১ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:০৪

ওষুধও নিরাপদ নয়

|| আশিকুল হামিদ || পাঠকদের অনেকেও নিশ্চয়ই ফেইসবুকে রয়েছেন। ফেইসবুক দেখেনও মাঝেমধ্যে। এখানে বিচিত্র, এমনকি ভয়ংকর অনেক কিছুই দেখতে হয়। জানা যায় অনেক ভীতিকর তথ্যও। যেমন ক’দিন আগে একজন একটি প্রেসক্রিপশনের ছবি হাজির করেছেন ফেইসবুকে। এতে দেখা গেলো, ওই পৃষ্ঠাটিতে আর একটি লাইন লেখার মতো জায়গাও খালি নেই! পৃষ্ঠার একদিকে চিকিৎসক মহোদয় নানা রকমের টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যদিকটিতে রয়েছে একের পর এক ওষুধের নাম। ফেইসবুকে যিনি পাঠিয়েছেন তিনি লিখেছেন, অন্য কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, যে রোগীর জন্য এত টেস্ট ও ওষুধের আয়োজন তার আসলে সেগুলোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘নাম করা’ ওই চিকিৎসক মহোদয় অমন একখানা প্রেসক্রিপশনের আড়ালে বিপুল খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। এর ক’দিনের মধ্যেই আরেক রসিকজন একটি কার্টুন ছেড়েছেন ফেইসবুকে। এতে দেখা গেলো, সামান্য অসুখের জন্য ওষুধের পাহাড় চাপানো হয়েছে এক রোগীর মাথায়। ওষুধের চাপে বেচারার তখন রাস্তায় পড়ে যাই যাই অবস্থা!
চিকিৎসার নামে দেশে আসলে এভাবেই চরম বিশৃংখলা ও স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। এ ব্যাপারে সামনে ডাক্তার বা চিকিৎসকদের রাখা হলেও অন্তরালে রয়েছে ওষুধের ব্যবসায়ীরা। রয়েছে নাম করা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কোম্পানিও। ভীতি ও আশংকার কারণ হলো, সব জেনেও সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় খাদ্যপণ্যের মতো সাধারণ ওষুধের পাশাপাশি ভেজাল দেয়া হচ্ছে এমনকি জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধেও। ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধে এরই মধ্যে ছেয়ে গেছে দেশের বাজার। এসব বিষয়ে জানা সম্ভব হচ্ছে না বলে জনগণও ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধই কিনছে এবং খাচ্ছে। তারা শুধু অসুস্থ ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে না, নানা অসুখে ভুগে ব- মানুষ মারাও যাচ্ছে। এ ধরনের ওষুধের তালিকা বেশ দীর্ঘ। প্রস্তুতকারী কোম্পানীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সারসহ মারাত্মক কিছু রোগের জন্য ব্যবহৃত দুষ্প্রাপ্য ও খুবই দামী বিভিন্ন ওষুধ। তাছাড়া পেনিসিলিন, নন- পেনিসিলিন ও সেফালোস্পেরিনসহ অ্যান্টিবায়োটিক ধরনের কিছু বিশেষ ওষুধও রয়েছে, যেগুলো কঠিন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমন ২৯টি প্রস্তুতকারী কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছিল, যে কোম্পানীগুলো ভেজাল ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করে বলে কমিটি প্রমাণ পেয়েছিল।
কিন্তু দু’বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সরকার এমনকি নাম ধরে ধরে কমিটির উল্লেখ করা বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুত করা থেকে নিবৃত্ত থাকার জন্যও কোম্পানীগুলোকে নির্দেশ দেয়নি। এর ফলে একদিকে ওইসব কোম্পানী বহাল তবিয়তে তাদের ওষুধ প্রস্তুত করার রমরমা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের এই প্রশ্নসাপেক্ষ নমনীয় নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার নামান্তর মনে করে নতুন নতুন আরো কিছু কোম্পানীও ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধ প্রস্তুত করার অঘোষিত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টে এসব কোম্পানীর সংখ্যা ২৭ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে অন্তত ৫৬টি কোম্পানী বর্তমানে ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধ প্রস্তুত করার কার্যক্রম চালাচ্ছে। তথ্যাভিজ্ঞদের মতে কোম্পানীগুলোর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ, এই সংখ্যা জানা গেছে বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুসন্ধানে। এসবের বাইরে অন্য অনেক কোম্পানীর অস্তিত্ব ও কার্যক্রম থাকাটাই স্বাভাবিক। জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট নিয়ে মাস কয়েক আগে জাতীয় সংসদের এ সম্পর্কিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশ্নসাপেক্ষ কারণে তেমন কোনো বৈঠকের খবর জানা যায়নি। অথচ ওই বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সংসদীয় কমিটি সরকারকে কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলে কি না এবং সরকারও সে অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না- এসব বিষয়ে গভীর আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছিল জনগণ। কিন্তু সব আশার গুড়েই বালু ঢেলে দেয়া হয়েছে!
