২৮ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:৪১

লন্ডনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ওয়েস্টমিনিস্টার সেতুতে মুসলিম নারীদের মানববন্ধন

তাদের মাথায় স্কার্ফ, পরনে বোরকা। হাতে হাত ধরে এসব মুসলিম নারী লন্ডনে সন্ত্রাসে শিকারদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে। এ সেতুতেই সন্ত্রাসী খালিদ মাসুদ একটি কালো হুন্দাই গাড়ি নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর তা তুলে দেন।
গাড়ি থেকে নেমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা পিসি কেইথ পালমারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করার পর নিজেও পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার গাড়ি চাপায় আরো ৩ ব্যক্তি মারা যায়। এই সন্ত্রাসে অন্তত ৪০ জন আহত হয়।
সন্ত্রাসের শিকারদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মুসলিম নারীরা ৫মিনিটের মানববন্ধনে অংশ নেন। এসময় তারা একে অপরের হাত ধরে রেখেছিলেন যা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এসময় বিগবেনে বিকেল ৪টা বাজার ঘন্টাও বেজে ওঠে।
মুসলিম নারীদের পরনে ছিল নীল স্কার্ফ এবং তারা বলেন, গত বুধবার সেখানে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আশার প্রতীক হিসেবেই তারা তা পরিধান করেছেন। ওমেন’স মার্চ অন লন্ডন নামে একটি সংগঠন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ৪০ বছর বয়স্কা ফারিয়া খান যিনি সারবিটনের বাসিন্দা, তিনি বলেন, এই সেতুর ওপর যে ঘৃণা সন্ত্রাস ঘটে গেছে তার বিরুদ্ধে আমি আমার অনুভূতি আর শক্তিশালী প্রতিবাদ জানাতেই আমি এখানে এসেছি। আমরা সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসে আক্রান্ত হই তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অপ্রতিরোধ্য ভূমিকা জানান দিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখানে এসেছি।
৫৭ বছরের আরেক মুসলিম নারী সারাহ ওয়াসিম জানান, লন্ডনে যখন কোনো হামলা ঘটে তার মানে সে হামলা আমার ওপরেই যেন ঘটল, এমনটাই আমি মনে করি এবং আমি তার প্রতিবাদ জানাই। কারণ এধরনের সন্ত্রাস আমাদের সবার ওপর হামলার সমান। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ইসলাম প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। এধরনের হামলা জঘন্য।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আয়েশা মালিক জানান, এধরনের মানববন্ধন প্রমাণ করে এই শহরের মানুষ গণতান্ত্রি ও ঐক্যবদ্ধ, তারা গণতন্ত্রকে সমর্থন করে। ৩৪ বছর বয়স্কা ও দুই সন্তানের এই জননী থাকেন সারে এলাকায়। তিনি জানান, মুসলিম হিসেবে এধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। কারণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থানই ইসলামের নীতি যা আমরা ধারণ করি। লন্ডনের বাসিন্দা ম্যারি বেনেট জানান, ছোট পদক্ষেপ হলেও তিনি এখানে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এ মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন।
অবসরপ্রাপ্ত এই স্বাস্থ্যসেবাকর্মী বলেন, আমি দেখাতে এসেছি ধীর পদক্ষেপ হলেও আমরা ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এধরনের অবস্থানকে অব্যাহত রাখব। এটা আমার শহর, এবং এধরনের মানববন্ধনের মোট ছোট পদক্ষেপ থেকেই সৃষ্টি হয় জীবনের।
এর আগে সন্ত্রাসী খালিদ মাসুদের ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা পিসি কেইথ পালমার’এর প্রতি তার পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। পালমারের স্ত্রী ও পিতা এক বিবৃতিতে বলেন, পিসি কেইথ পালমারের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে ভালবাসা ও সমর্থন দিয়ে বলছি তাকে আমরা অকৃত্রিম সমর্থন ও গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। তাকে আমরা হারালেও তার জন্যে এক অবিশ্বাস্য ধরনের গর্ববোধ করছি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কেইথ শুধু একা লড়ছেন না এবং এ লড়াইয়ে সে যে নিঃস্বার্থ সাহসিকতার সঙ্গে মানুষকে রক্ষার প্রেমময় পরিচয় দিয়ে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়েছেন সে জন্যে তাকে শুধু ধন্যবাদ দেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং তাকে উপলব্ধি প্রয়োজন।

http://www.dailysangram.com/post/277425-