২৭ মার্চ ২০১৭, সোমবার, ১:৩৬

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে গতি আসছে

আড়াই হাজার কোটি টাকার কম দরপত্রে কাজ পাচ্ছে মারুবিনি

গতি ফিরে পাচ্ছে দেশে প্রস্তাবিত সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র মাতাবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প। গুলশান হোলে আর্টিজান হামলার পর নিরাপত্তার কারণে জাপানি ঠিকাদারেরা দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়ায় আবার তারা ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে দু’টি কোম্পানি এ প্রকল্পের দরপত্র জমা দিয়েছিল। গত ২২ মার্চ তা খোলা হয়। এর মধ্যে সুমিতোমো করপোরেশন ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৩৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং মারুবিনি করপোরেশন ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকার দরপত্র দিয়েছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দুই কোম্পানির মধ্যে আর্থিক প্রস্তাবের পার্থক্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। সাধারণত সর্বনি¤œ দরদাতারই কাজ পাওয়ার কথা। সে হিসেবে মারুবিনি করপোরেশন দেশের এই বড় প্রকল্পের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। তবে আর্থিক দরপত্র ও কোম্পানি দু’টির আর্থিক সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


জানা গেছে, জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ঋণে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। আমদানি করা কয়লা দিয়ে এ কেন্দ্র চলবে। সরকার ২০১৫ সালের আগস্টে চট্টগ্রামের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। এতে কয়লা উঠনো-নামানোর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একনেকে অনুমোদন পাওয়া কার্যপত্রে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপানের উন্নয়ন সাহায্য সংস্থা জাইকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কোল পাওয়ার জেনারেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) ২০১৫ সালের ৪ জুন এ প্রকল্পের জন্য প্রি-কোয়ালিফিকেশন (পিকিউ) আহ্বান করে। দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে দু’টি কোম্পানি চূড়ান্ত করা হয়। মূল্যায়ন কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পরে দু’টি কোম্পানিকে মূল দরপ্রস্তাব দাখিলের আহ্বান জানায়।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই মাসে গুলশানে হোলে আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের মধ্যে সাত জাপানি নাগরিক থাকায় ওই সময় জাপানি ঠিকাদারেরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। ফলে দেশের বড় এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ ঝুলে পড়ে। পরে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহে প্রস্তাব জমা দেয়ার সময় তিন দফায় সময় বাড়িয়ে গত ৩১ জানুয়ারি শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়। সরকার জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও নিরাপত্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের আশ্বাসে কোম্পানিগুলো গত জানুয়ারিতে দরপ্রস্তাব জমা দেয়। তারা পৃথক খামে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় গত ২২ মার্চ উভয় কোম্পানির আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক প্রস্তাবে দুই কোম্পানির মধ্যে দরের পার্থক্য হলো প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে প্রাথমিকভাবে এগিয়ে রয়েছে মারুবিনি করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে রয়েছে মিতশুবিশি হিটাচি পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড এবং টিওএ করপোরেশন। প্রতিযোগী সুমিতোমোর সাথে রয়েছে তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশন। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মারুবিনি হরিপুরে ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া ভেড়ামারা ও বিবিয়ানাতে আরো দু’টি কেন্দ্র নির্মাণ করছে এ কোম্পানি। বাংলাদেশে মারুবিনির কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেও সুমিতোমোর সে অভিজ্ঞতা নেই।

এ ছাড়া জাইকার ঋণ প্রদানের অন্যতম শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, দরপত্র দাতাদের যথেষ্ট আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সুমিতোমোর অন্যতম অংশীদার তোশিবা লোকসানে রয়েছে। পিকিউ জমা দেয়া তোশিবার আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আনঅফিসিয়ালি প্রকাশ করা আর্থিক প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির ৪৯ হাজার ৯৯০ কোটি জাপানি ইয়েন লোকসান দিয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এ লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৯৪০ কোটি জাপানি ইয়েন। চলতি বছরেও মোটা অঙ্কের লোকসানের আভাস দিয়েছে কোম্পানিটি। এ কারণে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও আর্থিক সক্ষমতার বিচারে জাপানি কোম্পানি মারুবিনিই দেশের বড় এ প্রকল্পের কাজ পেতে পারে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/207056