বলার অপেক্ষা রাখে না, ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধ প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক অপরাধই করে চলেছে ব্যবসায়ী নামের একটি বিশেষ গোষ্ঠী। গণমাধ্যমের রিপোর্টে নাম ধরে ধরে তাদের সম্পর্কে জানানোও হয়েছে। কিন্তু কোনো ওষুধ বা কোম্পানীর ব্যাপারেই সরকারি কোনো বিভাগ বা দফতরের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখনো হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি দেখা ও প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব যেসব সরকারি সংস্থার সেসবের কর্তাব্যক্তিদের ঘুষের বিনিময়ে থামিয়ে রাখা এবং ‘ম্যানেজ’ করা হচ্ছে। সামান্য কিছু নগদ অর্থের লোভে কর্তাব্যক্তিরা নানা রোগে বিপন্ন হয়ে পড়া জনগণকে নিশ্চিত বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। তাদের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। এভাবে দেশের বাজারে ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধের অবাধ বিক্রির কারণে সব মিলিয়েই এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসবই সম্ভব হচ্ছে আসলে সরকারের গাফিলতির কারণে। কারণ, বিএসটিআইসহ এমন অনেক সংস্থা ও বিভাগ রয়েছে যারা সঠিকভাবে যার যার দায়িত্ব পালন করলে এত বেশি ধরনের ওষুধে ভেজাল মেশানো এবং সেগুলো খোলা বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে বাস্তবে সেটাই হচ্ছে এবং হচ্ছেও বিপুল পরিমাণে। বড়কথা, ওষুধ কেবল নয়, চিনি থেকে ভোজ্যতেল ও মসলা এবং ফল পর্যন্ত এমন অনেক পণ্যেও ভেজাল ও বিষাক্ত উপাদান মেশানো হচ্ছে যেগুলো মানুষ প্রতি বেলার খাবারে ব্যবহার করে। এর ফলে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। দীর্ঘ মেয়াদে তারাই বরং বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে পুরো জাতিকেই ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বুঝে না বুঝে এবং অনেক ক্ষেত্রে টাকার লোভে এদেশেরই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নামধারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী জাতি ধ্বংসের এই ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে অংশ নিচ্ছে।
আমাদের পরিষ্কার অভিমত হলো, ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সদিচ্ছা থাকলে কোন ধরনের ওষুধে ও পণ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে সে বিষয়ে জানার জন্য এখন আর কষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ, এ বিষয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এরই মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। তাছাড়া খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটসহ অনেক সংস্থাই মাঝেমধ্যে ওষুধ ও খাদ্যপণ্য সম্পর্কে জরিপ ও গবেষণা করে থাকে। তাদের রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। সরকার চাইলে এসব রিপোর্টের ভিত্তিতেই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারে। জনবল বাড়িয়ে বিএসটিআইকেও সক্রিয় করে তোলা দরকার। পাশাপাশি দরকার সেই সব কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া, ঘুষের বিনিময়ে যারা জাতি ধ্বংসের কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধ যারা প্রস্তুত ও বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নিতে হবেই, সরকারকে একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন করার জন্যও তৎপর হতে হবে, যাতে কোনো ওষুধ কেনার আগে তারা সহজে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। সব মিলিয়ে সরকার ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধ এবং একই সঙ্গে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের ব্যাপারেও তৎপর হয়ে ওঠা দরকার। কঠোর শাস্তি দিতে হবে সেই সব গোষ্ঠীর লোকজনকে, যারা জনগণের জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
