২৪ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৪৪

সংকটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

নিয়ন্ত্রক গ্রেফতার হওয়ায় এক মাস পিছিয়েছে মাস্টার্স পরীক্ষা * ঝুলে গেছে ঢাবির অধীনে দেয়া ঢাকার সাত কলেজের পরীক্ষাও * এসব কলেজের বিষয়ে ঢাবিতে বৈঠক ১ এপ্রিল

গ্রেফতার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়া সাত কলেজ ইস্যুতে সংকটে পড়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কয়েক দিন আগে প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ চারজনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর স্থগিত করা হয়েছে মাস্টার্সের সব পরীক্ষা। স্থগিত করা হতে পারে অন্য বর্ষের পরীক্ষাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়া সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেকের লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেও ঝুলে আছে মৌখিক পরীক্ষা। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত মাস্টার্সের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। এসব কলেজের অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও তাদের পরীক্ষা নিয়ে রয়েছে অন্ধকারে। সব মিলিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২২ লাখ শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, এখানে কোনো সংকট নেই। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক একটি মামলায় আটক আছেন। তার অনুপস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে চট করে আরেকজনকে পরীক্ষার মতো গোপনীয় কাজ দেয়া যায় না। ২৯ মার্চ জামিন শুনানি আছে। সেদিনের অপেক্ষায় আছি। যদি তিনি জামিন না পান, তাহলে পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকবে না। রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব কলেজ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। কলেজগুলোর পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিখিত হলে ভাইভাটাও তারা নেবে। এমন অবস্থায় কোনো কাজ আমরা করতে পারি না। কেননা, সে ক্ষেত্রে কথা উঠতে পারে, আমরা ছেড়ে দেয়ার পর আবার ধরে রেখেছি।
দুর্নীতির মামলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান ১৩ মার্চ গ্রেফতার হয়েছেন। ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত ও প্রাইভেট (নতুন সিলেবাস) এমএ, এমএসএস, এমবিএ, এমএসসি ও এম মিউজ শেষ পর্ব (আইসিটিসহ) পরীক্ষা স্থগিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এতে শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে আরও এক মাসের সেশন জটে পড়ল।
১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজের প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী উদ্বিগ্ন তাদের পরীক্ষা, ক্লাসসহ সার্বিক লেখাপড়া নিয়ে। গত কয়েকদিন মাস্টার্স ও প্রথমবর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী যুগান্তরে টেলিফোনে নিজেদের উৎকণ্ঠার কথা জানায়। তারা বলে, বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় লিখিত পরীক্ষা দিলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হয়নি। অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাইভা নিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির কথা বলে তাদেরটা নেয়া হয়নি। তাদের এ পরীক্ষা কবে, কোথায় হবে তাও জানে না তারা।
এছাড়া ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স পরীক্ষার (যা ইতিমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে) সময়সূচিতে রাখা হয়নি রাজধানীর সাত কলেজ। এসব কলেজের শিক্ষার্থীর তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হবে বিধায় ওয়েবসাইট থেকে তথ্য তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ব্যাপারে ‘অলআউট কো-অপারেশন’ করব। সব ধরনের তথ্য তারা পাবে। প্রয়োজনে আমাদের লোকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এ সংক্রান্ত কাজ করে দেবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেকে এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়ে পরের বর্ষে প্রমোশন পেয়েছেন। চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার আগেই পূর্বের বর্ষের অনুত্তীর্ণ বিষয়গুলোতে উত্তীর্ণ না হলে ফল স্থগিত থাকে। এ ধরনের শিক্ষার্থী যারা একাধিক বর্ষে বিভিন্ন বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন তারা কোন সিলেবাসে, কোথায় পরীক্ষা দেবেন তা নিয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। নইলে বড় ধরনের হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হবে। এর শিকার হবে শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের তথ্য লাগলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন দেবে। গণমাধ্যমের কাজ সংবাদ সৃষ্টি করা নয়, সংবাদ পরিবেশন করা। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে অধিভুক্ত সাত কলেজের উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১ এপ্রিল বৈঠক ডেকেছে। সেখানে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষা ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইতিমধ্যে বৈঠকের বিষয়টি ওই কলেজগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ওই বৈঠকে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে কিনা তা জানা যায়নি। ১৯৯২ সালের আইন অনুযায়ী চলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ আইনে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাড়া অন্য সব ধরনের কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এখন ৭ কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেড়ে দিতে আইনে সংশোধন আনতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা সার্কুলার জারি করেছে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/03/24/111600/