১ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:০৭

ব্রেক্সিট নিয়ে শুরুতেই মতপার্থক্য বৃটেন-ইইউ’র

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনায় ‘যথেষ্ট’ অগ্রগতির আগে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। যুক্তরাজ্য ইইউ নাগরিকদের অধিকার ও ইইউ’র বাজেটে দেশটির প্রতিশ্রুত অর্থসহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আগে অগ্রগতি দেখতে চায়। কিন্তু বুধবার বৃটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরুর পর বলেছিল, প্রস্থানের বিভিন্ন ইস্যু ও দু’পক্ষের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে একই সঙ্গে আলোচনা করতে চায় তারা। কিন্তু ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রধান ডনাল্ড টাস্কের স্পষ্ট মন্তব্য, প্রস্থানের আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হলেই কেবল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

শুক্রবার মাল্টায় এক সংবাদ সম্মেলনে টাস্ক বলেন, বৃটেনের কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন একই সময়ে সব ইস্যুতে আলোচনা শুরু করতে। কিন্তু সেটা হবে না। তার ভাষ্য, ‘শুধুমাত্র এই প্রস্থানের ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এই আলোচনা কঠিন ও জটিল হবে। মাঝে মাঝে দ্বন্দ্বমূলকও হতে পারে। কিন্তু ইইউ কোনো শাস্তিমূলক অবস্থান নেবে না।’ এ সংক্রান্ত একটি খসড়া গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে ইইউ। খুব শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের কাছে পাঠানো হবে।
টাস্ক বলেছেন, আগামী ২ বছরের আলোচনা চলাকালীন যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই ইইউ’র নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে, ইইউ বাজেটে দেশটির প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান ও ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারিক এখতিয়ার বহাল রাখতে হবে।
ইইউর খসড়া গাইডলাইনে বলা হয়, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি, আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হলো কিনা এবং পরবর্তী পর্যায়ে কখন যাওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে কাউন্সিল। এতে আরো বলা হয়, ২ বছরের আলোচনা শেষে বৃটেন যদি ইইউর অভিন্ন বাজারে থাকতে চায়, তাহলে দেশটিকে ‘চারটি স্বাধীনতা’র সবক’টিই মেনে নিতে হবে। এর অর্থ, ইউরোপজুড়ে অন্যান্য দেশের অবাধ অভিবাসন গ্রহণ করতে হবে বৃটেনকে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিছু বেছে নেয়া চলবে না। কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে পৃথকভাবে কোনো সমঝোতা হবে না। এদিকে এক জ্যেষ্ঠ ইইউ কূটনীতিক বলেছেন, ইইউভুক্ত দেশগুলোর ঐক্য বিনষ্ট করার কোনো চেষ্টা করলে যুক্তরাজ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, সেক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত কোনো চুক্তিই দু’পক্ষের মধ্যে হবে না। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাজ্য। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও তার ব্রেক্সিট মন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাজ্য অভিন্ন বাজার থেকে বের হয়ে যেতে চায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র এই খসড়া গাইডলাইন সম্পর্কে বলেছেন, এটি এখনো খসড়া। যখন ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র এটি অনুমোদন দেবে, তখন আমরা আলোচনা শুরু করতে চাই। বৃটেনের লেবার দলের নেতা ওয়েন স্মিথ বলেছেন, টাস্কের বিবৃতিই প্রমাণ করে তেরেসা মের বাগাড়ম্বর কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছে। বৃটেনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অবাস্তব কল্পনা। প্রধানমন্ত্রী বৃটেনের জন্য আগের মতো একই বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ইইউর খসড়া গাইডলাইনে তা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
তেরেসা মে বুধবার টাস্কের কাছে অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয়করণ চিঠি পাঠিয়ে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন। ব্রেক্সিট বিষয়ে শিগগিরই ইইউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনকে সামনে রেখে ২৯শে এপ্রিল দুই নেতার বৈঠক হবে লন্ডনে। তবে ওই ইইউ সম্মেলনে থাকবে না যুক্তরাজ্য। মে বা জুনের শুরুর দিকে দু’পক্ষের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে পারে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=59742