এবার ওষুধ প্রসঙ্গেই অন্য কিছু কথা। নিম্নমানের এবং নকল ও ভেজাল ওষুধ যথেচ্ছ দামে বিক্রি করার পাশাপাশি যখন-তখন দাম বাড়ানোসহ বিভিন্ন অনস্বীকার্য অভিযোগ রয়েছে দেশের ওষুধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এসবের সঙ্গে অতি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন এক গুরুতর অভিযোগ। গণমাধ্যমের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ওষুধের জালিয়াত চক্র সম্ভাব্য সকল পন্থাতেই রোগাক্রান্ত মানুষের বিপদ বাড়িয়ে চলেছে। তাদের অপতৎপরতার শিকার হয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত তো হচ্ছেই, ভুল চিকিৎসায় অনেকে অকালে মারাও যাচ্ছে। প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে, এই জালিয়াত চক্র দেশি-বিদেশি বড় বড় কোম্পানির বেশ কিছু ওষুধের মোড়ক ও প্যাকেটের -ব- নকল করে সেগুলোর ভেতরে নিজেদের তৈরি ওষুধ নামের নানা ধরনের ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল ঢুকিয়ে বাজারে বিপণন করছে। তারা বোতলেও ওষুধ নামের তরল পদার্থ বিক্রি করছে। এসব ওষুধ হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির মতো জটিল ও মারাত্মক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
অনুসন্ধানে আতংকিত হওয়ার মতো কিছু তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। যেমন এই জালিয়াত চক্র পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং ওষুধ প্রশাসনের লোকজন ও কর্মকর্তাদের নগদ অর্থে ঘুষের বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ করে থাকে। ফলে ঘটনাক্রমিক কিন্তু লোক দেখানো কিছু তৎপরতা চালানোর বাইরে জালিয়াতদের বিরুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় না। একই কারণে তাদের প্রতারণা ও রমরমা ব্যবসাও অব্যাহত থাকতে পারছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পঙ্গু ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এলাকার পাশাপাশি পুরনো ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট কচুক্ষেত মার্কেট এবং পিজি হাসপাতাল ও আজিজ সুপার মার্কেটসহ শাহবাগ এলাকার প্রায় সব ওষুধের দোকানেই জালিয়াত চক্রের সরবরাহকৃত ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। ভীতি ও উদ্বেগের কারণ হলো, সাধারণ ব্যবসায়ীরা তো বিক্রি করছেই, এমনকি ডাক্তারদের বড় অংশও কমিশন এবং উপঢৌকনের বিনিময়ে তাদের প্রেসক্রিপশনে এসব ওষুধের নাম লিখে থাকেন- যে বিষয়ে জানা গেছে ফেইসবুকে। দরকার না হলেও কেবলই জালিয়াত চক্রকে সন্তুষ্ট করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই ডাক্তাররা অমন গর্হিত কাজ করে চলেছেন। জিজ্ঞাসা করা হলে তারা ওষুধ প্রস্তুতকারী নামকরা কোম্পানি এবং আমদানিকারকদের কথা এমন নিরীহভাবে জানাচ্ছেন যেন জালিয়াত চক্রের অপতৎপরতার বিষয়ে কিছুই জানা নেই তাদের! অন্যদিকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দায়িত্বশীল পদে কর্মরত ডাক্তাররা লিখে দিচ্ছেন বলে রোগী ও তাদের স্বজনরা পরম বিশ্বাসের সঙ্গে ভেজাল ও নকল ওষুধই কিনছেন। রোগীদের খাওয়াচ্ছেনও। পরিণতিতে রোগ তো ভালো হচ্ছেই না, অনেক ক্ষেত্রে রোগীর জীবন বিপন্নও হচ্ছে। অনেকে দীর্ঘকালের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
