২৭ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ১:৩৮

অষ্টম শ্রেণীর আনন্দপাঠের সব গল্প বিদেশী

পাঠ্যবইয়ের বিষয় নির্বাচন (৫)

অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহপাঠ্য আনন্দপাঠে মোট সাতটি গল্প রয়েছে। সবগুলোই বিদেশী। অর্থাৎ বিদেশী গল্প অবলম্বনে অথবা সরাসরি বিদেশী গল্প অনুবাদ করে তা পাঠ্য করা হয়েছে। অনেক অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
আনন্দপাঠে যেসব গল্প রয়েছে সেগুলো হলো : কিশোর কাজিÑ আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে, রাজকুমার ও ভিখারীর ছেলেÑ মার্ক টোয়েন, রবিনসনক্রুসোÑ ড্যানিয়েল ডিফো, সোহরাব রোস্তমÑ মূল মহাকবি কাসেম ফেরদৌসী, মার্চেন্ট অব ভেনিসÑ উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, রিপভ্যান উইংকলÑ ওয়াশিংটন আরভিং রচিত গল্প অবলম্বনে, সাড়ে তিন হাত জমিÑ লেভ তলস্তয়।
একজন অভিভাবক বলেনÑ কেন? বাংলা ভাষায়, বাংলা সাহিত্যে কি গল্পের এত অভাব পড়েছে যে, সব বিদেশী গল্প নিয়ে বই পাঠ্য করা হবে? তিনি বলেন, বিদেশী গল্প থাকতে পারে কিন্তু তার একটা মাত্রা থাকতে হবে। সোহরাব রোস্তম আমরাও ছোটবেলায় পড়েছি আর আবেগাপ্লুত হয়েছি। এ ধরনের কিছু গল্প থাকায় কোনো দোষ নেই। কিন্তু সব গল্প বিদেশী হতে হবে কেন? এ কেমন মানসিকতা আমাদের? কারা এসব বই তৈরি করে?


আরেকজন অভিভাবক বলেন, একটি বইয়ে সবগুলো বিদেশী গল্প পাঠ্য করায় স্বাভাবিকভাবেই মনে হয়, আমাদের দেশে ভালো কোন লেখক ও কথাসাহিত্যিক নেই। বাংলা ভাষায় ভালো কোনো গল্প-উপন্যাস নেই। আসলে এভাবে গণহারে বিদেশী গল্প পাঠ্য করার মাধ্যমে আমাদের দেশের লেখক-সাহিত্যিকদেরই হেয় করা হলো। তিনি বলেন, বিদেশী গল্প লেখা হয়েছে বিদেশী সংস্কৃতি ও প্রেক্ষাপট অবলম্বনে। আর আমাদের দেশের বা বাংলা সাহিত্যে যেসব গল্প রয়েছে তা আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রেক্ষাপট অবলম্বনে রচনা করা হয়; যা আমাদের জীবনঘনিষ্ঠ এবং বুঝতেও সহজ। তাই দেশীয় গল্প পাঠ্য করাই ভালো। বিদেশী গল্প দু-একটা থাকতে পারে, তাতে বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে আমাদের ছেলেমেয়েরা ধারণা লাভ করবে; কিন্তু এভাবে সব ক’টি বিদেশী গল্প থাকা উচিত নয়।
পুনরাবৃত্তি : সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে ‘বাংলাদেশের ুদ্র জাতিসত্তা’ নামে একটি লেখা রয়েছে। অপর দিকে চতুর্থ শ্রেণীতে ‘বাংলাদেশের ুদ্র নৃগোষ্ঠী’ নামে একটি লেখা রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীতে বাংলাদেশের ুদ্র নৃগোষ্ঠী শীর্ষক লেখায় চাকমা, মারমা, মনিপুরী, সাঁওতালÑ এ চারটি নৃগোষ্ঠীর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রধান এ চারটি নৃগোষ্ঠী ছাড়া আরো যেসব নৃগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে বাংলাদেশে, তাদের সম্পর্কে আলোচনা না করে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ছবিসহ। অপর দিকে সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে বাংলাদেশের ুদ্র জাতিসত্তা নামে যে লেখা রয়েছে সেখানেও চাকমা, মারমা, মনিপুরী, সাঁওতালÑ এ প্রধান চারটি নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তবে সপ্তম শ্রেণীর তুলনায় চতুর্থ শ্রেণীর বইয়ে প্রধান চারটি নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীতে প্রধান চারটি নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকা সত্ত্বেও সপ্তম শ্রেণীতে তাদের নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। অপর দিকে সাধারণ নিয়ম হলোÑ আগের শ্রেণীতে বর্ণিত কোনো বিষয় নিয়ে যদি পরের শ্রেণীতে পাঠ্য করা হয়, তবে সেখানে ওই বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়। কিন্তু এখানে ঘটেছে এর উল্টো। তবে সপ্তম শ্রেণীতে ত্রিপুরা ও গারো নামে দু’টি নৃগোষ্ঠী বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে, যা চতুর্থ শ্রেণীর লেখায় নেই।


একই ঘটনা ঘটেছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে। চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা বইয়ে ‘মহীয়সী রোকেয়া’ নামে একটি লেখা রয়েছে। আবার সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে একটি লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর লেখায় তেমন অতিরিক্ত কোনো তথ্য নেই। শুধু লেখার ধরন একটু ভিন্ন। বেগম রোকেয়ার জীবনী নিয়ে দুই শ্রেণীতে দু’টি লেখায় তথ্যগত দিক থেকে সামান্য পার্থক্য থাকলেও লেখার কলেবরও একই। বরং দু’টি লেখায় তথ্যের কিছু গরমিল রয়েছে। যেমন চতুর্থ শ্রেণীর বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের প্রথম ছাত্রী সংখ্যা ছিল পাঁচজন। সপ্তম শ্রেণীর বইয়ে ছাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে আটজন।