার হওয়া সাতটি লাশের ময়নাতদন্ত শেষে এভাবেই বলছিলেন চিকিৎসক দলের প্রধান ডা: আবু ইমরান। তিনি বলেন, ‘লাশের ছিন্নভিন্ন অংশ দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। সব লাশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আমার ১২ বছরের চিকিৎসাজীবনে এমন বীভৎস লাশের ময়নাতদন্ত আর করিনি।’ গতকাল শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষ হয়। ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকেরা জানান, ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বোমার বিস্ফোরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। লাশগুলোর সুরতহাল প্রস্তুতকারী পুলিশ কর্মকর্তা মৌলভীবাজার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালিকও লাশগুলো দেখে হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘অনেক লাশের সুরতহাল করেছি। এমন সুরতহাল আর কখনোই করিনি। বৃহস্পতিবার রাতে সুরতহাল করার পর থেকে আমি খেতেও পারছি না। জানালার গ্রিলের মধ্যে ছিন্ন ভিন্ন লাশের বিভিন্ন অংশ দেখতে পেয়েছি। পরে এগুলো সংগ্রহ করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।’

চিকিৎসকেরা জানান, সাতজনের মধ্যে চারজন শিশু, দু’জন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছে। এর মধ্যে দুই থেকে তিন মাস বয়সী এক শিশু রয়েছে। ওই শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। শিশুটির শুধু মাথার অংশটি পাওয়া গেছে। অন্য তিন শিশুর সবাই মেয়ে। তাদের একজনের বয়স দুই বছর। অন্য দু’জনের বয়স সাত ও ১০ বছর। তাদের লাশেরও একই অবস্থা। তারা জানান, দু’জন নারীর মধ্যে একজনের বয়স ২৫ ও অপরজনের বয়স হবে ৩৫ বছর। একজন নারীর শরীরের অর্ধেক চিহ্নিত করা গেছে এবং অপরজনের শুধু মাথা ছিল। পুরুষের বয়স ৩৫ বছরের মতো হবে। তার পেটের অংশে ছিন্ন ভিন্ন ছিল। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: পার্থ সারথী দত্ত কাননগো জানান, পুরুষের মুখে ছোট দাড়ি রয়েছে। বোমার বিস্ফোরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। চারজনের একটি মেডিক্যাল টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। টিমের প্রধান আবু ইমরান। অন্যরা হলেনÑ অশোক ঘোষ, সুব্রত কুমার রায় ও পলাশ রায়।
প্রসঙ্গত, উগ্রবাদীদের আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার রাত থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামে আরেকটি বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
পরে কাউন্টার টেরোরিজমের সোয়াত টিম বুধবার বিকেল থেকে নাসিরপুরের আস্তানায় অভিযান শুরু করে। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন হিটব্যাক’। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই অভিযান শেষ হয়। এতে এক পুরুষ, দুই নারী ও চার শিশু নিহত হয়।
পুলিশ জানায়, অভিযান শুরুর পরপরই আত্মঘাতী বিস্ফোরণে তাদের সবার দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। ওই অভিযানের পর গতকাল সকাল থেকে বড়হাট এলাকার উগ্রবাদীদের আস্তানায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ শুরু করে সোয়াত সদস্যরা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/208510