প্রকাশিত রিপোর্টটিতে প্রসঙ্গক্রমে এসেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কথাও। কারণ, কোনো রকম অনুসন্ধান বা যাচাই না করেই এসব চ্যানেলে জালিয়াত চক্রের বাজারজাত করা বিভিন্ন ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। কোনো কোনো বিজ্ঞাপন এমনকি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্তও দেখানো হচ্ছে। কিছু ওষুধের বিজ্ঞাপন আবার এক সঙ্গে কয়েকটি চ্যানেল পাল্লা দিয়ে দেখাচ্ছে। ওদিকে এসব ওষুধই যেহেতু ‘দায়িত্বশীল’ চিকিৎসকরা তাদের প্রেসক্রিপশনে লিখে চলেছেন সেহেতু রোগী ও দর্শকদের মনে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারছে না। তারা মনে করছেন, সবকিছুর পেছনে নিশ্চয়ই ওষুধ প্রশাসন তথা সরকারের অনুমোদন রয়েছে। একই কারণে এসব ওষুধ কেনার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে না। শুধু খাবার ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল নয়, নানা রোগের ইঞ্জেকশন তো বটেই, এমনকি মেদ-ভুড়ি কমানোর জন্য তথাকথিত ম্যাজিক বেল্টও বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর গ্যারান্টি দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন হারবাল ওষুধও। এভাবে সব মিলিয়েই দেশের ওষুধের বাজারে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বড় কথা, সবই ঘটে চলেছে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও ওষুধ প্রশাসনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে।
ওষুধের বাজারের এই অবস্থা যে সকল বিচারেই অত্যন্ত ভীতিকর সেকথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারের উচিত, কাল বিলম্ব না করে জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠা এবং মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অবসান ঘটানো। এ উদ্দেশ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তৎপর করতে হবে। তারা যাতে নগদ নারায়ণের লোভে জালিয়াতদের ছাড় না দেয় সে ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখতে হবে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে জড়িত ও কর্মরত ডাক্তারদের প্রতিও নজর রাখা দরকার। তারা যাতে নকল ও অপ্রয়োজনীয় কোনো ওষুধের নাম প্রেসক্রিপশনে না লেখেন এবং রোগী ও তার স্বজনদের ওপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপাতে না পারেন। এ প্রসঙ্গে ডাক্তারদের দায়িত্বের দিকটিও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা দরকার। রোগীদের জীবন বাঁচানো এবং সুচিকিৎসা দেয়াই তাদের প্রধান দায়িত্ব। এসব কারণে দরকারি ওষুধ কোন কোম্পানি প্রস্তুত করেছে সেটা দেখার চাইতে বেশি দরকার এমন কোম্পানির ওষুধই প্রেসক্রিপশনে লেখা, যার সাহায্যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। মরণাপন্নদের জীবন বেঁচে যাবে। অন্যদিকে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে যে, কমিশন এবং উপঢৌকনের বিনিময়ে তারা বিশেষ কিছু কোম্পানির ওষুধই প্রেসক্রিপশনে চাপিয়ে দেন। এসবের মধ্যে নকল ও ভেজাল ওষুধই কেবল থাকে না, এমন অনেক ওষুধও থাকে- যেগুলো পুরনো রোগ সারানোর পরিবর্তে রোগীর অবস্থাকে আরো মারাত্মক করে তোলে। এমনকি রোগীর জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যাতে কেবলই অর্থের লোভে বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে পারে সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। সব মিলিয়েই মানুষের জীবনকে বিপন্ন করার চলমান কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটানো দরকার। একই সঙ্গে দরকার জালিয়াতদের গ্রেফতার করে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়াও।

http://www.dailysangram.com/post/278009-