২৫ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ৯:২২

ছন্দহীন ছড়া কবিতায় আনন্দবঞ্চিত শিশুরা

পাঠ্যবইয়ের বিষয় নির্বাচন

অভিভাবক ও শিক্ষকেরা মনে করেন শিশুদের জন্য নির্বাচিত ছড়া, কবিতা হবে এমন যে, এক লাইন উচ্চারণ করলে পরের লাইন এমনিতেই ঠোটের আগায় এসে যাবে ছন্দের মিলের কারণে। এ জাতীয় ছড়া কবিতা শিশুরা সহজে মনে রাখতে পারে এবং পড়েও আনন্দ পায়। আবার ছন্দের মিলের সাথে সুন্দর অর্থ রয়েছে কি না সেটাও বিবেচনা করা উচিত। কারণ শুধু ক্ষণিক বিনোদন প্রদান পাঠ্যবইয়ের উদ্দেশ্য হতে পারে না; মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোই মূল উদ্দেশ্য। সেদিকটি বিবেচনায় রাখা উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে এমন সব ছড়া কবিতা নির্বাচন করা হয়েছে যার না আছে তেমন ছন্দ মিল, না আছে ভালো কোনো অর্থ। হৃদয়গ্রাহী তো নয়ই। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিষয় বিবেচনা করে ছড়া-কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে। বিষয়কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে উপেক্ষা করা হয়েছে ওইসব ছড়া-কবিতার মানের দিকটি বা শিশুদের জন্য তা কতটা উপযুক্ত সে বিষয়টি।
চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা বইয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘মা’ কবিতাটি পাঠ্য করা হয়েছে। অনেক অভিভাবক শিক্ষকের মতে এ কবিতাটি চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠ্য না করলেই ভালো হতো। এ কবিতায় যে ছন্দ রয়েছে, তা চতুর্থ শ্রেণীর শিশুদের মিলিয়ে পড়তে একটু বেগ পেতে হয়। অথচ সব বয়সী শিশুর জন্য কাজী নজরুল ইসলামের অনেক সুন্দর সুন্দর ছড়া, কবিতা রয়েছে । এভাবে বিভিন্ন শ্রেণীতে নামকরা আরো অনেক কবির অনেক কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে, যা ওইসব শ্রেণীর শিশু-কিশোরদের জন্য উপযুক্ত নয় বলে মনে করেন অনেক অভিভাবক। খ্যাতিমান এসব কবিরই অনেক ছন্দময় অর্থবোধ শিশুতোষ ছড়া কবিতা রয়েছে। সেসব কেন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ে না তা ভেবে পান না অনেকে। খ্যাতিমান এসব কবির যেসব ছড়া কবিতা শিশুদের জন্য পাঠ্য করা হয়েছে, সে বিষয়ে অনেক শিক্ষক অভিভাবক আশঙ্কা করে বলেছেন এতে শিক্ষার্থীদের মনে এসব নাম করা কবি সম্পর্কে উঁচু ধারণা সৃষ্টি হবে না।
চতুর্থ শ্রেণীর জন্য পাঠ্য ‘মা’ কবিতার কয়েকটি লাইন এ রকম- যেখানেতে দেখি যাহা/মা-এর মতন আহা/একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,/মায়ের মতন এত/আদর সোহাগ সে তো/আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই।/হেরিলে মায়ের মুখ,/দূরে যায় সব দুখ,/মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান, মায়ের শীতল কোলে/সকল যাতনা ভোলে/কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান। /
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ে কবিতা অংশে প্রথমেই রাখা হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমাদের এই বাংলাদেশ’ শীর্ষক কবিতাটি। কবিতার কথাগুলো এ রকমÑ
সূর্য ওঠার পূর্বদেশ/বাংলাদেশ/আমার প্রিয় আপন দেশ/ বাংলাদেশ।/কবির দেশ বীরের দেশ/আমার দেশ স্বাধীন দেশ /বাংলাদেশ। / ধানের দেশ গানের দেশ/তেরো শত নদীর দেশ /বাংলাদেশ/আমার ভাষা বাংলা ভাষা/ মা শেখালেন মাতৃভাষা/ মিষ্টি বেশ । /মনের ভাষা জনের ভাষা/ এই ভাষাতে ভালোবাসা /মায়ের দেশ /বাংলাদেশ/আমাদের এই বাংলাদেশ।
একজন অভিভাবক বলেন, কবিতাটি তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠ্য না করলে ভালো হতো। এটা আরেকটু উপরের কাসের কবিতা বলেই মনে হচ্ছে। দেশ, দেশপ্রেম, দেশাত্ববোধ, প্রার্থনা বিষয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা রয়েছে। সেখান থেকে কোনো কবিতা বইয়ের শুরুতে রাখলে ভালো হতো বলে মনে করেন অনেকে।
তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্য আরেকটি ছড়া কবি আহসান হাবিবের ‘হাটে যাব’।
ছড়ার কথাগুলো এ রকমÑ হাটে যাব হাটে যাব ঘাটে নেই নাও /নি-ঘাটা নায়ের মাঝি আমায় নিয়ে যাও।/নিয়ে যাব নিয়ে যাব কত কড়ি দেবে?/কড়ি নেই কড়া নেই আর কিবা নেবে?
সোনামুখে সোনা হাসি তার কিছু দিও।/হাসিটুকু নিও আর খুশিটুকু নিও।
নবম দশম শ্রেণীতে নামকরা অনেক কবির কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু কবিতা রয়েছে, যা যেমন ছন্দময় তেমনি অর্থবহ এবং হৃদয়গ্রাহী। আবার কিছু কবিতা রয়েছে, যা তেমন ছন্দময় নয় । এসব কবিতার পরিবর্তে নামকরা কবিদের আরো অসংখ্য ছন্দময় অর্থবহ, হৃদয়গ্রাহী যেসব কবিতা রয়েছে সেসব থেকে বাছাই করলে ভালো হতে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/206544